সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : সেদিন দুপুরের আগেই শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে কেউ কেউ গুজব মনে করেন। কিন্তু দুপুরে টেলিভিশনের স্ক্রলে ভেসে ওঠে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান। তখন লোকজন মোটামুটি নিশ্চিত হয়, বড় কিছু ঘটে গেছে! ঠিক সেই সময় এএফপি নিশ্চিত করে, গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর গত বছর ৫ আগস্ট সবার আগে জানিয়েছিলেন শফিকুল আলম। তখন তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির ব্যুরো প্রধান ছিলেন। সেই দিন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে তার পরিবার এএফপির অফিসে এসেছিল। আজ ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে সেই সময়ের কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব থাকা শফিকুল।
স্ত্রী ও সন্তানের আনন্দঘণ মুহূর্তের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘বিজয়ের মুহূর্ত। আমি যখন এএফপি (AFP) ঢাকা ব্যুরোতে কাজ করছিলাম, তখন আমার পরিবার জড়িয়ে ধরতে এসেছিল। কারণ সেই সংবাদটি ব্রেক করেছিলাম—শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। আল্লাহ আমাকে সব দিয়েছেন। আলহামদুল্লিলাহ।’
ওইদিনের সেই খবরের পর মুহূর্তেই গণজোয়ার নামে। উল্লাসে ফেটে পড়ে ছাত্র জনতা। পরে এক ফেসবুক পোস্টে সেদিনের গল্প জানিয়েছিলেন শফিকুল আলম, ‘আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমিই প্রথম সেই সংবাদটি দিয়েছিলাম যে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এক মাস আগে, দুপুর ২টার দিকে আমার সূত্র আমাকে জানায় যে আমাদের ১৫ বছরের একনায়ক জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে জানান যে তার কাছে আরেকটি মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডার ভাষণ রেকর্ড করার মতো সময় নেই। তারা তাকে এবং তার বোনকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নিয়ে যায়, যেখানে তারা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে উঠে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।’
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের সেই পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন সেদিনের অভিজ্ঞতা, ‘সংবাদটি সহজ ছিল। শিরোনামটাও ছিল সহজ: “গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালালেন।” কিন্তু সমস্যাটি ছিল বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায়। সংবাদ সংস্থায় অনামা বা বেনামি সূত্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যদি আপনার সূত্র মিথ্যা বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করে, তাহলে আপনার ক্যারিয়ার এক মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এবং সংবাদ সংস্থার সুনামও চিরতরে ধ্বংস হতে পারে। তাই আমি চিন্তিত ছিলাম যে এএফপি দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক, যিনি মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোতে ক্রিকেট নিয়ে একটি চমৎকার বই লিখেছেন, এত বড় ঝুঁকি নেবেন কি না।
কিন্তু তিনি তা সঙ্গে সঙ্গেই নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে গত ২০ বছরে এএফপিতে আমার সুনাম কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমার সূত্র কি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা? আমি বলি, হ্যাঁ। আমি এমনকি আমার সূত্রের নাম এবং পদবি পাঠাই, এই শর্তে যে এএফপি সংবাদে তার পরিচয় প্রকাশ করবে না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি আমার সূত্রের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি? আমি আবারও বলি, হ্যাঁ। পরের মুহূর্তে তিনি হংকংয়ে একটি “রেড লেটারড গ্লোবাল অ্যালার্ট” পাঠান এবং এক বাক্যের সেই সংবাদটি তৎক্ষণাৎ প্রকাশিত হয়।’