তরুণীকে হত্যা, রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় ঘাতকদের গ্রেফতার

স্বামীর নির্যাতনে তালাক দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারলেন না নাটোর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মীম আক্তার (২১) নামে এক তরুণী। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যার ৫ ঘণ্টার মধ্যেই সাবেক স্বামী মো. রাজু (২৫) ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে নাটোর সদর থানা পুলিশ। রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

 

শনিবার সকাল ১০টার দিকে নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়। বাবার বাড়িতেই তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে সাবেক স্বামী রাজু। এসময় বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন মনিষা (১৪)।

 

নিহত মীম আক্তার একই এলাকার আব্দুল মমিনের মেয়ে। অভিযুক্ত রাজু প্রামানিক শহরের বড়গাছা বুড়াদরগা এলাকার সুজন প্রামানিকের ছেলে।

 

এলাকাবাসী জানান, রাজুর সাথে বছর পাঁচেক আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মীমের। বিয়ের পর থেকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো তাকে। রাইসা নামে তাদের চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়েটিকে স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচাতে ৪ মাস আগে তালাক দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন মা চামেলি বেগম। মেয়ের ও নাতনির খরচ চালাতে টিএমএসএস কলেজে চাকরি শুরু করেন তিনি। তালাক দেওয়ার এক মাসের মাথায় সাথী নামে এক নারীকে বিয়েও করে রাজু।

 

ইতিমধ্যে মীমের বড় দুলাভাই আ. হান্নান তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে। এ খবর জানার পর  মীমকে দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে অন্যত্র বিয়ে করলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল সাবেক স্বামী রাজু।

 

এরই মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেয়েটিকে রাজু তার এক সহযোগীকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মীম আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

নিহত মীমের ছোট বোন মনিষা খাতুন বলেন, চোখের সামনে বড় বোনের ওপর হামলা হতে দেখেছি। বোনকে বাঁচাতে পারেননি। রাজু ও তার সহযোগী বোনকে ছুরিকাঘাত করার সময় এগিয়ে গেলে হেলমেট দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি হাতে ছুরিকাঘাত করে তাকে। পরে হামলাকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

 

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পরই নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য নাটোর সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়েই সাথে সাথে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মনসুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) আবু সাদাদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নামে। শনিবার বিকেল ৩টায় জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বামিহাল এলাকা থেকে রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাজু এবং তার সহযোগী শহরের দক্ষিণ বড়গাছা এলাকার রতন আলীর ছেলে তানজিমকে (১৬) গ্রেফতার করা হয়।

 

নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহমদ জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মীমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত মীমের মা বাদী হয়ে গ্রেফতার দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

 

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে আসামিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আরেক দলের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার জন্য জুলাই বিপ্লব হয়নি: নাহিদ

» বেড়েছে স্বর্ণের দাম

» ‘জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় ব্যর্থতা’

» যারা প্রোফাইল লাল করেছিল তাদের জীবন লাল করে দেবে আ. লীগ, সতর্ক করলেন পার্থ

» উপদেষ্টা পরিষদের যে ‘ফিটনেস’, তা দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয়: নুর

» ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলকে লক্ষ্য রেখে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন: সিইসি

» বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই, আছে ছিনতাইকারী: ডিএমপি কমিশনার

» ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান

» গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্য বজায় রাখার ডাক খালেদা জিয়ার

» নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি পরিবর্তন চায় : মির্জা ফখরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

তরুণীকে হত্যা, রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় ঘাতকদের গ্রেফতার

স্বামীর নির্যাতনে তালাক দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারলেন না নাটোর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মীম আক্তার (২১) নামে এক তরুণী। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হত্যার ৫ ঘণ্টার মধ্যেই সাবেক স্বামী মো. রাজু (২৫) ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে নাটোর সদর থানা পুলিশ। রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

 

শনিবার সকাল ১০টার দিকে নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়। বাবার বাড়িতেই তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে সাবেক স্বামী রাজু। এসময় বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন মনিষা (১৪)।

 

নিহত মীম আক্তার একই এলাকার আব্দুল মমিনের মেয়ে। অভিযুক্ত রাজু প্রামানিক শহরের বড়গাছা বুড়াদরগা এলাকার সুজন প্রামানিকের ছেলে।

 

এলাকাবাসী জানান, রাজুর সাথে বছর পাঁচেক আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মীমের। বিয়ের পর থেকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো তাকে। রাইসা নামে তাদের চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়েটিকে স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচাতে ৪ মাস আগে তালাক দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন মা চামেলি বেগম। মেয়ের ও নাতনির খরচ চালাতে টিএমএসএস কলেজে চাকরি শুরু করেন তিনি। তালাক দেওয়ার এক মাসের মাথায় সাথী নামে এক নারীকে বিয়েও করে রাজু।

 

ইতিমধ্যে মীমের বড় দুলাভাই আ. হান্নান তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে। এ খবর জানার পর  মীমকে দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে অন্যত্র বিয়ে করলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল সাবেক স্বামী রাজু।

 

এরই মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেয়েটিকে রাজু তার এক সহযোগীকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মীম আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

নিহত মীমের ছোট বোন মনিষা খাতুন বলেন, চোখের সামনে বড় বোনের ওপর হামলা হতে দেখেছি। বোনকে বাঁচাতে পারেননি। রাজু ও তার সহযোগী বোনকে ছুরিকাঘাত করার সময় এগিয়ে গেলে হেলমেট দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি হাতে ছুরিকাঘাত করে তাকে। পরে হামলাকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

 

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পরই নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য নাটোর সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়েই সাথে সাথে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মনসুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) আবু সাদাদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নামে। শনিবার বিকেল ৩টায় জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বামিহাল এলাকা থেকে রক্তমাখা পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাজু এবং তার সহযোগী শহরের দক্ষিণ বড়গাছা এলাকার রতন আলীর ছেলে তানজিমকে (১৬) গ্রেফতার করা হয়।

 

নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহমদ জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মীমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত মীমের মা বাদী হয়ে গ্রেফতার দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

 

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে আসামিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com