সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত প্রস্তাব থেকে সরে এলে, সরকার লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হবে।
এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। আজ সকাল ১০টার পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে এনসিপি, দুপুর ১টার দিকে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, সংশোধিত আরপিও প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবে এতে দ্বিমত করেছে বিএনপি। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে এনেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর ওই আদেশ নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে। সে সময় বিএনপিসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাবে দ্বিমত করে। তবে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করে। আর প্রস্তাবটি নিয়ে এনসিপি বলেছিল, এ নিয়ে তারা দলের ভেতরে আলোচনা করবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণভোটের প্রস্তাব বিএনপিই দিয়েছে। নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবে দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই একমত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব—জুলাই জাতীয় সনদের প্রজ্ঞাপন বা গেজেট নোটিফিকেশন কীভাবে করা যায়। কারণ, যেভাবেই হোক, সেটি শেষ পর্যন্ত জনগণের গণভোটের মাধ্যমেই আইনি রূপ পাবে।
আজ শনিবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘সে আদেশের কনটেন্ট কী হবে, টেক্সট কী হবে, তার কার্যকারিতার জায়গাগুলো কী হবে? সেটা পরিষ্কার করা। যদি আদেশের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তাহলে শুধু গণভোট আমাদের সংস্কারের বাস্তবায়নকে সিকিউর করতে পারবে না। এই কারণে আমরা আদেশের বিষয়টাতে সরকারের তরফ থেকে পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে তারপরেই গণভোট এবং স্বাক্ষরের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রসর হতে চাই।
আরপিও সংশোধনীতে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আরপিওতে যে সংশোধনীর বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে এগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমরা খেয়াল করেছি যে আরপিওতে সংশোধনী আনার পরে বিএনপি তাদের পূর্বতন বক্তব্য থেকে সরে এসে, আরপিও সংশোধনীকে বাতিল করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত দেবেন বলে তাঁরা বলেছেন। কিন্তু আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘আইন উপদেষ্টার কাছে দরখাস্ত দিয়ে আরপিও সংশোধনীকে আটকে দেওয়ার যে মানসিকতার কথা বলা হচ্ছে তাতে করে মনে হয়, সরকার কোনো বিশেষ বিশেষ উপদেষ্টার মধ্য থেকে কারও কারও সঙ্গে কোনো কোনো দলের সম্পর্কের জায়গা থেকে, সেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে, তারা কোনো একটা বিষয়কে বাস্তবায়ন করতে চান। যেটাকে আমরা ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট (যথোপযুক্ত নয়) মনে করি।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে এটাও মনে হয়, যদি কোনো দলের কারণে সরকার এই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো থেকে সরে আসে, তাহলে আমাদের কাছে আবারও প্রতীয়মান হবে যে, সরকার লন্ডনে যে বৈঠক করেছিল তার ধারাবাহিকতায়, সেভাবেই তারা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া হতে পারে না।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত আছেন।







