ছবি সংগৃহীত
রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হাওলাদার (৩০) গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় ইজিবাইক নিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে চালাতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি। শত চেষ্টা করেও শাহাদাতের ফোন বন্ধ পায় তার পরিবার।
পরদিন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি শাহাদাতের ফোন থেকে কল করে তার পরিবারকে জানায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানাধীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পরিবার তার মরদেহ সনাক্ত করে।
এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম (৪০) মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নম্বর-২৮) দায়ের করেন। পরে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ ছিনতাইকারী চক্রের সাতজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের দাবি, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় শাহাদাতকে ব্রিজ থেকে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে তার ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব-১০ অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন শাহাদাত। তিনি দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া করে ইজিবাইক চালাতেন। গত ২৩ এপ্রিল যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই শাহাদাতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। ফলে বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে পরিবার। পরদিন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি কল করে তাদের জানালে তার মরদেহ উদ্ধার ও মামলা হয়।
তিনি আরও বলেন, সিরাজদিখান থানা পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসে শাহাদাতের মাথা, মুখ ও কপালে জখমের বিষয়টি। পরে তার মরদেহ মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় র্যাব-১০ এর একটি দল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. জুয়েল বেপারী (২৭) ও হত্যায় সরাসরি জড়িত মো. সাজ্জাদ শেখ (২৩), মো. ইসমাইল হোসেন (২৩), মো. লিমন মাতুব্বর (২১), মো. সোহাগ (২০) ও রোমান শিকদারসহ (১৮) সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তাররা শাহাদাতকে হত্যা করার পর ইজিবাইকটি মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান বসবাসরত মো. জাকির হোসেনের নিকট বিক্রি করে দেয়।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, র্যাব-১০ এর একটি দল শনিবার (২৯ এপ্রিল) ভোরে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় অপর অভিযানে মো. জাকিরকে (৪০) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে তার গ্যারেজ থেকে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকসহ মোট ৬টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে চালক শাহাদাতকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসমাইল ও সোহাগ মিলে মাওয়া ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশে ঘণ্টায় ৩২০ টাকা হিসেবে শাহাদাতের ইজিবাইকটি ভাড়া নেয়। এসময় তারা ইজিবাইকটি ঈদের পরদিন ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী, ঈদের দিন তারা শাহাদতকে ১৯০০ টাকা ভাড়া দেয় এবং পরদিন তারা আবারও ঘুরতে যাবে বলে জুয়েল তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর চেয়ে নেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন ২৩ এপ্রিল তারা শাহাদাতকে কল করে কদমতলীর লাবনী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে আনে।
সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে উঠে এবং কিছুক্ষণ পর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন কালীগঞ্জের খালপাড় থেকে ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা। পরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা শেষে ফেরার পথে রাত ১১টার দিকে সিরাজদিখান থানাধীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজে উঠে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করার ফাঁকে জুয়েল, সাজ্জাদ, ইসমাইল ও লিমন শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন।
এসময় শাহাদাত চিৎকার করলে জুয়েল তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায় শাহাদাত অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা তাকে ব্রিজের ওপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে তার ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি গ্যারেজ মালিক জাকিরের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানায়, তিনি ওই চক্রের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি ক্রয় করেন। এছাড়া এ চক্রটির কাছ থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে চোরাই-ছিনতাই করা ইজিবাইক-অটো রিকশা কম দামে কিনে সেগুলোর রং-কাঠামো পরিবর্তন করে বিক্রয় করত। গ্রেপ্তার জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব ঘটনাগুলো থানায় মামলা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে। তবে অনেকক্ষেত্রেই থানায় রিপোর্ট করা হয় না। সময়মতো ভুক্তভোগীরা থানায় রিপোর্ট করলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সূএ: ঢাকা পোস্ট ডটকম