মা-বাবা বিয়ে দিতে না চাইলে শরিয়তের নির্দেশনা কী

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং দ্রুত বিয়ে করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কিন্তু যখন মা-বাবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কী করণীয়? আসুন জেনে নিই শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি।

 

১. ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও মা-বাবার অবস্থান

বিয়ে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজাহ)। তবে একইসঙ্গে মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনও ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)

 

২. মা-বাবার অসম্মতিতে বিয়ে করার বিধান

ফুকাহায়ে কেরামের মতে, নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ হলে মা-বাবার অসম্মতি অগ্রাহ্য করা যেতে পারে

  • বিয়ের জন্য শরয়ি সক্ষমতা থাকা (শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক)
  • বিয়ে না করলে গুনাহে জড়ানোর প্রবল আশঙ্কা থাকা
  • মা-বাবার আপত্তি যুক্তিসঙ্গত না হওয়া (যেমন: বংশমর্যাদা, গোত্রগত বিদ্বেষ ইত্যাদি)
  • বিয়ের প্রস্তাব শরিয়তসম্মত হওয়া

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘যখন বিয়ে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ের হয় এবং মা-বাবার আপত্তি যুক্তিহীন হয়, তখন তাদের অসম্মতিকে অগ্রাহ্য করা যাবে।’ (আল-মাজমু: ১৬/৩৪২)

 

৩. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয়

এমন পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত

  • মা-বাবার সাথে নম্রভাবে আলোচনা করা এবং তাদের আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করা
  • পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ বা আলেমদের মাধ্যমে বোঝানো
  • যদি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে স্থানীয় ইসলামিক কাউন্সিল বা দারুল ইফতার সঙ্গে পরামর্শ করা
  • শেষ পর্যন্ত বিয়ে করলে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করা এবং তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকা

৪. বিশেষ সতর্কতা

  • আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে বিয়ে না করা
  • শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া
  • বিয়ের পরও মা-বাবার সাথে সদাচরণ বজায় রাখা
  • কোনো অবস্থাতেই শরিয়তবিরোধী কারণ যেন না থাকে (যেমন: পাত্র/পাত্রীর ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন)।

ইসলামে মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে শরিয়তের বিধান তাদের ইচ্ছার উপর অগ্রাধিকার পায়। সক্ষম ব্যক্তির জন্য গুনাহ থেকে বাঁচতে বিয়ে করা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সুন্নত পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং যথাসম্ভব মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

তথ্যসূত্র: সূরা বনি ইসরাইল: ২৩; সুনান ইবনে মাজাহ: ১৮৪৬; আল-মাজমু: ১৬/৩৪২; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/২৯৬; রদ্দুল মুহতার: ৩/৫৮

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচনে কেউ সামান্যতম পক্ষপাতিত্ব দেখালে ব্যবস্থা: ইসি সানাউল্লাহ

» আ. লীগকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভোট ঘিরে বিপর্যয় নামতে পারে: মঞ্জু

» ‘সচিবালয়ে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’

» মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

» চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুকে

» মাজারে হামলা চালালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: ধর্ম উপদেষ্টা

» পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের খোঁজ দিলে মিলবে পুরস্কার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» মা-বাবা বিয়ে দিতে না চাইলে শরিয়তের নির্দেশনা কী

» লালমনিরহাটে সাংবাদিকের ওপর হামলা, প্রধান আসামি গ্রেফতার

» ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মা-বাবা বিয়ে দিতে না চাইলে শরিয়তের নির্দেশনা কী

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং দ্রুত বিয়ে করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কিন্তু যখন মা-বাবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কী করণীয়? আসুন জেনে নিই শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি।

 

১. ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও মা-বাবার অবস্থান

বিয়ে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজাহ)। তবে একইসঙ্গে মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনও ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)

 

২. মা-বাবার অসম্মতিতে বিয়ে করার বিধান

ফুকাহায়ে কেরামের মতে, নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ হলে মা-বাবার অসম্মতি অগ্রাহ্য করা যেতে পারে

  • বিয়ের জন্য শরয়ি সক্ষমতা থাকা (শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক)
  • বিয়ে না করলে গুনাহে জড়ানোর প্রবল আশঙ্কা থাকা
  • মা-বাবার আপত্তি যুক্তিসঙ্গত না হওয়া (যেমন: বংশমর্যাদা, গোত্রগত বিদ্বেষ ইত্যাদি)
  • বিয়ের প্রস্তাব শরিয়তসম্মত হওয়া

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘যখন বিয়ে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ের হয় এবং মা-বাবার আপত্তি যুক্তিহীন হয়, তখন তাদের অসম্মতিকে অগ্রাহ্য করা যাবে।’ (আল-মাজমু: ১৬/৩৪২)

 

৩. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয়

এমন পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত

  • মা-বাবার সাথে নম্রভাবে আলোচনা করা এবং তাদের আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করা
  • পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ বা আলেমদের মাধ্যমে বোঝানো
  • যদি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে স্থানীয় ইসলামিক কাউন্সিল বা দারুল ইফতার সঙ্গে পরামর্শ করা
  • শেষ পর্যন্ত বিয়ে করলে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করা এবং তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকা

৪. বিশেষ সতর্কতা

  • আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে বিয়ে না করা
  • শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া
  • বিয়ের পরও মা-বাবার সাথে সদাচরণ বজায় রাখা
  • কোনো অবস্থাতেই শরিয়তবিরোধী কারণ যেন না থাকে (যেমন: পাত্র/পাত্রীর ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন)।

ইসলামে মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে শরিয়তের বিধান তাদের ইচ্ছার উপর অগ্রাধিকার পায়। সক্ষম ব্যক্তির জন্য গুনাহ থেকে বাঁচতে বিয়ে করা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সুন্নত পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং যথাসম্ভব মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

তথ্যসূত্র: সূরা বনি ইসরাইল: ২৩; সুনান ইবনে মাজাহ: ১৮৪৬; আল-মাজমু: ১৬/৩৪২; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/২৯৬; রদ্দুল মুহতার: ৩/৫৮

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com