নেকির পাহাড় নিয়েও লাভ হবে না যাদের

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক:নিঃস্ব বা অসহায় বলতে আমরা সেই ব্যক্তিকেই বুঝি, যার অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন ভিন্ন কথা। দুনিয়ার কোনো অভাবীকে তিনি নিঃস্ব বা অসহায় বলেননি। বরং তিনি এমন একশ্রেণির মানুষকে নিঃস্ব ও অসহায় বলেছেন, যারা পরকালে হিসাব গ্রহণের সময় আমলনামায় বিপুল পরিমাণ নেকি থাকা সত্ত্বেও তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।

 

কারণ সে দুনিয়ার জীবনে নেক আমলের পাশাপাশি কারো হক নষ্ট করেছে, কারো প্রতি জুলুম করেছে, কাউকে গালি দিয়েছে। কেয়ামতের দিন তার নেকি থেকে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে। নেকি শেষ হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের গুনাহ নিজের আমলনামায় নিতে হবে। হাদিসের ভাষ্যমতে, তারাই প্রকৃত নিঃস্ব। আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা কি জানো—কে নিঃস্ব? তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা ও  ধনদৌলত নেই, সে-ই নিঃস্ব।

 

তখন রাসুল (স.) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে (প্রকৃত) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন (দুনিয়া থেকে) নামাজ, রোজা ও জাকাতের (নেকি) নিয়ে আসবে; কিন্তু পাশাপাশি সেসব লোকেদেরও নিয়ে আসবে—যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে…; এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে—অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি; তখন তাদের গুনাহ তার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে, আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম: ২৫৮১; তিরমিজি: ২৪১৮)

 

সুতরাং অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কারো প্রতি জুলুম করা যাবে না। কাউকে গালি দেওয়া যাবে না। কাউকে মারা যাবে না। রক্তপাতের মতো ভয়াবহ গুনাহ করার তো প্রশ্নই আসে না। যারা এসব কাজ করবে, তারা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব নেকি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে পরামর্শ দিয়েছেন, যারা ভাইয়ের প্রতি অন্যায়-অবিচার করে ফেলেছে, তারা যেন আজই মাফ করিয়ে নেয়। কারণ কেয়ামতের দিন দেনা পরিশোধ করার জন্য টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ থাকবে না। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, ওই দিন আসার আগে, যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে, তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে, তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২৪৪৯)

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,  ‘জালেমরা যা করছে, সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত, যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪৩) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালে নিঃস্ব হওয়ার মতো গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সৎ-নীতিবান অফিসাররাই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার : প্রধান উপদেষ্টা

» শেখ মুজিবের ছবি বাদ দিয়েই হতে পারে নতুন ব্যাংক নোটের নকশা

» মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে সাংবাদিকদের সভা

» দুর্গাপূজায় পুলিশের নিরাপত্তা পরামর্শ

» তরুণদের জন্য ফেসবুকে পরিবর্তন আনছে মেটা

» হার্ট অ্যাটাকের আগে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় শরীরে

» শিশুর হার্ট সুস্থ রাখে এ ৫ খাবার

» বিয়ের অনুষ্ঠানের ৯ সুন্নত

» সাতক্ষীরায় বিকাশ এজেন্ট গুলিবিদ্ধ, ছিনতাইকারী আটক

» ছাত্র আন্দোলনে ইমন হত্যা মামলায় আ.লীগ-যুবলীগের দুই নেতা গ্রেফতার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নেকির পাহাড় নিয়েও লাভ হবে না যাদের

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক:নিঃস্ব বা অসহায় বলতে আমরা সেই ব্যক্তিকেই বুঝি, যার অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন ভিন্ন কথা। দুনিয়ার কোনো অভাবীকে তিনি নিঃস্ব বা অসহায় বলেননি। বরং তিনি এমন একশ্রেণির মানুষকে নিঃস্ব ও অসহায় বলেছেন, যারা পরকালে হিসাব গ্রহণের সময় আমলনামায় বিপুল পরিমাণ নেকি থাকা সত্ত্বেও তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।

 

কারণ সে দুনিয়ার জীবনে নেক আমলের পাশাপাশি কারো হক নষ্ট করেছে, কারো প্রতি জুলুম করেছে, কাউকে গালি দিয়েছে। কেয়ামতের দিন তার নেকি থেকে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে। নেকি শেষ হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের গুনাহ নিজের আমলনামায় নিতে হবে। হাদিসের ভাষ্যমতে, তারাই প্রকৃত নিঃস্ব। আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা কি জানো—কে নিঃস্ব? তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা ও  ধনদৌলত নেই, সে-ই নিঃস্ব।

 

তখন রাসুল (স.) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে (প্রকৃত) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন (দুনিয়া থেকে) নামাজ, রোজা ও জাকাতের (নেকি) নিয়ে আসবে; কিন্তু পাশাপাশি সেসব লোকেদেরও নিয়ে আসবে—যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে…; এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে—অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি; তখন তাদের গুনাহ তার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে, আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম: ২৫৮১; তিরমিজি: ২৪১৮)

 

সুতরাং অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কারো প্রতি জুলুম করা যাবে না। কাউকে গালি দেওয়া যাবে না। কাউকে মারা যাবে না। রক্তপাতের মতো ভয়াবহ গুনাহ করার তো প্রশ্নই আসে না। যারা এসব কাজ করবে, তারা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব নেকি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে পরামর্শ দিয়েছেন, যারা ভাইয়ের প্রতি অন্যায়-অবিচার করে ফেলেছে, তারা যেন আজই মাফ করিয়ে নেয়। কারণ কেয়ামতের দিন দেনা পরিশোধ করার জন্য টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ থাকবে না। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, ওই দিন আসার আগে, যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে, তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে, তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২৪৪৯)

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,  ‘জালেমরা যা করছে, সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত, যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪৩) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালে নিঃস্ব হওয়ার মতো গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com