সরকারের দুঃশাসন থেকে মানুষ মুক্তি চায়: মির্জা ফখরুল

বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস নিতে মানুষ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি থেকে দেশের প্রতিটি মানুষ মুক্তি চায়। তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

 

মঙ্গলবার  দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে, এর মধ্যে কিছু নেই। এখন তারা আবার নির্বাচন কমিশন গঠনের নামে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে। সেই সার্চ কমিটির প্রত্যেকে তাদের লোক, এরাই আবার নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবেন।

 

তিনি বলেন, আসলে এরা হুদার (সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা) মতোই লোক, অনেকে বলেন এবার বেহুদার মতো হবে। স্পষ্ট করে বলছি- দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের দায়ে এদের একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, বিচার হতে হবে।

 

এ সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।

 

তিনি বলেন, এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রহিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) স্বভাবসুলভ কথা বলেছেন, যা আমাদের কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে যা কিছু ভালো হয়েছে তা আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়েছে এবং দেশের অর্জনকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। অথচ ৭২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, লাখো মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গেছে। এখন কৃষকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তাই স্মরণ করে দিতে চাই- আপনারা অতীতটা দেখুন এবং বর্তমানে কী হচ্ছে সেটা দেখুন। জনগণ বিচার করবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কারা উন্নয়ন করেছে।

 

পরিষ্কার করে বলতে চাই- আজকে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বৈষম্যহীন যে সমাজ সেটাকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। ডিজিটাল আইন তৈরি করেছে, কেউ কথা বলতে পারছে না। বিচারবিভাগ, আমলাতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রকে এক করে ফেলেছে তারা, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

 

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে অনেক সুন্দর সুন্দর মুখোরোচক কথা বলা হয়েছিল যে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানো হবে, কৃষকেদের মধ্যে বিনা পয়সায় সার বিতরণ করা হবে, ঘরে ঘরে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এসব শুনে কিছু মানুষ পরিবর্তনের আশায় নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। আর এখন বেশিরভাগ কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে রিকশা ও ভ্যান চালাচ্ছেন। কৃষি এখন লাভজনক নয় এটা বাস্তবকথা। করোনাকালীন কৃষকদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রণোদনা কৃষক পায়নি, পেয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। অথচ সরকার বলে বেড়ায় তাদের আমলে কৃষিখাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ও উৎপাদন হচ্ছে।

 

দেশের বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশে শাসকদলের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও মানবাধিকার হরণের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় আমরা লজ্জিত, দুঃখ পেয়েছি। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কারণ এই সরকার বিরোধীদলের শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করছে, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

 

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি- তাদের সবাইকে সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে হবে। কারণ এই সরকার যদি বেশিদিন থাকে তাহলে শুধু আমাদের নয়, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি আর্ট ফেস্টিভ্যাল শুরু

» তীব্র গরমে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করলেন ইউএনও

» লালমনিরহাটে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু

» ইউএনওর ফোন নম্বর ক্লোন করে প্রার্থীদের সাথে প্রতারণার চেষ্টা

» দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করুন, আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

» প্রতিক্রিয়াশীল চক্র গণতন্ত্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে : পরশ

» আগামীকাল ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সরকারের দুঃশাসন থেকে মানুষ মুক্তি চায়: মির্জা ফখরুল

বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস নিতে মানুষ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি থেকে দেশের প্রতিটি মানুষ মুক্তি চায়। তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

 

মঙ্গলবার  দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে, এর মধ্যে কিছু নেই। এখন তারা আবার নির্বাচন কমিশন গঠনের নামে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে। সেই সার্চ কমিটির প্রত্যেকে তাদের লোক, এরাই আবার নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবেন।

 

তিনি বলেন, আসলে এরা হুদার (সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা) মতোই লোক, অনেকে বলেন এবার বেহুদার মতো হবে। স্পষ্ট করে বলছি- দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের দায়ে এদের একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, বিচার হতে হবে।

 

এ সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।

 

তিনি বলেন, এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রহিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) স্বভাবসুলভ কথা বলেছেন, যা আমাদের কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে যা কিছু ভালো হয়েছে তা আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়েছে এবং দেশের অর্জনকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। অথচ ৭২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, লাখো মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গেছে। এখন কৃষকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তাই স্মরণ করে দিতে চাই- আপনারা অতীতটা দেখুন এবং বর্তমানে কী হচ্ছে সেটা দেখুন। জনগণ বিচার করবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কারা উন্নয়ন করেছে।

 

পরিষ্কার করে বলতে চাই- আজকে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বৈষম্যহীন যে সমাজ সেটাকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। ডিজিটাল আইন তৈরি করেছে, কেউ কথা বলতে পারছে না। বিচারবিভাগ, আমলাতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রকে এক করে ফেলেছে তারা, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

 

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে অনেক সুন্দর সুন্দর মুখোরোচক কথা বলা হয়েছিল যে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানো হবে, কৃষকেদের মধ্যে বিনা পয়সায় সার বিতরণ করা হবে, ঘরে ঘরে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এসব শুনে কিছু মানুষ পরিবর্তনের আশায় নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। আর এখন বেশিরভাগ কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে রিকশা ও ভ্যান চালাচ্ছেন। কৃষি এখন লাভজনক নয় এটা বাস্তবকথা। করোনাকালীন কৃষকদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রণোদনা কৃষক পায়নি, পেয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। অথচ সরকার বলে বেড়ায় তাদের আমলে কৃষিখাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ও উৎপাদন হচ্ছে।

 

দেশের বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশে শাসকদলের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও মানবাধিকার হরণের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় আমরা লজ্জিত, দুঃখ পেয়েছি। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কারণ এই সরকার বিরোধীদলের শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করছে, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

 

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি- তাদের সবাইকে সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে হবে। কারণ এই সরকার যদি বেশিদিন থাকে তাহলে শুধু আমাদের নয়, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com