জান্নাতি মানুষ দুনিয়াতে মাজলুম

দুনিয়ার মোহ, ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যায় না। জান্নাতিরা মূলত দুনিয়াতে মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য থাকেন পাগলপারা। তাই স্বভাবতই তারা দুনিয়ায় তুলনামূলক দুর্বল থাকেন এবং জুলুমেরও শিকার হয়ে থাকেন।

 

হারিসা ইবনে ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি—

 

‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হবে দুনিয়াতে দুর্বল, মাজলুম। তারা যদি কোন কথায় আল্লাহর ওপর কসম করে ফেলে, তবে আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করে দেন। আর যারা জাহান্নামে যাবে তারা হবে অবাধ্য, ঝগড়াটে ও অহংকারী।’ (বুখারি: ৬২০২)

 

আল্লাহ তাআলা ওসব জান্নাতিদের মহৎ এক গুণের প্রশংসা করেন। সেটি হচ্ছে, তারা ভুল করলে দ্রুত তওবা করেন। গুনাহের ওপর অটল থাকেন না। কোরআনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে—

 

‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা (এর দ্বারা) নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে (তাদের) গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দিবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

 

ওসব দুর্বল ও মাজলুম মানুষগুলো দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করার গুণে গুণান্বিত থাকবেন এবং সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করবেন। তারা মহান মালিকের সন্তুষ্টি ও পরকালীন আকর্ষণকেই অগ্রাধিকার দেবেন সব বিষয়ে, সব কিছুতে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন—

 

‘নারী জাতির প্রতি, সন্তান-সন্ততির প্রতি ভালোবাসা, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা-রূপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও জমিনের ফসল (সব সময়ই) মানুষের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে। (আসলে) এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী মাত্র। উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই। হে নবী! আপনি (তাদের) বলুন, আমি কি তোমদের এগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? যারা আল্লাহকে ভয় করে, এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পুত-পবিত্র সঙ্গী ও সঙ্গিনীরা। সর্বোপরি থাকবে আল্লাহ তাআলার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহ নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৪-১৫)

 

মূলত দুনিয়াবি জীবনে ওসব মুমিনরাই নেককার। আর নেককারদের জন্যই জান্নাত। `যারাই আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান আনবে এবং নেককাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ৮২)

কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা, জান্নাতবাসীদের জীবনাচারসহ বিশদ আলোচনা করার কারণ হলো- মানুষ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের ধন-সম্পদ, চাকচিক্য, আরাম-আয়েশের পেছনে না ছুটে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রতি মোহ তৈরি করবে। ইসলামি বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আখেরাতের সাফল্যলাভে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন। জান্নাতিদের সঙ্গী হিসেবে কবুল করুন। প্রকৃত মুমিনের গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান: ডিএমপি কমিশনার

» গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করে শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

» বাসে তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় তৈরি পাইপ গানসহ দুই যাত্রী গ্রেপ্তার

» সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাসান আরিফের জানাজা সম্পন্ন

» উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’

» ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ কনসার্ট ঘিরে যান চলাচলে নির্দেশনা

» সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু

» বেইলি ব্রিজ ভেঙে তুরাগ ন‌দে ট্রাক, বিকল্প পথে চলার অনুরোধ

» সড়ক ও পরিবহন খাতে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» ক‍্যানবেরায় ১২ প্রবাসীকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জান্নাতি মানুষ দুনিয়াতে মাজলুম

দুনিয়ার মোহ, ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যায় না। জান্নাতিরা মূলত দুনিয়াতে মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য থাকেন পাগলপারা। তাই স্বভাবতই তারা দুনিয়ায় তুলনামূলক দুর্বল থাকেন এবং জুলুমেরও শিকার হয়ে থাকেন।

 

হারিসা ইবনে ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি—

 

‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হবে দুনিয়াতে দুর্বল, মাজলুম। তারা যদি কোন কথায় আল্লাহর ওপর কসম করে ফেলে, তবে আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করে দেন। আর যারা জাহান্নামে যাবে তারা হবে অবাধ্য, ঝগড়াটে ও অহংকারী।’ (বুখারি: ৬২০২)

 

আল্লাহ তাআলা ওসব জান্নাতিদের মহৎ এক গুণের প্রশংসা করেন। সেটি হচ্ছে, তারা ভুল করলে দ্রুত তওবা করেন। গুনাহের ওপর অটল থাকেন না। কোরআনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে—

 

‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা (এর দ্বারা) নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে (তাদের) গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দিবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

 

ওসব দুর্বল ও মাজলুম মানুষগুলো দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করার গুণে গুণান্বিত থাকবেন এবং সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করবেন। তারা মহান মালিকের সন্তুষ্টি ও পরকালীন আকর্ষণকেই অগ্রাধিকার দেবেন সব বিষয়ে, সব কিছুতে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন—

 

‘নারী জাতির প্রতি, সন্তান-সন্ততির প্রতি ভালোবাসা, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা-রূপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও জমিনের ফসল (সব সময়ই) মানুষের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে। (আসলে) এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী মাত্র। উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই। হে নবী! আপনি (তাদের) বলুন, আমি কি তোমদের এগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? যারা আল্লাহকে ভয় করে, এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পুত-পবিত্র সঙ্গী ও সঙ্গিনীরা। সর্বোপরি থাকবে আল্লাহ তাআলার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহ নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৪-১৫)

 

মূলত দুনিয়াবি জীবনে ওসব মুমিনরাই নেককার। আর নেককারদের জন্যই জান্নাত। `যারাই আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান আনবে এবং নেককাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ৮২)

কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা, জান্নাতবাসীদের জীবনাচারসহ বিশদ আলোচনা করার কারণ হলো- মানুষ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের ধন-সম্পদ, চাকচিক্য, আরাম-আয়েশের পেছনে না ছুটে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রতি মোহ তৈরি করবে। ইসলামি বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আখেরাতের সাফল্যলাভে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন। জান্নাতিদের সঙ্গী হিসেবে কবুল করুন। প্রকৃত মুমিনের গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com