ফাইল ছবি
ধর্ম ডেস্ক :ফিলিস্তিনি মুসলিমদের আবেগভূমি। এখানে অসংখ্য নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে। পবিত্র কোরআনে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাসকেন্দ্রিক বিশাল ভূমিকে পবিত্র ভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাকে হাদিসের ভাষায় শাম বলা হয়। শামদেশ বলতে বোঝায় বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস থেকেই প্রিয়নবীজির মেরাজ শুরু হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে ফিলিস্তিন মুসলমানদের ভালোবাসার জায়গা।
দুঃখজনকভাবে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ইহুদিদের নির্যাতনের শিকার। মুসলমানদের রক্তে প্লাবিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চল। বিশেষ করে অসহায় নারী-শিশুদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই মুহূর্তে মুসলিম জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
১. নিজ নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ ওঠানো যে আপনারা এ বিষয়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরে বসে থাকবেন না, বরং হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরিপূর্ণ সাহায্যে এগিয়ে আসুন। শুধু মৌখিক বিবৃতি ও সমর্থনই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করুন।
২. মুসলিমদের একটি বড় অস্ত্র যাকে আমরা উদাসীনতার কারণে অস্ত্র মনে করছি না, তা হলো ‘দোয়া’। আল্লাহ তাআলা সব কিছুর পরিকল্পনাকারী। এই সব অস্ত্র মিসাইল হোক, রকেট হোক, বোমা হোক—এগুলো কার হুকুমে পরিচালিত হয়? একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কে তার মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে?
৩. মুসলিম সরকারের কাছে আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিন। কোরআনে করিমের এই বাণী সব মুসলিম সরকারপ্রধানের কাছে পৌঁছানো আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন এ জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ (সুরা নিসা: ৭৫)
কোরআনে করিমের এই আয়াত বিশ্ব মুসলিমকে জোরদার আহ্বান করছে যে তোমরা কেন মজলুমের সাহায্যে এগিয়ে আসছ না? এই মুহূর্তে উক্ত আয়াতের প্রতিপাদন গাজার মজলুম মুসলিমদের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রযোজ্য হয়। তারা এই বিপদের মুহূর্তে আল্লাহকে ডাকছে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করো! আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী পাঠাও!’ এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলার এই হুকুম—‘তোমরা কেন তাদের সাহায্যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছো না?’
৪. নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা। আমরা সাধারণ জনগণ সেখানে গিয়ে ওই যুদ্ধে তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণের সামর্থ্য নেই, বরং এ পরিস্থিতিতে আবেগের ওপর সাধারণ জনগণ সেখানে গিয়ে তাদের বোঝা হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শক্তি-সামর্থ্যহীন সাধারণ মুসলিমরা অবিবেচনাপ্রসূত সেখানে গিয়ে তাদের জন্য সংকট বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। তাই সাধারণ মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের সরকারের কাছে জোরদারভাবে এই দাবি জানাতে পারে, যেন সরকার মজলুমদের সাহায্যে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসে।
৫. মানবিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা থেকে নিয়ে অস্ত্র, সৈন্য, রসদসহ সব ধরনের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক মুসলিমই নিজ নিজ প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্বীয় সরকারকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবে। আশা করা যায়, মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও বাহিনী এমন আত্মমর্যাদাহীন ও অনুভূতিশূন্য নয় যে এই কঠিন পরিস্থিতি অবলোকন করেও তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। অনেক সময় এমন হয় যে অনেক আত্মমর্যাদাশীল সরকারের মজলুমের সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড জনসাধারণের সামনে আসে না। তারা বিভিন্ন স্বার্থে তা অপ্রকাশ্য রাখে। কিন্তু যখন মুসলিম জনসাধারণের প্রকাশ্য সমর্থন ও দাবি সামনে আসে, তখন তারা প্রকাশ্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসার সাহস ও শক্তি পায়। তাই আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।
৬. আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে মুসলিমদের। সবচেয়ে বড় কথা হলো- আল্লাহ তাআলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে। নিজেকে সংশোধন করে আল্লাহর দিকে ফিরতে হবে মুসলিমদের। এক্ষেত্রে তাওবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। পাশাপাশি নামাজের আগে-পরে মজলুমের জন্য দোয়া করতে হবে। কোনো নামাজই যেন দোয়াবিহীন না যায়। প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো মজলুমের জন্য দোয়া করবে। ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত উভয় পদ্ধতিতেই দোয়া করা। ঈমানদারদের জন্য দোয়া অনেক বড় হাতিয়ার। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৪৩৯; মুস্তাদরাকে হাকেম: ১৮১২)
আল্লাহর পথে অটল থাকা এবং দোয়া এমনই বড় হাতিয়ার যে এর অসিলায় কোরআনের বাণীমতে ‘অনেক ছোট দলও আল্লাহর হুকুমে বড় দলকে পরাজিত করেছে!’ (সুরা বাকারা: ২৪৯)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে হাদিসে কী আছে
৭. ইসরাইলের অর্থনৈতিক কোনো উপকারে না আসা। এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হলো- মুসলিমের জন্য সকল ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা উচিত। বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ মুসলিম। যদি সবাই ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করি, তা ইসরায়েলীদের জন্য অবশ্যই একটি ভালো শিক্ষা হবে।
৮. মূলধারার মিডিয়াতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের নৃশংসতার কথা জোরালোভাবে প্রচার করার ব্যবস্থা করা।
৯. ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কঠোর করা। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থাকলে সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো যায়। আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনেকে ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মুসলিম দেশ আছে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হয়েও এখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করা উচিত।
১০. মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করা। যেমন আল্লাহ মহিমান্বিত কোরআনে সূরা আল ইমরান, ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর রজ্জুকে সবাই সম্মিলিতভাবে দৃঢ় ও শক্তভাবে ধারণ কর। তাই আমাদের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
আজকের পরিস্থিতিতে আপনি যে চিন্তাধারারই হোন না কেন, আপনি যে মাজহাবের হোন না কেন, আপনি যে দেশেরই হোন না কেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং মসজিদুল আকসার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের করণীয় কাজ সঠিকভাবে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।