নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কি ওজু ভেঙে যাবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ইসলাম ডেস্ক  : ইসলামে অজু কিছু অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি উপায়। অজু ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

 

রাসুল (সা.) বলেছেন, নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৮)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না। (সহিহ বুখারি: ৬৯৫৪, সহিহ মুসলিম: ২২৫)

 

অজু ভঙ্গের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া, মুখ ভরে বমি করা, চিৎ হয়ে, কাত হয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমানো, পাগল, মাতাল বা অচেতন হওয়া ইত্যাদি।

শরীরের কোনো স্থান থেকে তরল রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়াও অজু ভঙ্গের অন্যতম কারণ। শরীরের কোনো জায়গা থেকে যদি এক ফোঁটার চেয়ে বেশি তরল রক্ত বের হয় যেটা গড়িয়ে পড়ে বা না মুছে ফেললে গড়িয়ে পড়তো এই পরিমাণ হয়, তাহলে অজু ভেঙে যাবে। নাক থেকেও গড়িয়ে পড়া পরিমাণ তরল রক্ত বের হলে অজু ভেঙে যাবে।

 

হজরত আলী (রা.) বলেন, নামাজের মধ্যে কারো বায়ুজনিত সমস্যা হলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে বা বমি হলে সে যেন নাকে হাত দিয়ে বের হয়ে গিয়ে অজু করে নেয়। এর মধ্যে যদি কথা বলে থাকে তাহলে নতুন করে নামাজ পড়বে, আর কথা না বলে থাকলে বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। (মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩৬০৭)

 

নাফে (রহ.) বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) যখন নাক দিয়ে রক্ত বের হতো, তখন তিনি নামাজ থেকে ফিরে গিয়ে অজু করতেন, তারপর ফিরে এসে বাকি নামাজ আদায় করতেন, এর মাঝে তিনি কথা বলতেন না। (মুয়াত্তা মালেক: ১১০)

তবে নাকসহ শরীরের যে কোনো জায়গা থেকে জমাট রক্ত বের হলে ওজু ভাঙবে না। নাক থেকে বের হওয়া শ্লেষ্মা বা মুখের থুথুর সাথে জমাট রক্ত দেখা গেলে অজু ভাঙবে না।

নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কি ওজু ভেঙে যাবে?

এক নজরে অজু ভঙ্গের কারণসমূহ

১. পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে পেশাব, পায়খানা, বাতাস, ক্রিমি ইত্যাদিসহ যে কোনো কিছু বের হলে অজু ভেঙে যায়।

২. শরীরে যে কোনো জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়।

৩. খাবার, পানি, রক্ত বা পিতের পানি মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যাবে। অল্প অল্প করে কয়েক বার যদি বমি হয় এবং সবগুলোর মিলিত পরিমাণ যদি মুখ ভরে কৃত বমির সমান হয়, তাহলেও অজু ভেঙে যায়।

৪. দাঁত বা মাড়ি থেকে অল্প রক্ত বের হলে অজু ভাঙবে না। কিন্তু যদি বেশি রক্ত বের হয়, থুথু ফেললে যদি দেখা যায় থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি, তাহলে অজু ভেঙে যায়।

৫. যৌনাঙ্গ থেকে মযী (অর্থাৎ যৌন উত্তেজনার সময় বীর্য বের হওয়ার আগে সাধারণত যা নির্গত হয়) বের হলে অজু ভেঙে যায়।

৬. নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে ইস্তেহাযার রক্ত বের হলে অজু ভেঙে যায়। (হায়েয নেফাস ছাড়া কোনো অসুস্থতার কারণে নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে তাকে ইস্তেহাযা বলা হয়।)

৭. নারীদের স্তন থেকে দুধ ছাড়া অন্য কিছু যেমন রক্ত, পূজ বা শরীরের রস বের হলে অজু ভেঙে যায়।

 

৮. নারীরা নিজেদের যৌনাঙ্গে আঙুল প্রবেশ করালে অজু ভেঙে যায়।

 

৯. পেছনের রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হতে পারে এমনভাবে ঘুমালে, কিছুক্ষণ বেহুশ থাকলে বা উন্মাদ থাকলে অজু ভেঙে যায়।

১০. নামাযের মধ্যে অট্টহাসি হাসলে অজু ভেঙে যায়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি মৌলিক সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করছে: আখতার

» জামায়াতের সমাবেশে অংশ নেবে ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী, ১০ হাজার বাস রিজার্ভ

» কোনো মাফিয়ার স্থান থাকবে না বাংলাদেশে: নাহিদ ইসলাম

» পাঁচ দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফিরছেন জামায়াত নেতারা

» মার্চ টু গোপালগঞ্জ ঘোষণা সারজিসের

» বাংলাদেশকে তিন বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার করে দেবে বিশ্বব্যাংক

» সোহাগকে আ. লীগ কর্মী বানাতে চেয়েছিলেন মহিন, হত্যার পর স্লোগান দিচ্ছিলেন ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে

» আজ সেই মানুষগুলো ঢাকার আকাশে, দিল্লির বিরুদ্ধে আমাদের জয় তো এখানেই

» ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকা

» মেঘনা আলমের নেতৃত্বে শুরু হলো ‘মিস বাংলাদেশ ইমপ্যাক্ট ফোরাম’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কি ওজু ভেঙে যাবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ইসলাম ডেস্ক  : ইসলামে অজু কিছু অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি উপায়। অজু ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

 

রাসুল (সা.) বলেছেন, নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৮)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না। (সহিহ বুখারি: ৬৯৫৪, সহিহ মুসলিম: ২২৫)

 

অজু ভঙ্গের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া, মুখ ভরে বমি করা, চিৎ হয়ে, কাত হয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমানো, পাগল, মাতাল বা অচেতন হওয়া ইত্যাদি।

শরীরের কোনো স্থান থেকে তরল রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়াও অজু ভঙ্গের অন্যতম কারণ। শরীরের কোনো জায়গা থেকে যদি এক ফোঁটার চেয়ে বেশি তরল রক্ত বের হয় যেটা গড়িয়ে পড়ে বা না মুছে ফেললে গড়িয়ে পড়তো এই পরিমাণ হয়, তাহলে অজু ভেঙে যাবে। নাক থেকেও গড়িয়ে পড়া পরিমাণ তরল রক্ত বের হলে অজু ভেঙে যাবে।

 

হজরত আলী (রা.) বলেন, নামাজের মধ্যে কারো বায়ুজনিত সমস্যা হলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে বা বমি হলে সে যেন নাকে হাত দিয়ে বের হয়ে গিয়ে অজু করে নেয়। এর মধ্যে যদি কথা বলে থাকে তাহলে নতুন করে নামাজ পড়বে, আর কথা না বলে থাকলে বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। (মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩৬০৭)

 

নাফে (রহ.) বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) যখন নাক দিয়ে রক্ত বের হতো, তখন তিনি নামাজ থেকে ফিরে গিয়ে অজু করতেন, তারপর ফিরে এসে বাকি নামাজ আদায় করতেন, এর মাঝে তিনি কথা বলতেন না। (মুয়াত্তা মালেক: ১১০)

তবে নাকসহ শরীরের যে কোনো জায়গা থেকে জমাট রক্ত বের হলে ওজু ভাঙবে না। নাক থেকে বের হওয়া শ্লেষ্মা বা মুখের থুথুর সাথে জমাট রক্ত দেখা গেলে অজু ভাঙবে না।

নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কি ওজু ভেঙে যাবে?

এক নজরে অজু ভঙ্গের কারণসমূহ

১. পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে পেশাব, পায়খানা, বাতাস, ক্রিমি ইত্যাদিসহ যে কোনো কিছু বের হলে অজু ভেঙে যায়।

২. শরীরে যে কোনো জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়।

৩. খাবার, পানি, রক্ত বা পিতের পানি মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যাবে। অল্প অল্প করে কয়েক বার যদি বমি হয় এবং সবগুলোর মিলিত পরিমাণ যদি মুখ ভরে কৃত বমির সমান হয়, তাহলেও অজু ভেঙে যায়।

৪. দাঁত বা মাড়ি থেকে অল্প রক্ত বের হলে অজু ভাঙবে না। কিন্তু যদি বেশি রক্ত বের হয়, থুথু ফেললে যদি দেখা যায় থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি, তাহলে অজু ভেঙে যায়।

৫. যৌনাঙ্গ থেকে মযী (অর্থাৎ যৌন উত্তেজনার সময় বীর্য বের হওয়ার আগে সাধারণত যা নির্গত হয়) বের হলে অজু ভেঙে যায়।

৬. নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে ইস্তেহাযার রক্ত বের হলে অজু ভেঙে যায়। (হায়েয নেফাস ছাড়া কোনো অসুস্থতার কারণে নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে তাকে ইস্তেহাযা বলা হয়।)

৭. নারীদের স্তন থেকে দুধ ছাড়া অন্য কিছু যেমন রক্ত, পূজ বা শরীরের রস বের হলে অজু ভেঙে যায়।

 

৮. নারীরা নিজেদের যৌনাঙ্গে আঙুল প্রবেশ করালে অজু ভেঙে যায়।

 

৯. পেছনের রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হতে পারে এমনভাবে ঘুমালে, কিছুক্ষণ বেহুশ থাকলে বা উন্মাদ থাকলে অজু ভেঙে যায়।

১০. নামাযের মধ্যে অট্টহাসি হাসলে অজু ভেঙে যায়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com