সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের জেরে বেশ কিছু মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয়। তার মধ্যে একজন ছিলেন মীর কাসেম আলী।
আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) শেখ হাসিনার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মীর কাসেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে কেন্দ্র করে নিজের অতীত কষ্ট, সন্তান হারানো ও সে সময়ের কষ্টের কথা তুলে ধরেছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে রাবেয়া লেখেন, ‘আব্বুর রায় ঘোষণার দিন। আমি তখন সদ্য conceive করেছি, প্রথম সন্তান, জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। সেই সময় আব্বুর বাড়ি আর শ্বশুরবাড়িতে পুলিশের রেইড।
ভাইয়েরা পালিয়ে পালিয়ে দূরে কোথাও লুকিয়ে আছে। এত অস্থিরতার মাঝেও আমার conceive করার খবরটা ছিল আমাদের ঘরে একমাত্র আলোর ঝলক।
আব্বুও সেই ভয়াবহ সময়ে আরমান ভাইয়াকে নিয়ে আমার জন্য দোয়া করেছিলেন। আরমান ভাইয়া, যেহেতু আব্বুর ল’ইয়ার, তাই স্বাভাবিক ভিজিটেশনের বাইরে গিয়েও দেখা করতে পারতেন।
এদিকে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। চারদিকে সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল; মীর কাসেম তো সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। আর ’৭১ সালে তার বয়স ছিল মাত্র ১৯। তাকে চট্টগ্রামের মাস্টারমাইন্ড বলা, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব বাহিনী তার অধীনে চলত—এসবই ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
যাই হোক… মনে মনে ভাবছিলাম, ফাঁসি হবে না ইনশাআল্লাহ।
আজীবন হলেও অন্তত আব্বুকে দেখতে পাব, তার দোয়া পাব। কিন্তু আমাদের সেই সামান্য আশাটুকু পর্যন্ত মুছে গেল ফাঁসির রায়ে।
আব্বু বের হয়ে বিজয়ের চিহ্ন দেখালেন—Victory sign। কিন্তু আমি তখন pregnant অবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর হরমোনের কারণে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল দুনিয়াটা একমুহূর্তে উল্টে গেল। এরপর তাকে এসি বাস তো দূরের কথা, মুড়ির টিনের মতো সংকীর্ণ ভ্যানে গাদাগাদি করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। সরাসরি কনডেমনড সেলে ঢোকানো হলো।
আরমান ভাইয়া জেলগেট থেকে নড়তেই পারছিলেন না। আব্বুকে ওই কনডেমনড সেলে রেখে তিনি কিভাবে বাড়ি ফিরবেন? আমরা বারবার ফোন করে ফিরতে বলছিলাম, আর তিনি জেলগেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার সেই কান্নার শব্দ দুই দিন ধরে আমার কানে বাজছিল। আর সেই অসহ্য কষ্ট আমি আর সহ্য করতে না পেরে… আমার বাবুটাকেও হারালাম।
আজ আবার হাসিনার রায় হলো। মানুষের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার রায়। তার অপরাধের সঙ্গে আজকের সিদ্ধান্ত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কিন্তু এত কিছু ঘটার পরও তার জন্য কোনো কনডেম্নড সেল প্রস্তুত নেই। তিনি আরামে কোনো এসি রুমে বসে হাসছেন। তাকে কনডেম্নড সেলে না দেখা পর্যন্ত এই রায় আমার কাছে অপূর্ণ।
এত মানুষের কান্না… এত শোক… যে ফাঁসির আদেশ হয়েছে, একবার তা কার্যকর করেও এসব কষ্ট কখনোই পূরণ হবে না।’
সামাজিক মাধ্যমে রাবেয়ার এই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেছে।







