টেলিমেডিসিন সেবার নামে স্বামী-স্ত্রীর অভিনব প্রতারণা

টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) ও তার স্ত্রী মোসা. মৌসুমী খাতুন। বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

 

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, ৪টি মোবাইল সিম, ১৩টি ফেসবুক আইডি ও ৩টি হোয়াটসঅ্যাপ আইডি জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার  দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

 

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আবু সাঈদ নামে এক ব্যক্তি জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইডব্লিউ ভিলা মেডিকার চিফ লিগ্যাল অফিসার। এ প্রতিষ্ঠানটি এসথেটিক এবং রিজেনারেটিভ বিষয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। সম্প্রতি তিনি দেখতে পান ফেসবুকে তার প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. তাসনিম খানের নাম পদবি ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসা প্রদানের বিজ্ঞাপন। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় আবু সাঈদ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে এ চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

858585

তিনি বলেন, চর্ম ও যৌন রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারক চক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা দেশের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত। কখনো চিকিৎসক কখনো চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলত তারা। কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত। সরাসরি রোগী দেখালে দুই হাজার টাকা ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দেখালে এক হাজার টাকা করে নিত তারা। এভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী দেখতেন স্বামী-স্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, তারা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রেসক্রিপশন প্রদান ও ওষুধ বিক্রি করত। তারা ফেসবুকে জনপ্রিয় ডাক্তার ডা. তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানদের নাম পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সেবার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এছাড়া, কৌশলে বিভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে এডিটিং করে আপত্তিকর ছবি তৈরির পর ম্যাসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।

 

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ হলে আমাদের জানাতে পারেন। অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৪ বিভাগে ভারি বৃষ্টির শঙ্কা

» বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’

» খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা

» প্রেসক্রিপশন বয়স্কদের সুষম খাদ্য

» বাংলাদেশের মানবাধিকার চর্চার প্রচেষ্টায় ইইউয়ের প্রতিনিধি দলের প্রশংসা

» মালয়েশিয়া হালাল শোকেসের ২১তম আসরে বাংলাদেশ

» আজ মুখোমুখি শ্রীলংকা-আফগানিস্তান, যে সমীকরণের সামনে টাইগাররা

» রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ১১জন গ্রেফতার

» ইয়াবাসহ নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক

» চরাঞ্চলে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

টেলিমেডিসিন সেবার নামে স্বামী-স্ত্রীর অভিনব প্রতারণা

টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) ও তার স্ত্রী মোসা. মৌসুমী খাতুন। বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

 

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, ৪টি মোবাইল সিম, ১৩টি ফেসবুক আইডি ও ৩টি হোয়াটসঅ্যাপ আইডি জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার  দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

 

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আবু সাঈদ নামে এক ব্যক্তি জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইডব্লিউ ভিলা মেডিকার চিফ লিগ্যাল অফিসার। এ প্রতিষ্ঠানটি এসথেটিক এবং রিজেনারেটিভ বিষয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। সম্প্রতি তিনি দেখতে পান ফেসবুকে তার প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. তাসনিম খানের নাম পদবি ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসা প্রদানের বিজ্ঞাপন। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় আবু সাঈদ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে এ চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

858585

তিনি বলেন, চর্ম ও যৌন রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারক চক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা দেশের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত। কখনো চিকিৎসক কখনো চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলত তারা। কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত। সরাসরি রোগী দেখালে দুই হাজার টাকা ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দেখালে এক হাজার টাকা করে নিত তারা। এভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী দেখতেন স্বামী-স্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, তারা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রেসক্রিপশন প্রদান ও ওষুধ বিক্রি করত। তারা ফেসবুকে জনপ্রিয় ডাক্তার ডা. তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানদের নাম পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সেবার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এছাড়া, কৌশলে বিভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে এডিটিং করে আপত্তিকর ছবি তৈরির পর ম্যাসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।

 

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ হলে আমাদের জানাতে পারেন। অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com