পাঁচবিবিতে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ছে দুইশত বিঘা জমির ধান

মোঃ বাবুল হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) সংবাদদাতাঃ  ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমির ধান। ঘটনাটি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার এনামুল মেম্বারের ইট ভাটার আশপাশের জমিগুলোর। ধানের এই ক্ষয়ক্ষতিতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। ন্যায় বিচারের দাবিসহ ভাটাটি উচ্ছেদের আকুল আবেদন করছেন সরকারের নিকট তারা।

 

শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সোনাপুর এলাকার এনামুল মেম্বারের ইটভাটার উত্তরের বোরো ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার ভাটা বন্ধ করার সময় ভাটার ভিতরে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয়। বিষাক্ত গ্যাসের ছোবলে আশপাশের ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমির বোরো ধানের গাছগুলো পুড়তে থাকে এবং ধানের শিশগুলোও পুড়ে পাতান হয়ে যাচ্ছে।

 

ধানা জমিগুলো সোনাপুর গ্রামের পশ্চিম পাশের তাতিপাড়া গ্রামের কৃষকদের। এই ক্ষতি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন এই গ্রামের কৃষকেরা। সর্বনাশা ইটভাটার মরণ কামড়ে আজ তারা দিশেহারা।

 

ক্ষেতে ধান গামর হচ্ছে, দক্ষিণা বাতাসে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আর কিছুদিন পরে ধান পাক ধরবে, ধান কাটা-মাড়াই করে স্বপ্নে দেখা ফসল তারা ঘরে তুলবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে গেলো। সর্বনাশা ভাটার গ্যাস সব স্বপ্ন নিমেষেয় ধুলিস্বাত করে দিলো এই অসহায় কৃষকদের।

ভাটার মালিকদের নিকট অভিযোগ করলে শুধু ক্ষেতে ঔষধ স্প্রে করার আশ্বাস দেন এই মালিকরা। কৃষকদের দাবি তাদের ক্ষতিপূরণ এবং ভাটাটি বন্ধ করে দেওয়ার। নতুবা আগামীতেও কোন ফসল ফলবে না এই জমিগুলোতে। শুধু ধান নই ভাটার আশপাশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন ফলের। আম গাছের অনেক আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তাতিপাড়ার কৃষক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে, ১০ বিঘা জমির ধান ভাটার গ্যাসে পুড়ে যাচ্ছে। আমি এখন কি করবো? সরকারের নিকট এর বিচার চাই।

 

একজন কৃষাণী বলেন, আমরা গরীব মানুষ, মানুষের জমি আদিবাড়ি নিয়ে ধান লাগিয়েছি। স্বামীকে নিয়ে জমিতে চাষ করেছি কিন্তু এই ভাটা আমার কি করলো? সব শেষ।

 

তাতিপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিন ও মারুফ হোসেনসহ ৭ জন কৃষক বলেন, ভাটা বন্ধ করবে, তাই ভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। একদিনের মধ্যে সব জমির ধান পুড়তে শুরু করেছে। আজ আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, কে আমাদের এই ক্ষতি পূরণ দিবে? আমরা বিচার চাই।

 

ভাটা মালিকের ছেলে আরিফ ও বাবু বলেন, আমরা যেসব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে তাদের নামের তালিকা করেছি এবং ঐতালিকাতে আমরা স্বাক্ষর করেছি। কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করেছি তাদের জমিতে যত ঔষধ লাগবে তা আমরা দিয়ে দিবো।

 

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জেনেছি, ঐমাঠে লোক পাঠানো হয়েছে। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখবো, আসলে ভাটার গ্যাসে না অতিরিক্ত গরমে ধানের ক্ষতি হচ্ছে।

এবিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরমান হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। কৃষি কর্মকর্তার নিকট জেনে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোনো স্বৈরাচার চিরকাল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না: নাহিদ

» যখনই গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে, বিএনপি সোচ্চার হয়েছে: তারেক রহমান

» রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঠাল খেলেন নাহিদ-হাসনাত-সার্জিসরা

» অবশেষে চাকরিচ্যুত সেই সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম

» খানা-খন্দে জর্জরিত বাধাল-মসনী-পিংগুড়িয়া সড়ক, দুর্ভোগে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের

» বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূল সহ দেশজুড়ে ভয়াবহ নদীভাঙন: নিঃস্ব হাজারো পরিবার

» ওয়ালটন ডিজি-টেককে অ্যাডভান্সড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সেবা দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

» জুলাই বিপ্লব স্মরণে মোরেলগঞ্জে বিএনপির সভা ও বৃক্ষ রোপন

» রেফ্রিজারেটরে অল রাউন্ড কুলিং ফিচার থাকা জরুরী কেন?

» রায়পুরে আলতাফ মাস্টার ঘাটের উন্নয়নকাজ চলমান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পাঁচবিবিতে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ছে দুইশত বিঘা জমির ধান

মোঃ বাবুল হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) সংবাদদাতাঃ  ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমির ধান। ঘটনাটি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার এনামুল মেম্বারের ইট ভাটার আশপাশের জমিগুলোর। ধানের এই ক্ষয়ক্ষতিতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। ন্যায় বিচারের দাবিসহ ভাটাটি উচ্ছেদের আকুল আবেদন করছেন সরকারের নিকট তারা।

 

শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সোনাপুর এলাকার এনামুল মেম্বারের ইটভাটার উত্তরের বোরো ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার ভাটা বন্ধ করার সময় ভাটার ভিতরে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয়। বিষাক্ত গ্যাসের ছোবলে আশপাশের ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমির বোরো ধানের গাছগুলো পুড়তে থাকে এবং ধানের শিশগুলোও পুড়ে পাতান হয়ে যাচ্ছে।

 

ধানা জমিগুলো সোনাপুর গ্রামের পশ্চিম পাশের তাতিপাড়া গ্রামের কৃষকদের। এই ক্ষতি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন এই গ্রামের কৃষকেরা। সর্বনাশা ইটভাটার মরণ কামড়ে আজ তারা দিশেহারা।

 

ক্ষেতে ধান গামর হচ্ছে, দক্ষিণা বাতাসে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আর কিছুদিন পরে ধান পাক ধরবে, ধান কাটা-মাড়াই করে স্বপ্নে দেখা ফসল তারা ঘরে তুলবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে গেলো। সর্বনাশা ভাটার গ্যাস সব স্বপ্ন নিমেষেয় ধুলিস্বাত করে দিলো এই অসহায় কৃষকদের।

ভাটার মালিকদের নিকট অভিযোগ করলে শুধু ক্ষেতে ঔষধ স্প্রে করার আশ্বাস দেন এই মালিকরা। কৃষকদের দাবি তাদের ক্ষতিপূরণ এবং ভাটাটি বন্ধ করে দেওয়ার। নতুবা আগামীতেও কোন ফসল ফলবে না এই জমিগুলোতে। শুধু ধান নই ভাটার আশপাশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন ফলের। আম গাছের অনেক আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তাতিপাড়ার কৃষক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে, ১০ বিঘা জমির ধান ভাটার গ্যাসে পুড়ে যাচ্ছে। আমি এখন কি করবো? সরকারের নিকট এর বিচার চাই।

 

একজন কৃষাণী বলেন, আমরা গরীব মানুষ, মানুষের জমি আদিবাড়ি নিয়ে ধান লাগিয়েছি। স্বামীকে নিয়ে জমিতে চাষ করেছি কিন্তু এই ভাটা আমার কি করলো? সব শেষ।

 

তাতিপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিন ও মারুফ হোসেনসহ ৭ জন কৃষক বলেন, ভাটা বন্ধ করবে, তাই ভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। একদিনের মধ্যে সব জমির ধান পুড়তে শুরু করেছে। আজ আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, কে আমাদের এই ক্ষতি পূরণ দিবে? আমরা বিচার চাই।

 

ভাটা মালিকের ছেলে আরিফ ও বাবু বলেন, আমরা যেসব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে তাদের নামের তালিকা করেছি এবং ঐতালিকাতে আমরা স্বাক্ষর করেছি। কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করেছি তাদের জমিতে যত ঔষধ লাগবে তা আমরা দিয়ে দিবো।

 

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জেনেছি, ঐমাঠে লোক পাঠানো হয়েছে। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখবো, আসলে ভাটার গ্যাসে না অতিরিক্ত গরমে ধানের ক্ষতি হচ্ছে।

এবিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরমান হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। কৃষি কর্মকর্তার নিকট জেনে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com