সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক :রাতের ইবাদত আল্লাহ তাআলা অনেক পছন্দ করেন। তাই সলফে সালেহিনরা রাতে বেশি ইবাদত করতেন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ তাঁরা ছাড়তে চাইতেন না। কারণ তাহাজ্জুদ এমন ইবাদত, যা গুনাহ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহিনের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।’ (জামে তিরমিজি: ৩৫৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম: ১১৫৬)
প্রিয়নবীজি তাহাজ্জুদ নামাজে অনেক সময় ব্যয় করতেন। এক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন- كَانَ يَقُومُ مِنَ اللّيْلِ، حَتّى تَتَفَطّرَ قَدَمَاهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخّرَ؟ قَالَ: أَفَلاَ أُحِبّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا ‘(নবীজি) রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত বেশি নামাজ পড়তেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। এ দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! রাসুল (স.) বললেন, ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ (সহিহ বুখারি: ৪৮৩৭; সহিহ মুসলিম: ২৮২০)
তাহাজ্জুদ তিনি স্বেচ্ছায় তো ছাড়তেনই না, কখনো অনিচ্ছায় ছুটে গেলেও কাজা করে নিতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রোগ-ব্যাধি কিংবা অন্যকোনো কারণে যদি রাসুল (স.) তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে দিনের বেলায় বারো রাকাত আদায় করে নিতেন। (সহিহ মুসলিম: ৭৪৬)
অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে কাইস (রা.)-কে হজরত আয়েশা (রা.) বললেন- ياعَبْدَ اللهِ لاَ تَدَعْ قِيَامَ اللّيْلِ، فَإنّ النّبِيّ صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَا كَانَ يَدَعُهُ وَكَانَ إِذَا مَرِضَ أَوْ كَسِلَ صَلّى قَاعِدًا ‘হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল কখনো ছেড়ো না! কেননা নবীজি (স.) তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩০৯)
মর্যাদা ও ফজিলত উভয় দিক দিয়েই ফরজ নামাজের পরে তাহাজ্জুদের স্থান। এটি এত মহান ইবাদত যে, আদায়ের নিয়ত থাকলেও অসীম সওয়াব। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে, কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকাস্বরূপ হয়ে যাবে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১৭৮৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের যত বেশি সম্ভব তাহাজ্জুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের নিয়ত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।