যেসব ভুলে কোরবানি নষ্ট হতে পারে

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বহু লোক কোরবানি দেবেন। এরই মধ্যে কোরবানি পশু কেনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। 

 

কোরবানির পশু কেনার ব্যাপারে অনেকে বিভিন্ন ভুল করে থাকেন। যার দরুন সওয়াব লাভ তো দূরে থাক তাদের কোরবানি বিশুদ্ধই হয় না।

নিয়ত বিশুদ্ধ করা: আমরা বিভিন্ন নিয়তে কোরবানি করে থাকি, কেউ কোরবানি করি সামাজিক মর্যাদা হিসেবে। সমাজে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, সুতরাং কোরবানি না দিলে আমার মর্যাদা থাকবে না। কেউ কোরবানি করি চক্ষু লজ্জা থেকে বাঁচতে। কেউ কোরবানি করি গোস্ত খেতে ইত্যাদি ইত্যাদি । এ জাতীয় উদ্দেশে কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না।

 

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘এগুলোর গোস্ত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)।

 

আল্লাহর নামে কোরবানি দেয়া: আমাদের সমাজে ব্যক্তির নামে কোরবানির কথা বলা হয় যেমন অমুকের নামে, বাবার নামে অথবা মায়ের নামে কোরবানি দেব। এমনটা বলা ঠিক নয়। কারণ, কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত, যা হবে আল্লাহর নামে, ব্যক্তির নামে নয়। এজন্য বলা যেতে পারে অমুকের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি।

 

আল্লাহ তয়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তা ভক্ষণ করো না যেগুলো আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্যের নামে যবাই করা হয়।’ (সূরা আনআম, আয়াত ১২১)।

 

হাসিল ছাড়া কোরবানি করা: অনেকে মনে করেন হাসিল না দিলে কোরবানি হবে না। এ ধারণা ঠিক নয়। হাসিল হাটের ভাড়া। এটি হাট কর্তৃপক্ষের হক। যা হাটের সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে নেয়া হয়। তাই এ টাকা পরিশোধ করা জরুরি। হাসিল না দিলে হাট কর্তৃপক্ষের হক নষ্ট করার গোনাহ হবে।

 

পশু জবাই করার জন্য ধারাল ছুরির ব্যবস্থা করা: কোরবানির পশু জবাই করার জন্য হুজুরদের ছুরির দিকে তাকিয়ে থাকি। তার ছুরি তো একটা। এজন্য প্রথমে যেগুলো জবাই করেন সেগুলো যত সুন্দরভাবে জবাই হয় পরের গুলো তেমন হয় না। এজন্য কোরবানির অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তুর সঙ্গে ধারাল ছুরির ব্যবস্থা করা।

 

নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা (কাউকে শরীয়ত মোতাবেক হদ বা কিসাস হিসেবে) হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর, যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই কর। এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দিবে। যেন জবাইয়ে প্রাণীর বেশি কষ্ট না হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৫৫)।

 

নিজের পশু নিজেই জবাই করা: অনেকে মনে করেন ইমাম বা মাদরাসার ছাত্র দ্বারা জবাই করা জরুরি। আসলে বিষয়টা এমন নয়। বরং নিজে জবাই করা মুস্তাহাব। অক্ষম হলে অন্য কোনো মুসলমান দিয়ে জবাই করা যেতে পারে। তবে ইমাম, ওলামায়ে কেরাম ও ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসার কারণে তাদের দ্বারা কোরবানি করালে দোষের কিছু নেই।

 

হজরত আনাস ইবনে মালেক বলেন, রাসূল সা. দু’টি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলেছেন। আর আমি দেখেছি যে, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে নিজ হাতে সেগুলো জবাই করেছেন। (সহীহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৫৮)

 

কোরবানির সময় দাতাদের নাম পাঠ: কোরবানির সময় দাতাদের নাম কাগজে লিখে হাতে নিয়ে পাঠ করাকে অনেকে জরুরি মনে করেন। অথচ কোরআন ও হাদীসে এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তা আল্লাহ তায়ালা ভালো করে জানেন।

 

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।’ (সূরা আলা, আয়াত : ৭)।

 

জবাইয়ের আগে লম্বা দোয়া পড়া: আমরা অনেকেই এই অজুহাতে কোরবানি করি না যে, আমার তো দোয়া মুখস্থ নেই। অথচ জবাইয়ের আগে হাদীসে বর্ণিত দোয়াটি পড়া উত্তম; জরুরি নয়। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করলে পশু জবাই শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫২৩৮)।

 

জবাইকারী ও তার সহযোগীদের বিসমিল্লাহ পড়া জরুরি: জবাইকারী এবং তার সঙ্গে সহযোগীরা যদি জবাইয়ের সময় ছুরিতে হাত লাগায়, তাহলে প্রত্যেককে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। এদের কেউ যদি ইচ্ছাপূর্বক জবেহের সময় বিসমিল্লাহ না পড়ে তাহলে পশু কোরবানি হবে না। (রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা : ৬/৩৩৪)। আমরা অনেকেই এ মারাত্মক ভুল করি।

 

যবাইয়ের সময় পশুর চারটি রগের তিনটি কাটা নিশ্চিত করতে হবে: অনেক সময় জবাইকারী একটু জবাইয়ের পর কসাই ছোট ছুরি দিয়ে পশুর গলায় ছুরি দিয়ে জোরে আঘাত করেন, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গর্হিত কাজ। এতে পশু জবাই হলো না বরং আঘাতে হত্যা করা হলো।

 

এজন্য প্রাণীর চারটি রগের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি রগ কাটা নিশ্চিত করতে হবে। চারটি রগ হলো- শ্বাসনালি, খাদ্যনালি ও দুটি রক্তনালি বা শাহরগ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সুবিচার নিশ্চিত করে সরকার প্রমাণ করতে চায় শেখ হাসিনার চাইতে ভিন্ন: আইন উপদেষ্টা

» হাসিনা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বৈরাচার: দুদু

» সংস্কার প্রতিবেদনের আলোকে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার তৈরি হবে: ড. ইউনূস

» মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ

» শর্তহীন মার্জনা

» ভুলে শিশুর বাম চোখের বদলে ডান চোখে অপারেশনের অভিযোগ

» ন্যায়বিচার পেয়েছি, আমরা সন্তুষ্ট: আইনজীবী জয়নুল আবেদীন

» আবারও রিমান্ডে সালমান-পলক

» শীতে পরিযায়ী পাখিরা কীভাবে সহস্র মাইল পথ চিনে যায়-আসে?

» নারীকে গলা কেটে হত্যা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যেসব ভুলে কোরবানি নষ্ট হতে পারে

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বহু লোক কোরবানি দেবেন। এরই মধ্যে কোরবানি পশু কেনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। 

 

কোরবানির পশু কেনার ব্যাপারে অনেকে বিভিন্ন ভুল করে থাকেন। যার দরুন সওয়াব লাভ তো দূরে থাক তাদের কোরবানি বিশুদ্ধই হয় না।

নিয়ত বিশুদ্ধ করা: আমরা বিভিন্ন নিয়তে কোরবানি করে থাকি, কেউ কোরবানি করি সামাজিক মর্যাদা হিসেবে। সমাজে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, সুতরাং কোরবানি না দিলে আমার মর্যাদা থাকবে না। কেউ কোরবানি করি চক্ষু লজ্জা থেকে বাঁচতে। কেউ কোরবানি করি গোস্ত খেতে ইত্যাদি ইত্যাদি । এ জাতীয় উদ্দেশে কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না।

 

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘এগুলোর গোস্ত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)।

 

আল্লাহর নামে কোরবানি দেয়া: আমাদের সমাজে ব্যক্তির নামে কোরবানির কথা বলা হয় যেমন অমুকের নামে, বাবার নামে অথবা মায়ের নামে কোরবানি দেব। এমনটা বলা ঠিক নয়। কারণ, কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত, যা হবে আল্লাহর নামে, ব্যক্তির নামে নয়। এজন্য বলা যেতে পারে অমুকের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি।

 

আল্লাহ তয়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তা ভক্ষণ করো না যেগুলো আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্যের নামে যবাই করা হয়।’ (সূরা আনআম, আয়াত ১২১)।

 

হাসিল ছাড়া কোরবানি করা: অনেকে মনে করেন হাসিল না দিলে কোরবানি হবে না। এ ধারণা ঠিক নয়। হাসিল হাটের ভাড়া। এটি হাট কর্তৃপক্ষের হক। যা হাটের সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে নেয়া হয়। তাই এ টাকা পরিশোধ করা জরুরি। হাসিল না দিলে হাট কর্তৃপক্ষের হক নষ্ট করার গোনাহ হবে।

 

পশু জবাই করার জন্য ধারাল ছুরির ব্যবস্থা করা: কোরবানির পশু জবাই করার জন্য হুজুরদের ছুরির দিকে তাকিয়ে থাকি। তার ছুরি তো একটা। এজন্য প্রথমে যেগুলো জবাই করেন সেগুলো যত সুন্দরভাবে জবাই হয় পরের গুলো তেমন হয় না। এজন্য কোরবানির অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তুর সঙ্গে ধারাল ছুরির ব্যবস্থা করা।

 

নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা (কাউকে শরীয়ত মোতাবেক হদ বা কিসাস হিসেবে) হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর, যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই কর। এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দিবে। যেন জবাইয়ে প্রাণীর বেশি কষ্ট না হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৫৫)।

 

নিজের পশু নিজেই জবাই করা: অনেকে মনে করেন ইমাম বা মাদরাসার ছাত্র দ্বারা জবাই করা জরুরি। আসলে বিষয়টা এমন নয়। বরং নিজে জবাই করা মুস্তাহাব। অক্ষম হলে অন্য কোনো মুসলমান দিয়ে জবাই করা যেতে পারে। তবে ইমাম, ওলামায়ে কেরাম ও ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসার কারণে তাদের দ্বারা কোরবানি করালে দোষের কিছু নেই।

 

হজরত আনাস ইবনে মালেক বলেন, রাসূল সা. দু’টি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলেছেন। আর আমি দেখেছি যে, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে নিজ হাতে সেগুলো জবাই করেছেন। (সহীহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৫৮)

 

কোরবানির সময় দাতাদের নাম পাঠ: কোরবানির সময় দাতাদের নাম কাগজে লিখে হাতে নিয়ে পাঠ করাকে অনেকে জরুরি মনে করেন। অথচ কোরআন ও হাদীসে এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তা আল্লাহ তায়ালা ভালো করে জানেন।

 

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।’ (সূরা আলা, আয়াত : ৭)।

 

জবাইয়ের আগে লম্বা দোয়া পড়া: আমরা অনেকেই এই অজুহাতে কোরবানি করি না যে, আমার তো দোয়া মুখস্থ নেই। অথচ জবাইয়ের আগে হাদীসে বর্ণিত দোয়াটি পড়া উত্তম; জরুরি নয়। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করলে পশু জবাই শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫২৩৮)।

 

জবাইকারী ও তার সহযোগীদের বিসমিল্লাহ পড়া জরুরি: জবাইকারী এবং তার সঙ্গে সহযোগীরা যদি জবাইয়ের সময় ছুরিতে হাত লাগায়, তাহলে প্রত্যেককে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। এদের কেউ যদি ইচ্ছাপূর্বক জবেহের সময় বিসমিল্লাহ না পড়ে তাহলে পশু কোরবানি হবে না। (রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা : ৬/৩৩৪)। আমরা অনেকেই এ মারাত্মক ভুল করি।

 

যবাইয়ের সময় পশুর চারটি রগের তিনটি কাটা নিশ্চিত করতে হবে: অনেক সময় জবাইকারী একটু জবাইয়ের পর কসাই ছোট ছুরি দিয়ে পশুর গলায় ছুরি দিয়ে জোরে আঘাত করেন, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গর্হিত কাজ। এতে পশু জবাই হলো না বরং আঘাতে হত্যা করা হলো।

 

এজন্য প্রাণীর চারটি রগের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি রগ কাটা নিশ্চিত করতে হবে। চারটি রগ হলো- শ্বাসনালি, খাদ্যনালি ও দুটি রক্তনালি বা শাহরগ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com