করোনারি আর্টারি বা হার্টের রক্তনালিতে এক ধরনের বস্তু স্তূপাকারে জমা হয়ে রক্ত চলাচলের পথকে সরু বা চিকন করে ফেলার জন্য রক্তনালির সেসব স্থানে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতা দেখা দেয় এর ফলে ব্লকের পরবর্তী স্থানে বা ব্লকের ভাটি এলাকার রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে হার্টের সে অংশ বা এলাকার রক্ত সরবরাহের কমতিকে ইসকেমিয়া বলা হয় এবং ব্লকজনিত অসুস্থতাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। যা অক্সিজেন ঘাটতিজনিত অবস্থা এবং ওইসব অংশ বা এলাকার অক্সিজেন ও রসদের অভাবে হার্টের মাংসপেশি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং এর লক্ষণ হিসেবে বুকে ব্যথা, বুকে চাপ, জ¦লা ও শ্বাসকষ্টের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং গুরুতর অবস্থায় হার্ট ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। আমরা অনেকেই জানি যে, হার্ট সারা জীবন রক্ত পাম্প করে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে রক্ত কম পরিমাণে পাম্প করার ফলে সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ব্যক্তি তার স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদনে অপারগ হয়ে পড়ে।
কী কী কারণে রক্তনালিতে ব্লকের সৃষ্টি হয়?
ব্লক সৃষ্টি হওয়ার কারণ এখনো সম্পূর্ণভাবে জানা সম্ভব হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত যে সব কারণকে ব্লকের জন্য দায়ী করা হয়, সেগুলো হচ্ছে- দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল জাতীয় উপাদান বেশি থাকা, যা ব্লক সৃষ্টির একটি উপাদানও বটে, উচ্চরক্তচাপে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগছেন তাদেরও ব্লক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যারা ধূমপান করেন বা তামাক জাতীয় বস্তু গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যেও ব্লকের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়, যারা কায়িকশ্রম থেকে বিরত থাকেন বা অলস জীবনযাপন করেন তারাও অধিকহারে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যারা প্রায় সময়ই টেনশন বা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রেও স্ট্রেস হরমোন বেশি বেশি নির্গত হয়ে ব্লক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এসব ব্যক্তির স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসার হতে দেখা যায়। বংশগত প্রবণতা হিসেবেও অনেককে ব্লক জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এখানে উল্লেখ্য, রক্তনালির ভিতর দিকে স্তূপাকারে চর্বি জাতীয় ব¯ুÍ খুবই ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে জমা হতে হতে তাৎপর্যপূর্ণ ব্লক সৃষ্টি হতে অনেক বছর সময় লেগে যায়। যার জন্য অল্পবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ব্লক সৃষ্টি হতে সাধারণত খুব একটা বেশি দেখা যায় না, তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যার জন্য এ ধরনের অসুস্থতাকে বয়স্ক ব্যক্তিদের অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হার্ট ব্লককে জীবনধারাজনিত অসুস্থতা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়, যেমন- অত্যধিক চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা, ভেজালযুক্ত খাদ্য খাওয়া, দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষিত খাদ্য গ্রহণ করা। অতিমাত্রায় শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা, বয়স অনুপাতে কায়িকশ্রম বা পরিশ্রম না করা, অতিমাত্রায় চিনি ও লবণ গ্রহণ করা ইত্যাদি। তাই এ বিষয়ে সচেতন হোন।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট,
শমশের হার্ট কেয়ার, শামলী, ঢাকা। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন