বিমা করার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

বিমা হলো দুই পক্ষ অর্থাৎ বিমাকারী ও বিমাকৃতের মধ্যে একটি আইনি চুক্তি। একজন ব্যক্তির জীবন, সম্পত্তি, মৃত্যু, অক্ষমতা বা ধ্বংসের ঝুঁকি দ্বারা বেষ্টিত এটি। এই ঝুঁকিগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিমা কোম্পানির কাছে এ ধরনের ঝুঁকি হস্তান্তর করার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার একটি অন্যতম উপায় হলো বিমা।

 

এক্ষেত্রে বিমাকারী ও বিমাগ্রহীতার মধ্যে বিমার জন্য একটি আইনি চুক্তি হয়। যাকে বিমা পলিসি বলা হয়। এতে বিমা কোম্পানি বিমাকৃত ব্যক্তি বা মনোনীত ব্যক্তিদের বিমার পরিমাণ পরিশোধ করবে এমন শর্ত ও পরিস্থিতিতে বিশদ বিবরণ থাকে।

বিমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বিমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে। অসংখ্য বিমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বিমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে।

 

বাংলাদেশে কী কী বিমা চালু আছে?

বাংলাদেশে সাধারণত দু’ধরনের বিমা হয় যেমন- জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা। জীবন বিমায় একজন ব্যক্তি নিজের বা পরিবারের কোনো সদস্যের জীবন বিমা করাতে পারেন। জীবন বিমাকে ভবিষ্যতের বন্ধু বলা হয়। একই সঙ্গে এটি সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই দুনিয়াজুড়ে দিন দিন জীবন বিমার চাহিদা বাড়ছে।

 

এতে বিমাকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরিবার অথবা নমিনি বিমাকৃত অর্থের পুরোটাই প্রদান করা হবে। অন্যদিকে সাধারণ বিমার মধ্যে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, যানবাহনসহ যত ধরনের বিমা হয় তার সব কিছুই পড়ে। যদি আপনার কোনো ধরনের গাড়ি থাকে, তার বিমা করানো খুব প্রয়োজন। কারণ, চুরি বা দুর্ঘটনা হলে আপনি আর্থিক ক্ষতির সুরক্ষা পাবেন।

তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৭৮টি বিমা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি। এর মধ্যে একটি জীবন বিমা ও অন্যটি সাধারণ বিমার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে। দুটি বিদেশি বিমা কোম্পানিও আছে এর মধ্যে।

 

বিমা করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, না হলে পড়তে পারেন বিপদে। জেনে নিন কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন এক্ষেত্রে-

 

বিমা নিয়ে অনেক রকম বিভ্রান্তি আছে

১. বিমা করার আগে সংশ্লিষ্ট বিমার শর্তাদি দেখে, জেনে ও বুঝে নিন। অর্থাৎ সুবিধা ও বোনাস সম্পর্কে জেনে নিন। পছন্দের পলিসি থেকে আপনি কী কী সুবিধা পাবেন, অতিরিক্ত কোনো সুবিধা যোগ করা সম্ভব কি না, ঋণ পাওয়া যাবে কিনা।

 

এ ছাড়াও কী রকম বোনাস পাবেন, কয়টি বোনাস পাবেন, কত বছর মেয়াদি করলে ভালো হয়, কত দিনের মাথায় আপনি বিমা সুবিধা পাওয়া শুরু করবেন, বিমা পলিসি পরিবর্তন করতে হলে করণীয় এবং বিমা না চালাতে চাইলে কী করবেন ইত্যাদি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

 

২. প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার নিয়মাবলি ও সময়সীমা পার হয়ে গেলে কী করণীয় ভালো করে জেনে নিতে হবে। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা বন্ধ করে দেন, তবে আপনি নির্দিষ্ট কী পরিমাণ অর্থ পাবেন তা-ও স্পষ্ট করে জেনে নিন।

 

৩. মেয়াদ পূর্তির পর ঠিক কত টাকা ও কতদিনের মধ্যে সে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে।

৪. মেয়াদ পূর্তির পর যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে গ্রাহকের কী আইনি সুরক্ষা থাকছে সেটি জেনে নিন।

জাতীয় বিমা দিবস ১ মার্চ পালিত হয়ে আসছে। বিমা শিল্পের উন্নয়ন ও বিমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের

১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এটি প্রবর্তন করে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। তার এ যোগদানের দিনটিকে জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় রাখতেই ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।

 

এ দিবসে বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিমাশিল্পের উন্নয়ন, বিমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শোভাযাত্র, বিমামেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়।   সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান রিজভীর

» বাংলাদেশ ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা জারি

» জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে: মতিউর রহমান আকন্দ

» বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বহু রাজনীতিবীদের শিক্ষক: মির্জা ফখরুল

» বিএনপি সেই গণতন্ত্রের কথা বলে, যে গণতন্ত্রে মানুষ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে  : ড. মঈন খান

» সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটে শাপলা বিক্রি করেই চলছে দিনমজুর হানিফের সংসার, সরকারী সহায়তা বঞ্চিত!

» লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুত ৪ শত ৬৮ টি পূজা মন্ডব

» আগৈলঝাড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয় মুখ ললিতা সরকার শিক্ষা ও নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত

» ঢাকা থেকে জামালপুরের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

» গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল না করলে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি ওলামা পরিষদের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিমা করার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

বিমা হলো দুই পক্ষ অর্থাৎ বিমাকারী ও বিমাকৃতের মধ্যে একটি আইনি চুক্তি। একজন ব্যক্তির জীবন, সম্পত্তি, মৃত্যু, অক্ষমতা বা ধ্বংসের ঝুঁকি দ্বারা বেষ্টিত এটি। এই ঝুঁকিগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিমা কোম্পানির কাছে এ ধরনের ঝুঁকি হস্তান্তর করার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার একটি অন্যতম উপায় হলো বিমা।

 

এক্ষেত্রে বিমাকারী ও বিমাগ্রহীতার মধ্যে বিমার জন্য একটি আইনি চুক্তি হয়। যাকে বিমা পলিসি বলা হয়। এতে বিমা কোম্পানি বিমাকৃত ব্যক্তি বা মনোনীত ব্যক্তিদের বিমার পরিমাণ পরিশোধ করবে এমন শর্ত ও পরিস্থিতিতে বিশদ বিবরণ থাকে।

বিমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বিমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে। অসংখ্য বিমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বিমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে।

 

বাংলাদেশে কী কী বিমা চালু আছে?

বাংলাদেশে সাধারণত দু’ধরনের বিমা হয় যেমন- জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা। জীবন বিমায় একজন ব্যক্তি নিজের বা পরিবারের কোনো সদস্যের জীবন বিমা করাতে পারেন। জীবন বিমাকে ভবিষ্যতের বন্ধু বলা হয়। একই সঙ্গে এটি সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই দুনিয়াজুড়ে দিন দিন জীবন বিমার চাহিদা বাড়ছে।

 

এতে বিমাকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরিবার অথবা নমিনি বিমাকৃত অর্থের পুরোটাই প্রদান করা হবে। অন্যদিকে সাধারণ বিমার মধ্যে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, যানবাহনসহ যত ধরনের বিমা হয় তার সব কিছুই পড়ে। যদি আপনার কোনো ধরনের গাড়ি থাকে, তার বিমা করানো খুব প্রয়োজন। কারণ, চুরি বা দুর্ঘটনা হলে আপনি আর্থিক ক্ষতির সুরক্ষা পাবেন।

তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৭৮টি বিমা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি। এর মধ্যে একটি জীবন বিমা ও অন্যটি সাধারণ বিমার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে। দুটি বিদেশি বিমা কোম্পানিও আছে এর মধ্যে।

 

বিমা করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, না হলে পড়তে পারেন বিপদে। জেনে নিন কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন এক্ষেত্রে-

 

বিমা নিয়ে অনেক রকম বিভ্রান্তি আছে

১. বিমা করার আগে সংশ্লিষ্ট বিমার শর্তাদি দেখে, জেনে ও বুঝে নিন। অর্থাৎ সুবিধা ও বোনাস সম্পর্কে জেনে নিন। পছন্দের পলিসি থেকে আপনি কী কী সুবিধা পাবেন, অতিরিক্ত কোনো সুবিধা যোগ করা সম্ভব কি না, ঋণ পাওয়া যাবে কিনা।

 

এ ছাড়াও কী রকম বোনাস পাবেন, কয়টি বোনাস পাবেন, কত বছর মেয়াদি করলে ভালো হয়, কত দিনের মাথায় আপনি বিমা সুবিধা পাওয়া শুরু করবেন, বিমা পলিসি পরিবর্তন করতে হলে করণীয় এবং বিমা না চালাতে চাইলে কী করবেন ইত্যাদি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

 

২. প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার নিয়মাবলি ও সময়সীমা পার হয়ে গেলে কী করণীয় ভালো করে জেনে নিতে হবে। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা বন্ধ করে দেন, তবে আপনি নির্দিষ্ট কী পরিমাণ অর্থ পাবেন তা-ও স্পষ্ট করে জেনে নিন।

 

৩. মেয়াদ পূর্তির পর ঠিক কত টাকা ও কতদিনের মধ্যে সে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে।

৪. মেয়াদ পূর্তির পর যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে গ্রাহকের কী আইনি সুরক্ষা থাকছে সেটি জেনে নিন।

জাতীয় বিমা দিবস ১ মার্চ পালিত হয়ে আসছে। বিমা শিল্পের উন্নয়ন ও বিমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের

১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এটি প্রবর্তন করে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। তার এ যোগদানের দিনটিকে জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় রাখতেই ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।

 

এ দিবসে বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিমাশিল্পের উন্নয়ন, বিমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শোভাযাত্র, বিমামেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়।   সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com