সিলেটে সেলিম হত্যার নেপথ্যে

মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন ষাটোর্ধ্ব ফয়জুল ইসলাম সেলিম। ঘুরে বেড়াতেন সিলেটের কাজিটুলা বাজারে। বাড়িও একই এলাকায়। হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন সেলিম। ৮ দিন পর লাশ মিললো বিয়ানীবাজারে। এ ঘটনায় হতবাক পরিবার। তাদের দাবি; সম্পত্তির লোভেই হত্যা করা হয়েছে সেলিমকে। এ নিয়ে তাদের আফসোসেরও অন্ত নেই।

সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাকিল। তার ওপর ক্ষোভ এলাকার মানুষেরও। কিশোর বয়স থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী সেলিম। কাজিটুলা ৩২ নম্বর বাসার যৌথ মালিক তিনি। ভাইদের সংসারেই তার বেড়ে উঠা। ষাটোর্ধ্ব সেলিম ঘুরে বেড়াতেন কাজিটুলা বাজারে। সবার পরিচিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান- গত ৫ই ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে কাজিটুলা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সেলিম। তার খোঁজ না পেয়ে তারা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশও সেলিমকে খুঁজতে থাকেন। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি সেলিমের লাশ মিলে বিয়ানীবাজারের আল তায়েফ ইটভাটার পাশের জমিতে। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে সেলিমের লাশ উদ্ধার করলেও পরদিন হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। বিয়ানীবাজারের দুবাগ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে ভবঘুরে অবস্থায় সেলিমকে দেখতে পান। এ সময় স্থানীয়রা তাকে খাবার দিতেন। রাতে তিনি স্থানীয় বাজারেই থাকতেন। ১৩ তারিখ দুপুরের দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। এদিকে- এ ঘটনার পর সেলিমের ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম শামীম তার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাকিলকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। শামীম জানিয়েছেন, তার বড় ভাই সেলিম ষাট বছরের জীবনে কখনোই কাজিটুলা এলাকার বাইরে বের হননি। সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি মামলার পর সেলিমকে নিয়ে তারা শঙ্কায় ছিলেন। তার চাচাতো ভাই শাকিলই ছিল সেলিমের বড় দুশমন। মামলার এজাহারে জানানো হয়- ২০১০ সালে সেলিমকে দাতা সাজিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে তাদের চাচাতো ভাই শাকিল। ওই দলিলের মাধ্যমে সেলিমের নামের সম্পত্তি শাকিলের নামে নেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সেলিমের লন্ডন প্রবাসী ছোট ভাই ফয়সল ইসলাম শাহারুল বাদী হয়ে সিলেটের আদালতে প্রায় এক বছর আগে এ মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলাটি চলমান। এর আগে ২০০২ সালে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তৎকালীন পৌরসভা থেকে নিজের পিতার নাম মৃত সিরাজুল ইসলাম পরিবর্তন করে চাচা মো. নুরুল ইসলামের নাম পিতার নাম বলে সংশোধন করে নেন। এরপর থেকে শাকিল চাচা নুরুল ইসলামকে পিতা দাবি করে সেলিম, শামীম ও শাহারুলের সম্পত্তিতে ভাগ দাবি করেন। তিনি উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান বিএস পর্চাও নিয়ে নেন। মামলার এজাহারে শামীম জানান, বিয়ানীবাজারে যে স্থানে তার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের পথ সাইফুল ইসলাম শাকিলের বাংলো ও বাগান। এই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমদ লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে আসামি শাকিলকে ফোনে জানিয়েছিলেন, নিখোঁজ থাকা তোমাদের ভাই ওই এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। কিন্তু শাকিল এই তথ্যকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো; ‘সে (নিখোঁজ সেলিম) বিয়ানীবাজারে আসার প্রশ্নই উঠে না।’ এ কারণে মামলার বাদী ফখরুল ইসলাম শামীম দাবি করেন- আসামি সাইফুল ইসলাম মানসিক প্রতিবন্ধী সেলিমকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে হত্যা করেছেন। আর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করা, সম্পত্তি ভোগ করা এবং আদালতে চলমান মামলাতে ফায়দা হাসিল করা। এজাহারে তিনি দাবি করেন- নিহত সেলিম আহমদ একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। কোনো ভাবেই তার পক্ষে বিয়ানীবাজারে যাওয়া সম্ভব নয়। নিখোঁজের দিন কোনো এক সময় সেলিমকে প্রলুব্ধ করে সিলেট শহর থেকে নিয়ে গিয়ে বিয়ানীবাজারের ওই জায়গায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের পর মামলা না করতে আসামি শাকিল অনুরোধও জানিয়েছিলো। একই সঙ্গে আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়ার কথা বলে। এদিকে- এ ঘটনার পর গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সেলিমের ভাই শামীম। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
মামলা দায়েরের পর পলাতক রয়েছেন আসামি সাইফুল ইসলাম শাকিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল আলীম জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এরপর থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আসামি শাকিল পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।    সূূএ:মানবজমিন
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির লালবাগ উপশাখা উদ্বোধন

» পাঁচবিবিতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

» বৃষ্টি কামনায় বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ আদায়

» মেটার স্মার্ট সানগ্লাসে দিয়ে করা যাবে ভিডিও কল

» গরমে ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে?

» জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে কেন খেলবেন না, জানালেন সাকিব

» পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের চালক নিহত

» বাস-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ইজিবাইক চালক নিহত,আহত ৩

» বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া: কাদের

» শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আ.লীগের কর্মসূচি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সিলেটে সেলিম হত্যার নেপথ্যে

মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন ষাটোর্ধ্ব ফয়জুল ইসলাম সেলিম। ঘুরে বেড়াতেন সিলেটের কাজিটুলা বাজারে। বাড়িও একই এলাকায়। হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন সেলিম। ৮ দিন পর লাশ মিললো বিয়ানীবাজারে। এ ঘটনায় হতবাক পরিবার। তাদের দাবি; সম্পত্তির লোভেই হত্যা করা হয়েছে সেলিমকে। এ নিয়ে তাদের আফসোসেরও অন্ত নেই।

সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাকিল। তার ওপর ক্ষোভ এলাকার মানুষেরও। কিশোর বয়স থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী সেলিম। কাজিটুলা ৩২ নম্বর বাসার যৌথ মালিক তিনি। ভাইদের সংসারেই তার বেড়ে উঠা। ষাটোর্ধ্ব সেলিম ঘুরে বেড়াতেন কাজিটুলা বাজারে। সবার পরিচিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান- গত ৫ই ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে কাজিটুলা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সেলিম। তার খোঁজ না পেয়ে তারা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশও সেলিমকে খুঁজতে থাকেন। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি সেলিমের লাশ মিলে বিয়ানীবাজারের আল তায়েফ ইটভাটার পাশের জমিতে। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে সেলিমের লাশ উদ্ধার করলেও পরদিন হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। বিয়ানীবাজারের দুবাগ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে ভবঘুরে অবস্থায় সেলিমকে দেখতে পান। এ সময় স্থানীয়রা তাকে খাবার দিতেন। রাতে তিনি স্থানীয় বাজারেই থাকতেন। ১৩ তারিখ দুপুরের দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। এদিকে- এ ঘটনার পর সেলিমের ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম শামীম তার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম শাকিলকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। শামীম জানিয়েছেন, তার বড় ভাই সেলিম ষাট বছরের জীবনে কখনোই কাজিটুলা এলাকার বাইরে বের হননি। সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি মামলার পর সেলিমকে নিয়ে তারা শঙ্কায় ছিলেন। তার চাচাতো ভাই শাকিলই ছিল সেলিমের বড় দুশমন। মামলার এজাহারে জানানো হয়- ২০১০ সালে সেলিমকে দাতা সাজিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে তাদের চাচাতো ভাই শাকিল। ওই দলিলের মাধ্যমে সেলিমের নামের সম্পত্তি শাকিলের নামে নেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সেলিমের লন্ডন প্রবাসী ছোট ভাই ফয়সল ইসলাম শাহারুল বাদী হয়ে সিলেটের আদালতে প্রায় এক বছর আগে এ মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলাটি চলমান। এর আগে ২০০২ সালে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তৎকালীন পৌরসভা থেকে নিজের পিতার নাম মৃত সিরাজুল ইসলাম পরিবর্তন করে চাচা মো. নুরুল ইসলামের নাম পিতার নাম বলে সংশোধন করে নেন। এরপর থেকে শাকিল চাচা নুরুল ইসলামকে পিতা দাবি করে সেলিম, শামীম ও শাহারুলের সম্পত্তিতে ভাগ দাবি করেন। তিনি উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান বিএস পর্চাও নিয়ে নেন। মামলার এজাহারে শামীম জানান, বিয়ানীবাজারে যে স্থানে তার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের পথ সাইফুল ইসলাম শাকিলের বাংলো ও বাগান। এই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমদ লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে আসামি শাকিলকে ফোনে জানিয়েছিলেন, নিখোঁজ থাকা তোমাদের ভাই ওই এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। কিন্তু শাকিল এই তথ্যকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো; ‘সে (নিখোঁজ সেলিম) বিয়ানীবাজারে আসার প্রশ্নই উঠে না।’ এ কারণে মামলার বাদী ফখরুল ইসলাম শামীম দাবি করেন- আসামি সাইফুল ইসলাম মানসিক প্রতিবন্ধী সেলিমকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে হত্যা করেছেন। আর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করা, সম্পত্তি ভোগ করা এবং আদালতে চলমান মামলাতে ফায়দা হাসিল করা। এজাহারে তিনি দাবি করেন- নিহত সেলিম আহমদ একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। কোনো ভাবেই তার পক্ষে বিয়ানীবাজারে যাওয়া সম্ভব নয়। নিখোঁজের দিন কোনো এক সময় সেলিমকে প্রলুব্ধ করে সিলেট শহর থেকে নিয়ে গিয়ে বিয়ানীবাজারের ওই জায়গায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের পর মামলা না করতে আসামি শাকিল অনুরোধও জানিয়েছিলো। একই সঙ্গে আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়ার কথা বলে। এদিকে- এ ঘটনার পর গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সেলিমের ভাই শামীম। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
মামলা দায়েরের পর পলাতক রয়েছেন আসামি সাইফুল ইসলাম শাকিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল আলীম জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এরপর থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আসামি শাকিল পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।    সূূএ:মানবজমিন
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com