এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট : বর্ষা শুরু হতেই খাল-বিল, নদ-নদীতে নামে দেশি মাছের ঢল। আর এই মাছ ধরতে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে শত শত ‘চাই’। ফলে জমে উঠেছে বাংলার দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ থাকলেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের চিতলমারীতেও মাছ শিকারের বিশেষ একটি উপকরণ রয়েছে। অনেকে স্থানীয় ভাবে বলেন দোহার, আবার কেউকেউ বলেন চাই। ‘চাই’র বেশির ভাগ দেখা মেলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। গ্রাম গঞ্জে বর্ষাকালিন সময়ে খাল বিল, যখন পানিতে টাইটুম্বুর তখন জেলে-বা মৎস্যজীবীরা জলাশয়ে চাই বা দোহার পেতে মাছ শিকার করেন।
তারই ধারাবাহিকতায়, সদর চিতলমারী উপজেলায় সপ্তাহে শনি ও বুধবার হাট বসে। এই হাটে ‘চাই’র আমদানীও হয় যথেষ্ট। স্থাণীয় ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলা উপজেলায় তা চালান হয়। চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারি, সন্তোষপুর, হিজলা ও কলাতলা ইউনিয়ননে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ, বর্ষাকালে দোহার তৈরির কাজে ব্যাস্ত সময় পার করেন। বর্ষাকাল শেষ হলে তারা কৃষিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হন।
চরবানিয়ারী উত্তর পাড়া গ্রামের চাই বিক্রেতা সন্তোষ বালা (৬৫) জানান, বর্ষাকালে মাঠে তেমন কাজ না থাকায় দোহার তৈরি করে বাড়তি অর্থ আয় করা সম্ভব। সে কারনে তিনি তার পরিবার নিয়ে চাই তৈরির হাতের কাজ বেছে নিয়েছেন।
কৃষ্ণনগর গ্রামের দিপ্ত বালা (৫৫) জানান বর্ষাকালে তার পরিবারের আয়ের উৎস্য চাই তৈরি করা। বৃষ্টি বেশী হলে ‘চাই’র মূল্য বাড়ে, বর্তমান প্রতিজোড়া ‘চাই’ ৩শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের চাই ক্রেতা মোঃ বেল্লাল শেখ (৪৫), জানান তার মৎস্যঘেরের আশপাশে চাই পাতার জন্য দাম বাড়ার আগে ১৮শ’ টাকায় ১২খানা ‘চাই’ ক্রয় করেছেন। হাটের ইজারাদার আবজাল শেখ (৬০) জানান বর্ষা কম তাই ‘চাই’র দাম এখন অনেক কম। বর্ষ বাড়লে ‘চাই’র দাম ও চাহিদা বাড়বে।শিল্পটি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়া, মাছ শিকারের চাহিদা কমে যাওয়া, এবং উচ্চমূল্যের কাঁচামালের কারণে অনেকেই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
তবে চাই নির্মাণশিল্পে ঋণ সহায়তা পেলে আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে এ লোকজ শিল্প। কারিগরদের দাবি, সরকার স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিলে এ শিল্পে ফিরতে পারে গতি।
এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় এই সময়ে মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই জেলেদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ যন্ত্র ব্যবহারে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসনের সহযোগিতায়।