ফাইল ছবি
ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি হলো হজ। তাই সামর্থ্য থাকলে অযথা অবহেলা বা দেরি না করে প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষের দ্রুত হজ করে ফেলা উচিত। শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকলে জীবনে একবার হজ করা ফরজ।
হজের মৌসুমে হজে যাওয়া-আসার খরচসহ সফরে থাকাকালীন দিনগুলোতে তার ও পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকলে এবং দৈহিকভাবে হজ করার সক্ষমতা থাকলে হজের সামর্থ্য প্রমাণিত হয় ও হজ ফরজ হয়। যথাযথ সামর্থ্য থাকলে দেরি না করে দ্রুত হজ পালন করে ফেলা উচিত।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ
অর্থ: ‘নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইব্রাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬, ৯৭)
হজে যাওয়ার আগে করণীয় জরুরি কাজসমূহ
যারা এ বছর হজ পালনের নিয়ত করেছেন, হজের জন্য যাত্রার আগে এ কাজগুলো করতে পারেন
(১) হজের নিয়ত করুন বিশুদ্ধভাবে। আপনার হজ যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়। প্রসিদ্ধি, হাজি উপাধী অর্জন, মর্যাদা বৃদ্ধি যেন কোনোভাবেই আপনার হজের উদ্দেশ্য না হয়ে দাঁড়ায়। হজের আগে অহেতুক প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকুন। সব ইবাদত ও নেক আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের জন্য করা মুমিনের ওপর ফরজ।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ
অর্থ: ‘তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত করে’। (সূরা: বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরেক আয়াতে বলেন, فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
অর্থ: ‘যে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে’। (সূরা: কাহাফ, আয়াত: ১১০)
(২) মা-বাবা জীবিত থাকলে তাদের অনুমতি নিয়ে নিন। মা-বাবার খেদমতে থাকার প্রয়োজন থাকলে তাদের অনুমতি ছাড়া নফল হজে যাওয়া মাকরুহ। তবে হজ ফরজ হলে অনুমতি ছাড়াও যাওয়া যেতে পারে। হজ ফরজ হলে বাবা-মায়েরও উচিত অনুমতি দিয়ে দেওয়া।
(৩) আপনি হজের সফর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত আপনার পরিবার-পরিজন যারা আপনার ওপর নির্ভরশীল তাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে তাদের যেন অর্থ বা নিরাপত্তার অভাবে পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করুন। কারো যদি কাবায় পৌঁছার সামর্থ্য থাকে কিন্তু তার হজের সফরের সময় পরিবার-পরিজনের দেখাশোনা ও ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না থাকে, তার ওপর হজ ফরজ হবে না।
(৪) ঋণ থাকলে হজের সফরে বের হওয়ার আগেই সব ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে হজের সফরে বের হওয়ার আগে পাওনাদারের কাছ থেকে অনুমতি নিন। পাওনাদারের অনুমতি ছাড়া হজে যাওয়া মাকরুহ। তবে যদি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হয় এবং মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই হজের সফর থেকে ফিরে আসার সময় নির্ধারিত থাকে, তাহলে অনুমতি ছাড়া হজে গেলে অুসবিধা নেই।
(৫) হজে বের হওয়ার আগে সব গুনাহ থেকে তওবা করুন। ভবিষ্যতে গুনাহ না করার দৃঢ় নিয়ত করুন। কারো ক্ষতি করে থাকলে, কারো হক নষ্ট করে থাকলে তার প্রতিবিধান করার চেষ্টা করুন। ক্ষমা চেয়ে বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করুন। হজ করলে আল্লাহর হকের সঙ্গে সম্পর্কিত সব গুনাহ মাফ হয়ে গেলেও বান্দার হকের সঙ্গে সম্পর্কি গুনাহ মাফ হয় না। এ রকম গুনাহ নিয়ে মারা গেলে হাশরের মাঠে সওয়াব দিয়ে বা অন্যের পাপের বোঝা নিয়ে এগুলোর প্রতিবিধান করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَن كانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لأخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْها، فإنَّه ليسَ ثَمَّ دِينارٌ ولا دِرْهَمٌ، مِن قَبْلِ أنْ يُؤْخَذَ لأخِيهِ مِن حَسَناتِهِ، فإنْ لَمْ يَكُنْ له حَسَناتٌ أُخِذَ مِن سَيِّئاتِ أخِيهِ فَطُرِحَتْ عليه
অর্থ: ‘কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে’। (সহিহ বুখারি ৬৫৩৪) সূএ:ডেইলি-বাংলাদেশ