সংগৃহীত ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ড্রোন হামলা। সাম্প্রতিক এই সংঘাতে দুই পক্ষই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে—যা বিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরের অন্তত তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ দ্রুতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যেগুলো ইসরায়েলের তৈরি ‘হ্যারোপ’ মডেলের বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এসব ড্রোন করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে ভারত বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, দাবি করেছে তারা পাকিস্তানের একাধিক আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করেছে। পাকিস্তান অবশ্য এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের দীর্ঘদিনের সংঘাত এবার এমন এক পর্বে পৌঁছেছে, যেখানে ড্রোন ও মানববিহীন প্রযুক্তি কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক জাহারা ম্যাটিসেক বলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত এমন এক ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে—যেখানে এই ‘অদৃশ্য চোখ’ ও মনুষ্যবিহীন নির্ভুলতা উত্তেজনা বাড়াতেও পারে, কমাতেও পারে। যে দেশ ড্রোন প্রযুক্তি ও কৌশলে এগিয়ে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আকাশে তারাই আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে
তিনি আরও বলেন, আধুনিক যুদ্ধে ড্রোন শুধু নজরদারির জন্য নয়, শত্রুর অবস্থান শনাক্ত ও ধ্বংস করতেও ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারতীয় হামলায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ভারতের দাবি, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলা ছিল গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ। তবে পাকিস্তান পেহেলগাম হামলায় তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ড্রোন যুদ্ধের এই নতুন অধ্যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।
অধ্যাপক ম্যাটিসেক বলেন, ড্রোন দিয়ে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়, যাতে পরবর্তীতে সেই রাডারকে নির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা যায়। ইউক্রেন ও রাশিয়া তাদের যুদ্ধে এ ধরনের কৌশলই ব্যবহার করছে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই প্রথমবারের মতো এমন ড্রোন-নির্ভর সামরিক সংঘাতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সংঘাত শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশলেরও পূর্বাভাস বহন করছে।