সংগৃহীত ছবি
ফিচার ডেস্ক :হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য এয়ারপোর্ট ফানেলের মধ্যে নির্দিষ্ট উচ্চতার বাইরে যেন কোনো ভবন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশনকে নজরদারির পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। গত ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পাইলটসহ অন্তত ৩৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন।
এরপরই নড়েচড়ে বসেছে সব মহল। বিমানবন্দরের আশপাশে উঁচু ভবনগুলোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে তারা। এয়ারপোর্ট ফানেলের মধ্যে নির্দিষ্ট উচ্চতার বাইরে যেন কোনো ভবন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি করা হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দরের ফানেল আসলে কী? বিমানবন্দরে আমরা যেটা দেখি তা শুধু রানওয়ে, টার্মিনাল আর কন্ট্রোল টাওয়ার-এর বাইরে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য আকাশেরও একটি সুনির্দিষ্ট ‘রুট” থাকে। সেই আকাশের রুটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘ফানেল’।
আরও সহজে বললে, বিমান চলাচলে ‘ফানেল’ বলতে বোঝানো হয় বিমান অবতরণের সময়ের নির্দিষ্ট আকাশপথ বা কনভার্জিং এরিয়া-যেখানে বিভিন্ন দিক থেকে আসা বিমানগুলো ধীরে ধীরে রানওয়ের দিকে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করে।সাধারণভাবে বলতে গেলে এয়ারপোর্ট ফানেল হলো সেই এয়ার ট্রাফিক প্যাটার্ন বা রুট, যেখান থেকে বিমানগুলো অবতরণের জন্য চূড়ান্ত অ্যাপ্রোচ নেয়।
ফানেল থাকে রানওয়ের দুই প্রান্তে। নিচে সরু, রানওয়ের কাছে এবং ওপরের দিকে যেতে যেতে প্রশস্ত। উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, ওপরে গিয়ে আকাশের বড় এয়ার করিডোরের সঙ্গে যুক্ত হয়। উদ্দেশ্য একটাই বিমান যেন নির্দিষ্ট কোণে, সোজা লাইনে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নামতে বা উঠতে পারে। সাধারণত ফানেল ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
একটি বিমান কোনভাবে, কোন কোণে নামবে তা শুধু যন্ত্র দিয়ে হয় না; আন্তর্জাতিক নিয়ম ও কাঠামো আছে। ফানেল সেই কাঠামো ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অনেক সময় দেখা যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরের ফানেল এলাকায় উঁচু ভবন, টাওয়ার কিংবা অনেক উঁচু গাছ থাকে। যা আন্তর্জাতিক এভিয়েশন সেফটি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এগুলোর জন্য ল্যান্ডিংয়ের সময় পাইলটকে সতর্ক থাকতে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে রানওয়ের অ্যাপ্রোচ প্যাথও পরিবর্তন করতে হয়। এখানে পাইলটের সামান্য ভুলেও বড় বিপদ ঘটতে পারে।
ফানেল এলাকা নিরাপদ রাখা আরও কেন প্রয়োজন আসুন জেনে নেওয়া যাক-
১. সেফ ল্যান্ডিং গাইডলাইন
ফানেল এলাকার প্রতিটি মিটার নির্দিষ্ট মাত্রায় ঢালু থাকে (সাধারণত ৩ ডিগ্রি)। ফলে পাইলট সহজে উচ্চতা কমাতে পারে।
২. বাধা নিয়ন্ত্রণ
ফানেল এলাকায় উঁচু বিল্ডিং, টাওয়ার, গাছ বা কোনো স্থাপনা হলেই ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই বলা হয় ফানেল জোনে উচ্চ ভবন বা উঁচু কাঠামো নির্মাণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
৩. রাডার ও নেভিগেশনের স্পেস
বিমান নামার সময় রাডার, আইএলএস (ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম), ভিওআর বা জিপিএস সিগনাল ঠিকমতো কাজ করতে হয়।ফানেল খোলা থাকলে সিগনাল ব্লক হয় না, ল্যান্ডিং হয় স্মুথ।
৪. রানওয়ের চারপাশের নিরাপত্তা সীমা
উড্ডয়ন-অবতরণ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লাইট ফেজ। ফানেল এই অংশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখে।
সূএ :জাগোনিউজ২৪.কম







