সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক :কোরবানি ইসলামের একটি মহান শিআর এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদুল আজহার সময় নির্দিষ্ট দিনে পালন করা হয়। এটি মূলত তাকওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সামাজিক সাম্য ও সহযোগিতার প্রতীক। অনেক সময় অর্থনৈতিক বা পারিবারিক কারণে কয়েকজন মিলে একটি পশু কোরবানি করার চিন্তা করেন। তবে শরিয়তের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো আছে যার বাইরে গিয়ে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না। এই প্রেক্ষাপটে, “তিন ভাই মিলে গরুর এক ভাগে শরিক হয়ে কোরবানি” করার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা জরুরি।
ইসলামের দৃষ্টিতে কোরবানি
কোরবানি ইসলামের শিয়ার। কোরবানির দিনগুলোতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো মালিকানায় থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাওসার: ২) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আদম সন্তানের জন্য কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো কাজ আল্লাহর কাছে নেই।’ (তিরমিজি: ১৪৯৩)
কোরবানি একাকী বা শরিকে উভয় পদ্ধতিতে করা জায়েজ
কোরবানির পশু নির্ধারিত। ছয় রকম পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়। সেগুলো হলো- গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে (মুসলিম: ১৩১৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)। গরু-মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীতে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার হতে পারেন, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)
শরিকে কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
গরু, মহিষ ও উট—এই তিন প্রকার পশুর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। তবে শর্ত হলো কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০৪)
একাধিক ব্যক্তি মিলে এক ভাগের জন্য শরিক হওয়া যাবে না
দুই তিন ভাই মিলে শরিকে কোরবানির এক ভাগ নিলে তা শরিয়তসম্মত হবে না। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘গরু বা উটের প্রতিটি ভাগে এক ভাগে একাধিক ব্যক্তির শরিক হওয়া বৈধ নয়।’ (বাদায়েউস সানায়ে: খ. ৪, পৃ. ১৯৮) আর ‘এক পশুতে সাত জনের বেশি শরিক হলে কোরবানি সহিহ হবে না।’ (আল-মুগনি, খ. ১৩, পৃ. ৩৯০) এমনকি এভাবে শরিক হলে অন্য শরিকদেরও কোরবানি সহিহ হবে না। ফকিহদের বক্তব্য হলো, শরিকে কোরবানি করলে কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০৪)
তিন ভাই মিলে কোরবানি করলে করণীয়
যদি তিন ভাই সবার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, তাহলে তাদের প্রত্যেককে এক ভাগ করে নিতে হবে। অথবা ছোট পশু একটি করে কোরবানি করতে হবে।
আর যদি তিন ভাইয়ের কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব না হয় কিন্তু কোরবানি করতে মন চায়, সেক্ষেত্রে সুন্দর একটি পন্থা হলো- একভাইকে অন্য ভাইয়েরা টাকা দিয়ে সমুদয় টাকার মালিক বানিয়ে দেবে এবং সে নিজের নামে একভাগে শরিক হয়ে কোরবানি করবে। অর্থাৎ একজনের নামেই কোরবানি সম্পন্ন হবে; অন্য কারো নাম থাকবে না। এই পদ্ধতিটা জায়েজ। এরপর চাইলে তিন ভাই মিলে গোশত ভাগ করে নেবে বা একই পরিবারে থাকলে সবাই মিলে খাবে। (খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩১৫; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৬; মাজমাউল আনহুর: ৪/১৬৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০৫; মাবসুত সারাখসি: ১২/১২; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩১৫)
কিন্তু কোনো অবস্থায় তিন ভাই মিলে কোরবানির গরুর একটি ভাগে শরিক হয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। কারণ, শরিয়তের মূলনীতি অনুসারে গরুর প্রতি ভাগ একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিয়তের ভিত্তিতে হতে হবে। অন্যথায় কোরবানি অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে।