রাত তখন ১টা। গত বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মাপাড়ের শিমুলিয়া ঘাট রোডটি ছিল লোকে-লোকারণ্য। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ এসেছেন সাহরি করতে। পদ্মার টাটকা ইলিশ মাছ আর হরেক রকমের ভর্তা-ভাজির লোভেই তাদের এতদূর আসা। কেউ প্রাইভেট গাড়িতে, কেউ মোটরসাইকেলে আবার কেউ বাসে করে দল বেঁধে এসেছেন ব্যতিক্রমী সাহরি সারতে।
সময় পরিক্রমায় মানুষ প্রিয়জনদের নিয়ে গেট-টুগেদারের জন্য এবং একটু ভালো সময় কাটাতে গত কয়েক বছর ধরে ঘরের বাইরে সাহরি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পদ্মাপাড়ের মাওয়া ঘাটের কিছুটা সামনে শিমুলিয়া ঘাট রোডে জমে উঠেছে সাহরির খাওয়া-দাওয়া। সরেজমিন গত ২১ এপ্রিল শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাহরির দুই ঘণ্টা আগে থেকেই প্রতিটি রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে ‘রুপালি ইলিশ’, ‘ফরচুন’, ‘কাঁচা লঙ্কা’, ‘ইলিশ বাড়ি’, ‘শখের হাঁড়ি’ ছিল কানায় কানায় ভর্তি। রেস্টুরেন্টগুলোতে মানুষের এতই চাপ ছিল যে, অনেকে পরে এসে বসার জায়গাও পাননি। রুপালি ইলিশ রেস্টুরেন্টের পরিচালক মাহবুব হাসান রবিন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন সাহরি সারতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন। সাধারণ বসার ব্যবস্থা ছাড়াও এসি কেবিনের ব্যবস্থা আছে। সাধারণত ছুটির দিনে এবং বৃহস্পতিবার মানুষ বেশি আসেন।’ অতিরিক্ত মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের। একের পর এক মাছ কেটে তা ভেজে প্লেটে প্লেটে এগিয়ে দেন। গরম সেই খাবার চলে যায় টেবিলে টেবিলে। এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোজনরসিকরা এখানে এসে নিজে পছন্দ করে এবং দরদাম করে মাছ কেনেন। বড় সাইজের ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম পড়ে ১ হাজার টাকার কিছুটা বেশি। আস্ত মাছ কিনে নিলে কড়কড়া মাছ ভাজি ছাড়াও মাছের মাথা-লেজ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়। এর সঙ্গে আরও আছে মাছের ডিম। এ ছাড়া বেগুন ভাজি, ডালসহ অন্যান্য মাছ খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখানে ভরপেট খেতে একজনের ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা খরচ পড়ে। ঢাকা থেকে এখানে সাহরি করতে আসা নবদম্পতি রাসেল ও দীনা বলেন, আমাদের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল রাতে গাড়ি চালিয়ে মাওয়া ঘাটে এসে ইলিশ ও ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খাব। বিশেষ করে এবার রোজা শুরুর পর অনেকেই সাহরিতে এখানে এসে ইলিশ খাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত আমরা চলেই এলাম। এসে এত মানুষ দেখতে পাব আশা করিনি। সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে। তবে কষ্ট করে ঢাকা থেকে এসে অনেক ভোজনরসিক রেস্টুরেন্টে সিট পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। পুরান ঢাকা থেকে সাত বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলেন সজীব হাসান।
তিনি বলেন, এত ভিড় হবে আমরা আশা করিনি। সিট পেতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ইলিশ দিয়ে গরম ভাত খেতে পেরেছি। শুধু ইলিশ খেয়ে নয়, মাওয়া ও শিমুলিয়া ঘাটে আসা মানুষ রাতে পদ্মা নদীর অপরূপ সৌন্দর্যও উপভোগ করছেন। এদের অনেকেই আসা-যাওয়ার পথে মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ের মনোরম রাস্তায় গাড়ি ও মোটরসাইকেল থামিয়ে ছবি তুলছিলেন। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অনেকে আড্ডাও দিচ্ছিলেন। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন