হত্যার দায় স্বীকার করলেন স্বামী, কারণ খুঁজছে পুলিশ

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে, তিন দিনের রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তবে কী কী কারণে হত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা খুঁজছে পুলিশ। তদন্তকারী একটি সূত্র জানিয়েছে, পারিবারিক অশান্তির কারণেই শিমুকে হত্যা করা হয়।

 

জানা গেছে, শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশের সঙ্গে রাতভর ছিলেন স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল। পরদিন বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতায় শিমুর বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে দিনভর বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। লাশ ফেলতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে তারা বাসায় ফেরেন। পরে শিমুর বস্তাবন্দি লাশ কেরানীগঞ্জে ফেলে দেন। এরপর কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গতকাল মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার সকালে শিমুর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শিমুকে হত্যার দায় স্বীকার করেন নোবেল। যদিও শিমুর বোন ফাতিমা নিশা এ বিষয়ে একমত নন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি এর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্তের দাবি করেন। লাশ উদ্ধারের পরপরই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন এ অভিনেত্রী। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শাহাবুদ্দিন কবির বলেছেন, নোবেল তার স্ত্রী শিমুকে হত্যার পর সারারাত লাশের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন সকালে বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডেকে আনেন নোবেল। এরপর বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে নাস্তা আনার জন্য বাইরে পাঠান। এই ফাঁকে একটি বস্তায় করে শিমুর লাশ গাড়ির ভিতরে রাখেন। তারপর সুযোগ বুঝে সেই গাড়িতে বাইরে বের হয়ে যান। লাশটি গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য নানা জায়গা খুঁজতে থাকেন। প্রথমে তারা সাভার, আশুলিয়া ও মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে লাশ ফেলার চেষ্টা করেন। সুযোগ না পেয়ে বিকালে আবারও লাশ গাড়িতে করে বাসায় ফেরেন। এরপর দুই বন্ধু মিলে লাশ নিয়ে গাড়িতে বেরিয়ে পড়েন কেরানীগঞ্জের দিকে। সেখানকার আলিয়াপুর এলাকায় লাশটি ফেলে আসেন। মূলত পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে অভিনেত্রী শিমুকে খুন করা হয়েছে। নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

 

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার এসপি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সেসব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে অভিনেত্রী শিমু হত্যায় আটক দুজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সঙ্গে শিমুর দাম্পত্য কলহ চলছিল। সেই কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করা হয়। শিমুর লাশ গুম করতে যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয় তা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এদিকে, শিমুকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টায় গ্রিন রোডের স্টাফ কোয়ার্টারে জানাজা শেষে সাড়ে ৯টার দিকে শিমুর লাশ দাফন করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান তার ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিনরোডের বাসায় থাকতেন ৪০ বছর বয়সী শিমু। শিমুর বাবা মো. নুরুল ইসলাম রাঢ়ী কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মাইয়াডারে অনেক আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করছি, হেই মাইয়াডারে ওরা মাইরা ফালাইছে। আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার মাইয়াডারে যারা হত্যা করছে তাদের ফাঁসি চাই।’ সূএ:বাংলাদেশ প্র্রতিদিন 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

» আওয়ামী লীগের শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

» বঙ্গবন্ধু সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন : খাদ্যমন্ত্রী

» ট্রাকচাপায় প্রকৌশলী নিহত

» অপহরণকারী চক্রের সদস্য সিরাজকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার

» কেনিয়ায় বৃষ্টি-বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬৯

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২১জন গ্রেপ্তার

» নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য শ্রমিক ও জনগণের জন্য অভিশাপ : ইনু

» শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : রিজভী

» যতবার সরকারে এসেছি ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হত্যার দায় স্বীকার করলেন স্বামী, কারণ খুঁজছে পুলিশ

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে, তিন দিনের রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তবে কী কী কারণে হত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা খুঁজছে পুলিশ। তদন্তকারী একটি সূত্র জানিয়েছে, পারিবারিক অশান্তির কারণেই শিমুকে হত্যা করা হয়।

 

জানা গেছে, শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশের সঙ্গে রাতভর ছিলেন স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল। পরদিন বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতায় শিমুর বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে দিনভর বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। লাশ ফেলতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে তারা বাসায় ফেরেন। পরে শিমুর বস্তাবন্দি লাশ কেরানীগঞ্জে ফেলে দেন। এরপর কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গতকাল মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার সকালে শিমুর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শিমুকে হত্যার দায় স্বীকার করেন নোবেল। যদিও শিমুর বোন ফাতিমা নিশা এ বিষয়ে একমত নন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি এর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্তের দাবি করেন। লাশ উদ্ধারের পরপরই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন এ অভিনেত্রী। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শাহাবুদ্দিন কবির বলেছেন, নোবেল তার স্ত্রী শিমুকে হত্যার পর সারারাত লাশের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন সকালে বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডেকে আনেন নোবেল। এরপর বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে নাস্তা আনার জন্য বাইরে পাঠান। এই ফাঁকে একটি বস্তায় করে শিমুর লাশ গাড়ির ভিতরে রাখেন। তারপর সুযোগ বুঝে সেই গাড়িতে বাইরে বের হয়ে যান। লাশটি গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য নানা জায়গা খুঁজতে থাকেন। প্রথমে তারা সাভার, আশুলিয়া ও মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে লাশ ফেলার চেষ্টা করেন। সুযোগ না পেয়ে বিকালে আবারও লাশ গাড়িতে করে বাসায় ফেরেন। এরপর দুই বন্ধু মিলে লাশ নিয়ে গাড়িতে বেরিয়ে পড়েন কেরানীগঞ্জের দিকে। সেখানকার আলিয়াপুর এলাকায় লাশটি ফেলে আসেন। মূলত পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে অভিনেত্রী শিমুকে খুন করা হয়েছে। নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

 

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার এসপি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সেসব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে অভিনেত্রী শিমু হত্যায় আটক দুজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সঙ্গে শিমুর দাম্পত্য কলহ চলছিল। সেই কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করা হয়। শিমুর লাশ গুম করতে যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয় তা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এদিকে, শিমুকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টায় গ্রিন রোডের স্টাফ কোয়ার্টারে জানাজা শেষে সাড়ে ৯টার দিকে শিমুর লাশ দাফন করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান তার ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিনরোডের বাসায় থাকতেন ৪০ বছর বয়সী শিমু। শিমুর বাবা মো. নুরুল ইসলাম রাঢ়ী কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মাইয়াডারে অনেক আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করছি, হেই মাইয়াডারে ওরা মাইরা ফালাইছে। আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার মাইয়াডারে যারা হত্যা করছে তাদের ফাঁসি চাই।’ সূএ:বাংলাদেশ প্র্রতিদিন 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com