নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে সরাসরি হাঁটাচলা নিষিদ্ধ। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানতে পারত এতে কী শাস্তি আছে, তাহলে ৪০ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা ভালো মনে করত।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা নেই, হাদিসে ৪০ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে—৪০ দিন, ৪০ মাস, নাকি ৪০ বছর! (বুখারি: ৫১০; মুসলিম: ৫০৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা ব্যক্তি যদি জানত (এর গুনাহ কতটা ভয়াবহ), তাহলে নামাজির সামনে দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায় তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯৪৬; কানজুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল: ১৯২৫২)
প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, মসজিদের প্রশস্ততা ৪০ হাতের বেশি হলে মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা বৈধ। আর ৪০ হাতের চেয়ে ছোট মসজিদে নামাজির সামনে দিয়ে সুতরা ছাড়া অতিক্রম করা বৈধ নয়। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/১৭)
তবে নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি অন্যদের যাতায়াতের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে নামাজ শুরু করার আগে সামনে সুতরা রেখে নামাজ শুরু করা সুন্নত। সুতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো এক হাত হওয়া। (মুসলিম: ৫০০)
অনেক ধরনের সুতরার কথা হাদিস থেকে প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদের খুঁটিকে, ফাঁকা ময়দানে বর্শা গেড়ে, নিজের সওয়ারি উটকে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে সুতরা বানাতেন। এছাড়াও রাসুল (স.) বিভিন্ন সময় উটের পিঠে বসার জিনপোশ (গদি), গাছ ও শোয়ার খাটকে সামনে রেখেও নামাজ পড়েছেন।
নামাজি ব্যক্তির সোজা সামনে বসা ব্যক্তির জন্য স্বীয় স্থান ত্যাগ করে উঠে যাওয়ার অনুমতি আছে, তবে প্রয়োজন ছাড়া স্থান ত্যাগ করা উচিত নয়। (রদ্দুল মুহতার: ১/৬৩৬, ইমদাদুল আহকাম: ১/৮০৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০৬)
কেননা হাদিসে অতিক্রম করা নিষেধ করা হয়েছে। আর সামনে থেকে চলে যাওয়া অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়।
কখনো নামাজি ব্যক্তির সামনে জুতার বাক্স থাকে। তাই হাত বাড়িয়ে নামাজি ব্যক্তির সামনের জুতার বাক্স থেকে জুতা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখা দরকার, যেন তার নামাজের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। সুতরার সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে একটু ডানে-বামে দাঁড়াতে বলেন অনেকে, এটিও ঠিক নয়।
কিছু মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাজরত ব্যক্তির সামনে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামাজ সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। এ ধরনের বস্তু সুতরা হিসেবে যথেষ্ট নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৫০৯)
কেউ যদি অজ্ঞতাবশত নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে তাকে হাত দিয়ে কিংবা একটু উচ্চৈঃস্বরে তাসবিহ পড়ে সতর্ক করা যাবে। তবে নামাজি ব্যক্তির জন্য এমন না করাই উত্তম। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/১৮)
অনেকে নামাজরত ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করেন, এরপর আরেক জনের সামনে সুতরা রাখেন। এভাবে তিনি একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হন। এভাবে অতিক্রম করা নাজায়েজ নয়। তবে এতে নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অবশ্য এরূপ অতিক্রম করলেও অতিক্রমকারীর গুনাহ হবে না। তবে নামাজি ব্যক্তির উচিত মানুষ যাতায়াতের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাজে দাঁড়ানো। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০৪; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১/৬৩১
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূএ: ঢাকা পোস্ট ডটকম