সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বন্দুক হামলার ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বন্দুক হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তথ্য বলছে, চলতি বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ৩৮৯টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৫ জন এবং আহত হয়েছে সাড়ে ১৭শ মানুষ। খবর সিএনএন।
গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ বলছে, করোনা মহামারির পর থেকে হামলার সংখ্যা বেড়েছে বিপজ্জনক হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,শিথিল বন্দুক আইন, মাদকাসক্তি, মানসিক রোগ, বেকারত্ব ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে মানুষকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে বন্দুক সহিংসতা।
হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে আত্মহত্যা এবং গণহারে গুলি চালানো সব ধরণের বন্দুক সহিংসতাই বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য মতে, চলতি বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩৮৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ শতাধিক এবং আহত দেড় হাজারের বেশি।
সংস্থাটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার সবচেয়ে খারাপ বছর ২০২১ সালে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে ৬৯০টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। চলতি বছরে ৩৮৯টি বন্দুক হামলা হয়েছে। গত বছরে এই সংখ্যা ৫০৪টি। ২০২৩ সালে হয়েছে ৬৬০টি। ২০২২ সালে হয়েছে ৬৪৪টি এবং ২০২১ সালে হয়েছে ৬৯০টি। সহিংসতার এই উত্থানের পেছনে বন্দুক আইনের শিথিলতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন জনগণের হাতে বন্দুকের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় কোটির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে। আর ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে বিক্রি হয়েছে ৫২ লাখ আগ্নেয়াস্ত্র। ব্যক্তি মালিকানাধীন বন্দুকের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে নতুন করে বন্দুকের মালিক হয়েছেন ৭৫ লাখ মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক।
২০২৪ সালে ১ কোটি ৬১ লাখের বেশি ২০২৩ সালে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখের বেশি। ২০২২ সালে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখের বেশি। ২০২১ সালে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখের বেশি। ২০২০ সালে বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখের বেশি।
বন্দুক সহিংসতার জন্য বহুমুখী কারণকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। মাদকাসক্ত, মানসিক রোগ, বেকারত্ব ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবকে দায়ী করছেন অনেকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাতে ব্যাপক হারে অস্ত্র বিক্রির রীতি রয়েছে। অনেকে হতাশা ও একাকীত্ব থেকেও সহিংসতায় জড়ায়। এছাড়া, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বর্ণবাদ ও চরমপন্থি মতাদর্শের কারণেও বন্দুক হামলার ঘটনা বাড়ছে।
বন্দুক হামলায় মৃত্যুর সংখ্যাও যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে প্রতিবেশী কানাডা। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যেও বন্দুক হামলায় প্রাণহানি অন্যান্য দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। ২০২১-২২ সালে বন্দুক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ হতাহত। এছাড়া, কানাডায় ৪০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ১১ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৪ শতাংশ।
জনসমাগম হয় এমন স্পটগুলোকে সাধারণত হামলার জন্য বেছে নেয় বন্দুকধারীরা। হামলার ঘটনা ঘটেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। এরপরই রয়েছে শপিংমল, রেস্তোরাঁ, নাইট ক্লাব, বাস ও রেল স্টেশন এবং বিভিন্ন সরকারি অফিস।
বন্দুক আইন কঠোর করার বিষয়ে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যেও রয়েছে ভিন্ন মত। ২০২৫ সালের নভেম্বরে গ্যালাপের জরিপ বলছে, ৬০ শতাংশ মার্কিন জনগণ বন্দুক আইন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। ২৭ শতাংশ এর বিপক্ষে। এছাড়া, ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রায় ৯১ শতাংশ সমর্থক কঠোর বন্দুক আইন চান। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মাত্র ২৪ শতাংশ অস্ত্র আইন কঠোর করার বিষয়ে মত দিয়েছেন।







