সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : চার মাসের স্থিতাবস্থার পর আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এ পর্যন্ত দুই দেশের অন্তত সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ছয়জন কম্বোডিয়ার এবং একজন থাইল্যান্ডের সেনাসদস্য।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার রাতে সীমান্ত এলাকায় থাই বাহিনীর ছোড়া গোলায় দুই বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এতে দুদিনে তাদের দেশের মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়ে। অপরদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তাদের এক সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। তিনি বলেন, “সার্বভৌমত্ব রক্ষার নাটক সাজিয়ে থাইল্যান্ড বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে—এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
অন্যদিকে মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী জানায়, ত্রাত প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় কম্বোডিয়ার সেনা উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ধাওয়া করা হয়। এতে কম্বোডীয় বাহিনী পিছু হটে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা স্থল ও জলসীমায় ভারী অস্ত্র, স্নাইপার মোতায়েন করছে এবং সীমান্তজুড়ে পরিখা খনন করে অবস্থান শক্ত করছে। থাই নৌবাহিনী এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর “সরাসরি ও গুরুতর হুমকি” হিসেবে দেখছে।
পান্না ত্রিভুজ বা এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিত একটি ভূখণ্ডকে ঘিরে ১১৮ বছর ধরে বিরোধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত এ অঞ্চল প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনার জন্য পরিচিত। ভূখণ্ডটি উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে।
বিরোধের সূত্রপাত ১৯০৭ সালে, যখন ফ্রান্স—যারা তখন কম্বোডিয়া শাসন করছিল—একটি মানচিত্র প্রকাশ করে পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে দেখায়। সে সময় থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে থাইল্যান্ড। ১৯৫৩ সালে স্বাধীন হওয়ার পরও কম্বোডিয়া ভূখণ্ডটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে, যা সম্পর্কের অবনতি বাড়ায়।
দীর্ঘ সংঘাতের পর প্রায় ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত বছর মে থেকে আবার উত্তেজনা বাড়ে। জুলাইয়ে টানা পাঁচ দিনের সংঘাতে ৪৮ জন নিহত হন, এবং তিন লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
গত রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর থাইল্যান্ডের সি সা কেত প্রদেশে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। এর আগে জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ল্যান্ডমাইন পেতে রাখার অভিযোগ তোলে থাইল্যান্ড। তারা দাবি করে, এসব ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে থাই ও চীনা নাগরিক আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ড জাতিসংঘকে তদন্তে নামার আহ্বান জানায়।
অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরই কম্বোডিয়ার সেনারা সি সা কেত সীমান্তে গুলি ছোড়ে, যাতে দুই থাই সেনা আহত হন। পাল্টা হিসেবে কম্বোডিয়ার ভেতরে বিমান হামলা চালায় থাই বাহিনী। এরপর থেকেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই দেশের সীমান্তে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সূত্র : রয়টার্স







