নয়া ফাঁদ মাছের ভেল্কি

কাগজে আঁকা মাছ গ্লাসের পানিতে ভেজালেই সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে যায়। একটির রং কালো যেটা মানুষের অশুভ ভাগ্যের ইঙ্গিত করে। আর লাল রংয়ের মাছটি সৌভাগ্যের। এভাবে কাগজে আঁকা মাছের ভেল্কিবাজির ভয়ঙ্কর প্রতারক কথিত দরবেশ হুমায়ুন কবির ওরফে মতিনের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতারক হুমায়ুন তার ভেল্কিবাজির মাধ্যমে ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হুমায়ুনের মূল টার্গেট হচ্ছে নারীরা। এ ছাড়া প্রতারক হুমায়ুনের প্রতারণার তালিকায় রয়েছেন ব্যাংক, বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন নারী কর্মকর্তা, প্রবাসীর স্ত্রী, চাকরিতে পদোন্নতি প্রত্যাশী সহ আরও অনেকেই। হুমায়ুনের কাছে প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী নারী মিরপুরের বাসিন্দা আসমা আক্তার সাথী।

তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় পরিচিত একজনের মাধ্যমে স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভণ্ড হুমায়ুনের আস্তানায় যায়।

ভুক্তভোগী নারী জানায়, তাকে ফোন দিয়ে হুমায়ুন গাজীপুরের আস্তানায় যেতে বলেন। পরবর্তীতে সেখানে গিয়ে তদবিরের নামে তার কাছ থেকে কয়েক দফায় অর্থ আত্মসাৎ করে এই কথিত দরবেশ। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা সাথী আক্তার। সম্প্রতি তার শারীরিক এবং পারিবারিক সমস্যা নিয়ে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে হুমায়ুন দরবেশের মিরপুরের আস্তানায় যান। এ সময় সাথীকে একগ্লাস পড়া পানি খেতে দেয়া হয়। শারীরিক এবং ক্যারিয়ারের উন্নতির কথা বলে সাথীকে প্রলুব্ধ করে হুমায়ুন। সাথীর সামনে বসে একটি সাদা কাগজে দুটি মাছের চিত্র আঁকে প্রতারক হুমায়ুন। মাছ আঁকা কাগজটি একটি কাঁচের গ্লাসে রাখার পর মাছ দুটি সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে যায়। হুমায়ুনের তেলেসমাতি দেখে প্রলুব্ধ হয়ে যান সাথী আক্তার। এ সময় গ্লাসের ভেতর থাকা কালো রংয়ের মাছটি সাথীর বিপদের প্রতীক এবং লাল মাছ হচ্ছে তার সৌভাগ্যের বাহক। এ সময় সাথীকে বলা হয় আগে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটি বীমা পলিসি করতে হলেও এখন নিজ থেকেই গ্রাহক তার কাছে বীমা পলিসি করতে আসবে। পরবর্তীতে সাথী আক্তারের মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার বাসায় নির্জন অন্ধকারে জিন ডাকা হয়। কথিত জিনের মাকে খুশি করলে সাথীর সকল মনের বাসনা, চাকরি এবং পারিবারিক জীবনে সফলতা আসবে বলে জানায়। এভাবে কয়েক দফায় সাথীর কাছ থেকে মোট ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক হুমায়ুন।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে কথিত দরবেশ হুমায়ুন জানায়, দুটো জীবন্ত মাছ আগে থেকেই চাদরের আড়ালে পকেটে রেখে দেয়। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে কৌশলে সেই মাছ গ্লাসের মধ্যে ছেড়ে দেয়। হুমায়ুনের প্রতারণার মূল সহযোগী হচ্ছে মালেকা বেগম নামে এক নারী। যাকে তিনি ‘পীর মা’ বলে উল্লেখ করেন। নারী গ্রাহকদের টার্গেট করে প্রতারণার হাতেখড়ি পেয়েছেন কথিত ‘পীর মা’ মালেকার কাছ থেকে। হুমায়ুনের এই প্রতারণার আরেক সহযোগী জাকারিয়া। সে বিভিন্ন রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা, হুমায়ুনের ফুট-ফরমায়েশ করে থাকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, কথিত দরবেশ প্রতারক হুমায়ুনের মূল টার্গেট হচ্ছে নারীরা। কাগজে আঁকা মাছের ভেল্কির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী মিরপুরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রযুক্তির এই উন্নতির যুগে এসেও যদি শিক্ষিত মানুষজন সচেতন না হন তাহলে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

» দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার মৃত্যু

» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নয়া ফাঁদ মাছের ভেল্কি

কাগজে আঁকা মাছ গ্লাসের পানিতে ভেজালেই সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে যায়। একটির রং কালো যেটা মানুষের অশুভ ভাগ্যের ইঙ্গিত করে। আর লাল রংয়ের মাছটি সৌভাগ্যের। এভাবে কাগজে আঁকা মাছের ভেল্কিবাজির ভয়ঙ্কর প্রতারক কথিত দরবেশ হুমায়ুন কবির ওরফে মতিনের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতারক হুমায়ুন তার ভেল্কিবাজির মাধ্যমে ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হুমায়ুনের মূল টার্গেট হচ্ছে নারীরা। এ ছাড়া প্রতারক হুমায়ুনের প্রতারণার তালিকায় রয়েছেন ব্যাংক, বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন নারী কর্মকর্তা, প্রবাসীর স্ত্রী, চাকরিতে পদোন্নতি প্রত্যাশী সহ আরও অনেকেই। হুমায়ুনের কাছে প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী নারী মিরপুরের বাসিন্দা আসমা আক্তার সাথী।

তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় পরিচিত একজনের মাধ্যমে স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভণ্ড হুমায়ুনের আস্তানায় যায়।

ভুক্তভোগী নারী জানায়, তাকে ফোন দিয়ে হুমায়ুন গাজীপুরের আস্তানায় যেতে বলেন। পরবর্তীতে সেখানে গিয়ে তদবিরের নামে তার কাছ থেকে কয়েক দফায় অর্থ আত্মসাৎ করে এই কথিত দরবেশ। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা সাথী আক্তার। সম্প্রতি তার শারীরিক এবং পারিবারিক সমস্যা নিয়ে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে হুমায়ুন দরবেশের মিরপুরের আস্তানায় যান। এ সময় সাথীকে একগ্লাস পড়া পানি খেতে দেয়া হয়। শারীরিক এবং ক্যারিয়ারের উন্নতির কথা বলে সাথীকে প্রলুব্ধ করে হুমায়ুন। সাথীর সামনে বসে একটি সাদা কাগজে দুটি মাছের চিত্র আঁকে প্রতারক হুমায়ুন। মাছ আঁকা কাগজটি একটি কাঁচের গ্লাসে রাখার পর মাছ দুটি সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে যায়। হুমায়ুনের তেলেসমাতি দেখে প্রলুব্ধ হয়ে যান সাথী আক্তার। এ সময় গ্লাসের ভেতর থাকা কালো রংয়ের মাছটি সাথীর বিপদের প্রতীক এবং লাল মাছ হচ্ছে তার সৌভাগ্যের বাহক। এ সময় সাথীকে বলা হয় আগে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটি বীমা পলিসি করতে হলেও এখন নিজ থেকেই গ্রাহক তার কাছে বীমা পলিসি করতে আসবে। পরবর্তীতে সাথী আক্তারের মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার বাসায় নির্জন অন্ধকারে জিন ডাকা হয়। কথিত জিনের মাকে খুশি করলে সাথীর সকল মনের বাসনা, চাকরি এবং পারিবারিক জীবনে সফলতা আসবে বলে জানায়। এভাবে কয়েক দফায় সাথীর কাছ থেকে মোট ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক হুমায়ুন।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে কথিত দরবেশ হুমায়ুন জানায়, দুটো জীবন্ত মাছ আগে থেকেই চাদরের আড়ালে পকেটে রেখে দেয়। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে কৌশলে সেই মাছ গ্লাসের মধ্যে ছেড়ে দেয়। হুমায়ুনের প্রতারণার মূল সহযোগী হচ্ছে মালেকা বেগম নামে এক নারী। যাকে তিনি ‘পীর মা’ বলে উল্লেখ করেন। নারী গ্রাহকদের টার্গেট করে প্রতারণার হাতেখড়ি পেয়েছেন কথিত ‘পীর মা’ মালেকার কাছ থেকে। হুমায়ুনের এই প্রতারণার আরেক সহযোগী জাকারিয়া। সে বিভিন্ন রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা, হুমায়ুনের ফুট-ফরমায়েশ করে থাকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, কথিত দরবেশ প্রতারক হুমায়ুনের মূল টার্গেট হচ্ছে নারীরা। কাগজে আঁকা মাছের ভেল্কির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী মিরপুরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রযুক্তির এই উন্নতির যুগে এসেও যদি শিক্ষিত মানুষজন সচেতন না হন তাহলে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com