ফজর নামাজ পড়ে ঘুমালে কি রিজিক কমে যায়?

ছবি: সংগৃহীত

 

ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, রাতে এশার নামাজের পর গল্পগুজব না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া। শেষ রাতে সম্ভব হলে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে পড়া। এরপর ফজরের নামাজ পড়া, জিকির করা বা কোরআন তেলাওয়াত করা। এরপর দিনের কাজ শুরু করা। এতে জীবনের বরকত লাভ হয়।

 

সাখর আল-গামিদি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) এ দোয়া করেছেন- اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)

 

সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। এতে কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। সালফে সালেহিনের মধ্য থেকে অনেকেই ফজরের পরে ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। উরওয়া ইবন জুবাইর (রহ) বলেন, জুবাইর (রা.) তাঁর সন্তানদেরকে ভোরবেলা ঘুমানো থেকে নিষেধ করতেন। উরওয়া (রহ) বলেন, إِنِّي لَأَسْمَعُ بِالرَّجُلِ يَتَصَبَّحُ فَأَزْهَدُ فِيهِ ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু বি শাইবা: ৫/২২২)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন- أتنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟ ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১)

 

যাদের ফজর নামাজের পর কোনো কাজ থাকে না, চাকরি বা ব্যবসার কাজ ৯/১০টার আগে শুরু করার নিয়ম নেই তারা সাধারণত ফজরের নামাজের পর ঘুমান। তাদের প্রতি আলেমদের পরামর্শ হচ্ছে- আপনারা ফজরের অন্তত আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পরে ঘুমাবেন এবং যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করবেন। ফজরের সালাতের পরে ঘুমালে রিজিক কমে যাবে বা রিজিকের বরকত কমে যাবে—এমন কোনো বিষয় হাদিসে আসেনি। অবশ্য ফজরের আজানের পর থেকে নামাজের পর পর্যন্ত সময়টা বরকতময়—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

তবে উত্তম হলো- সকালে না ঘুমিয়ে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া। এতে ইবাদতের শক্তি পাওয়া যায় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তাউস (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দিনে বিশ্রাম নিয়ে রাতের ইবাদতের শক্তি অর্জন করো আর সাহরি খেয়ে দিনের রোজার শক্তি অর্জন করো।’ (বায়হাকি: ৪৭৪১; মুসান্নাফে আবদির রাজজাক: ৭৬০৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ভোরে ঘুমিয়ে থাকার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রতীক তালিকায় থাকছে না শাপলা, ইসির নীতিগত সিদ্ধান্ত

» গুলি চালানোর নির্দেশের কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, এটা ট্রেলার মাত্র: তাজুল ইসলাম

» বিএসএফের গুলিতে নিহত ইব্রাহীমের বাড়িতে নাহিদ-সারজিস

» বিএসএফ খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে : এনসিপির আহ্বায়ক

» গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে : তথ্য উপদেষ্টা

» ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতীতের মতো রেজাল্ট দেয়া হবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা

» ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ ‍প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব

» ইরানের হামলার ক্ষতি দেখে ইসরায়েলের চক্ষু চড়ক গাছ!

» বেলারুশকে ঢাকায় দূতাবাস খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

» ফরিদা পারভীনকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফজর নামাজ পড়ে ঘুমালে কি রিজিক কমে যায়?

ছবি: সংগৃহীত

 

ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, রাতে এশার নামাজের পর গল্পগুজব না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া। শেষ রাতে সম্ভব হলে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে পড়া। এরপর ফজরের নামাজ পড়া, জিকির করা বা কোরআন তেলাওয়াত করা। এরপর দিনের কাজ শুরু করা। এতে জীবনের বরকত লাভ হয়।

 

সাখর আল-গামিদি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) এ দোয়া করেছেন- اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)

 

সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। এতে কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। সালফে সালেহিনের মধ্য থেকে অনেকেই ফজরের পরে ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। উরওয়া ইবন জুবাইর (রহ) বলেন, জুবাইর (রা.) তাঁর সন্তানদেরকে ভোরবেলা ঘুমানো থেকে নিষেধ করতেন। উরওয়া (রহ) বলেন, إِنِّي لَأَسْمَعُ بِالرَّجُلِ يَتَصَبَّحُ فَأَزْهَدُ فِيهِ ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু বি শাইবা: ৫/২২২)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন- أتنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟ ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১)

 

যাদের ফজর নামাজের পর কোনো কাজ থাকে না, চাকরি বা ব্যবসার কাজ ৯/১০টার আগে শুরু করার নিয়ম নেই তারা সাধারণত ফজরের নামাজের পর ঘুমান। তাদের প্রতি আলেমদের পরামর্শ হচ্ছে- আপনারা ফজরের অন্তত আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পরে ঘুমাবেন এবং যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করবেন। ফজরের সালাতের পরে ঘুমালে রিজিক কমে যাবে বা রিজিকের বরকত কমে যাবে—এমন কোনো বিষয় হাদিসে আসেনি। অবশ্য ফজরের আজানের পর থেকে নামাজের পর পর্যন্ত সময়টা বরকতময়—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

তবে উত্তম হলো- সকালে না ঘুমিয়ে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া। এতে ইবাদতের শক্তি পাওয়া যায় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তাউস (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দিনে বিশ্রাম নিয়ে রাতের ইবাদতের শক্তি অর্জন করো আর সাহরি খেয়ে দিনের রোজার শক্তি অর্জন করো।’ (বায়হাকি: ৪৭৪১; মুসান্নাফে আবদির রাজজাক: ৭৬০৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ভোরে ঘুমিয়ে থাকার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com