নবজাতকের বিপদ চিহ্ন

ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম:  সুস্থ শিশু পিতামাতার জীবনের চরম প্রাপ্তি। কিছু কিছু শিশু জন্মগতভাবে ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আবার কখনো সুস্থভাবে জন্মানোর পর সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। নবজাতকের কিছু বিপজ্জনক উপসর্গ অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নবজাতককে ভালো রাখা যায়। যেমন:

(১) জন্মের ১ মিনিটের মধ্যে করে কান্না না করা:
শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠা স্বাভাবিক কিন্ত যদি শিশুটি কাঁদতে দেরি করে (অর্থাৎ ১ মিনিট পর) তাহলে বুঝতে হবে নবজাতকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এই শিশুটি জন্মের পরই অথবা বড় বেলায় কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কখনো নবজাতক দেখতে সুস্থ লাগে, তখন আমরা ভুলে যাই এই শিশুইি জন্মের (১) মিনিট পর কান্না করেছে। ভবিষ্যতের বিপদের কথা চিন্তা করে শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।

মনে রাখতে হবে কাঁদতে দেরি যত বেশি বিপদের মাত্রা ততই বেশি।

(২) নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া:
কোনো নবজাতকের ঠোঁট, নাকের ডগা এবং কানের লতি যদি নীল হয়ে যায় বা জন্ম থেকেই নীল হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে নবজাতকটি মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন। যদি নবজাতকের শরীর গরম রাখার পরও নীলচে থেকে গোলাপী না হয়, তখন ধরে নিতে হবে অবশ্যই তার কোনো না কোনো সমস্যা আছে। এমতাবস্থায় নবজাতককে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যদি সদ্যজাত শিশুটি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে না পারে তাহলে হাতের তালু, পায়ের তালু এবং পিঠের শিঁড় দাঁড়ায় আস্তে আস্তে ডলতে হবে।

(৩) নবজতকের শ্বাসকষ্ট:
নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া, নিঃশ্বাস নিতে গেলে বুক ও পেটের মাঝখানে বা কণ্ঠনালী ভিতরের দিকে দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেয়া, শ্বাস বন্ধ থাকা ইত্যাদি থাকলে বুঝতে হবে শিশুটি অসুস্থ এবং যেকোনো সময় নবজাতকের বড় বিপদ হতে পারে। এমতাবস্থায় নবজাতককে অতি দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

(৪) নবজাতকের খিঁচুনি: নবজাতকের ক্ষেত্রে জোরে জোরে হাত পা ঝাঁকানো ছাড়াও চোখ উল্টিয়ে, চোখের কালো মণি ভিতরে ঢুকে গিয়ে চোখের সাদা অংশ বাহিরের দিকে চলে আসা, নবজাতক একদিকে বাঁকা ও শক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় থাকা, মণি স্থির থাকা, শরীরে কোনো অংশ একটানা অস্বাভাবিকভাবে নড়তে থাকা খিঁচুনির লক্ষণ।

(৫) নবজাতকের নড়াচড়া কমে যাওয়া:
নবজাতক নড়াচড়া কম করলে বড় বিপদ মনে করতে হবে। সাধারণত রক্তের মধ্যে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমনটি হয়। এছাড়া দেখতে বেশি শান্ত লাগা বা না কাঁদা এমনকি আদর করলেও সাড়া দিচ্ছে না, বুকের দুধ টেনে খেতে কষ্ট হচ্ছে বা খেতে পারছে না বা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, গরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলেও তার হাত পা ও তার শরীর গরম হচ্ছে না, তাহলে এটিকে সম্ভাব্য বিপদ মনে করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

(৬) নবজাতকের বমি:
যদি মনে হয় নবজাতক খেতে দিলেই বমি করছে বা কাশি উঠছে এবং তা যদি থুথুর মতো বা কাশির মতো মিশ্রিত বমি হয় তাহলে বিপদ চিহ্ন। এছাড়া যদি বমির সঙ্গে রক্ত যায় তাহলে এটিও মারাত্মক বিপদ চিহ্ন।
(৭) সময়ের আগে নবজাতকের আগমন বা অপরিণত শিশু:
এসব শিশুরা নানা সমস্যায় সম্মুখীন হয়ে থাকে। এদের দ্রুত ইনফেকশন হয়, এরা দ্রুত ঠাণ্ডা বা নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব একজন শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

(৮) শিশুর জন্মগত ত্রুটি:
কিছু ত্রুটি শিশুকে দেখে মোটেই বুঝা যায় না যেমন- হার্ট বা লিভারের সমস্যা। আবার কখনো একটি ত্রুটির সঙ্গে অন্য ত্রুটি লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই শিশুকে দেখে ত্রুটি আছে মনে হলে তাকে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

লেখক,কনসালটেন্ট, শিশু বিভাগরাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার:
(১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার
শাহ্‌ মখদুম, রাজশাহী।
(২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষীপুর, রাজশাহী।
মোবাইাল: ০১৯৮৪১৪৯০৪৯

সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

» দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার মৃত্যু

» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নবজাতকের বিপদ চিহ্ন

ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম:  সুস্থ শিশু পিতামাতার জীবনের চরম প্রাপ্তি। কিছু কিছু শিশু জন্মগতভাবে ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আবার কখনো সুস্থভাবে জন্মানোর পর সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। নবজাতকের কিছু বিপজ্জনক উপসর্গ অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নবজাতককে ভালো রাখা যায়। যেমন:

(১) জন্মের ১ মিনিটের মধ্যে করে কান্না না করা:
শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠা স্বাভাবিক কিন্ত যদি শিশুটি কাঁদতে দেরি করে (অর্থাৎ ১ মিনিট পর) তাহলে বুঝতে হবে নবজাতকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এই শিশুটি জন্মের পরই অথবা বড় বেলায় কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কখনো নবজাতক দেখতে সুস্থ লাগে, তখন আমরা ভুলে যাই এই শিশুইি জন্মের (১) মিনিট পর কান্না করেছে। ভবিষ্যতের বিপদের কথা চিন্তা করে শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।

মনে রাখতে হবে কাঁদতে দেরি যত বেশি বিপদের মাত্রা ততই বেশি।

(২) নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া:
কোনো নবজাতকের ঠোঁট, নাকের ডগা এবং কানের লতি যদি নীল হয়ে যায় বা জন্ম থেকেই নীল হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে নবজাতকটি মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন। যদি নবজাতকের শরীর গরম রাখার পরও নীলচে থেকে গোলাপী না হয়, তখন ধরে নিতে হবে অবশ্যই তার কোনো না কোনো সমস্যা আছে। এমতাবস্থায় নবজাতককে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যদি সদ্যজাত শিশুটি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে না পারে তাহলে হাতের তালু, পায়ের তালু এবং পিঠের শিঁড় দাঁড়ায় আস্তে আস্তে ডলতে হবে।

(৩) নবজতকের শ্বাসকষ্ট:
নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া, নিঃশ্বাস নিতে গেলে বুক ও পেটের মাঝখানে বা কণ্ঠনালী ভিতরের দিকে দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেয়া, শ্বাস বন্ধ থাকা ইত্যাদি থাকলে বুঝতে হবে শিশুটি অসুস্থ এবং যেকোনো সময় নবজাতকের বড় বিপদ হতে পারে। এমতাবস্থায় নবজাতককে অতি দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

(৪) নবজাতকের খিঁচুনি: নবজাতকের ক্ষেত্রে জোরে জোরে হাত পা ঝাঁকানো ছাড়াও চোখ উল্টিয়ে, চোখের কালো মণি ভিতরে ঢুকে গিয়ে চোখের সাদা অংশ বাহিরের দিকে চলে আসা, নবজাতক একদিকে বাঁকা ও শক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় থাকা, মণি স্থির থাকা, শরীরে কোনো অংশ একটানা অস্বাভাবিকভাবে নড়তে থাকা খিঁচুনির লক্ষণ।

(৫) নবজাতকের নড়াচড়া কমে যাওয়া:
নবজাতক নড়াচড়া কম করলে বড় বিপদ মনে করতে হবে। সাধারণত রক্তের মধ্যে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমনটি হয়। এছাড়া দেখতে বেশি শান্ত লাগা বা না কাঁদা এমনকি আদর করলেও সাড়া দিচ্ছে না, বুকের দুধ টেনে খেতে কষ্ট হচ্ছে বা খেতে পারছে না বা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, গরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলেও তার হাত পা ও তার শরীর গরম হচ্ছে না, তাহলে এটিকে সম্ভাব্য বিপদ মনে করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

(৬) নবজাতকের বমি:
যদি মনে হয় নবজাতক খেতে দিলেই বমি করছে বা কাশি উঠছে এবং তা যদি থুথুর মতো বা কাশির মতো মিশ্রিত বমি হয় তাহলে বিপদ চিহ্ন। এছাড়া যদি বমির সঙ্গে রক্ত যায় তাহলে এটিও মারাত্মক বিপদ চিহ্ন।
(৭) সময়ের আগে নবজাতকের আগমন বা অপরিণত শিশু:
এসব শিশুরা নানা সমস্যায় সম্মুখীন হয়ে থাকে। এদের দ্রুত ইনফেকশন হয়, এরা দ্রুত ঠাণ্ডা বা নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব একজন শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

(৮) শিশুর জন্মগত ত্রুটি:
কিছু ত্রুটি শিশুকে দেখে মোটেই বুঝা যায় না যেমন- হার্ট বা লিভারের সমস্যা। আবার কখনো একটি ত্রুটির সঙ্গে অন্য ত্রুটি লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই শিশুকে দেখে ত্রুটি আছে মনে হলে তাকে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

লেখক,কনসালটেন্ট, শিশু বিভাগরাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার:
(১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার
শাহ্‌ মখদুম, রাজশাহী।
(২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষীপুর, রাজশাহী।
মোবাইাল: ০১৯৮৪১৪৯০৪৯

সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com