ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :কোরবানি ইসলামি শরিয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। এই সময়ে পরিবারের একাধিক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাদের প্রত্যেকের ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব।
বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার অভাবে অনেকের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না। আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই দেখা যায়, একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু কর্তার নামেই কোরবানি করা হয়। এটি মূলত ভুল পদ্ধতি।
আপনার ফরজ নামাজ অন্যকেউ পড়লে যেমন আপনারটা আদায় হবে না, তদ্রুপ আপনার ওয়াজিব কোরবানি ততক্ষণ আদায় হবে না, যতক্ষণ নিজেও কোরবানি করছেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, কোনো ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। (সুরা নাজম: ৩৮)
এই ভুল থেকে বাঁচার একটা সহজ সমাধান আছে। ধরুন পরবারের সবাই মিলে একটি পশু কিনলেন এবং এতে যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তারা সবাই অংশ নিলেন। তাতে বাহ্যিকভাবে গরু একটি হলেও যেহেতু প্রতিজনের ভাগেই অন্তত এক ভাগ পড়ছে, তাই সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
অথবা কোরবানির পশু কিনল একজন। আর বাকিদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের পক্ষ থেকেও কোরবানির নিয়তে জবাই করলে সবার কোরবানি আদায় হবে। অন্যথায় বাকিদের কোরবানি আদায় হবে না।
এভাবে শরিয়তের নিয়ম মেনে কোরবানি করা জরুরি। কোনোভাবেই যেন এমন না হয় যে, ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন করে বসে আছেন। যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোরবানি করে না, তাদের ব্যাপারে খুব খারাপ কথা বলা হয়েছে হাদিসে। এমনকি তাদের ঈদগাহে আসারও প্রয়োজন নেই—এমন উক্তি করেছেন নবীজি (স.)। ইরশাদ হয়েছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত তারগিব: ২/১৫৫)
নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায়- যদি কারো কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখন তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমমূল্যের নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যাবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্রের মালিক হলেও সে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে গণ্য হবে। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা: ১০, খণ্ড: ৬)
আর কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদের ওপর এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়, বরং ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদ কারো কাছে থাকলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর প্রত্যেক নির্দেশনা যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।