গণহত্যা ও ইতিহাসের সত্য

তোফায়েল আহমেদ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে- যে ভাষণটি আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা- একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার এক মোহনায় দাঁড় করিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বক্তৃতায় তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলিতে আমরা অক্ষরে অক্ষরে সেসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। ’৭১-এর ১ মার্চ যে অসহযোগ আন্দোলনের শুরু, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছি। বাংলার মানুষ এককাতারে দাঁড়িয়ে ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে আসন্ন জনযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।

 

মধ্য মার্চে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে যখন বঙ্গবন্ধুর সংলাপ চলে, তখন প্রতিদিনই আমাদের চারজনকে- যারা আমরা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে মুজিব বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি- মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমাকে প্রতি রাতেই ব্রিফ করতেন যে কী হয়েছে, কী ঘটছে এবং কী হতে চলেছে। তিনি কখনই মনে করেননি সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খানের সময় দরকার, আমারও সময় দরকার। তোমরা প্রস্তুতি নাও। আমি আক্রান্ত হব। কিন্তু আক্রমণকারী হব না। যখনই ওরা আক্রমণ করবে এবং আমরা আক্রান্ত হব, তখনই পৃথিবীর মানুষ বুঝবে স্বাধীনতা ঘোষণা করা ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প ছিল না।’ ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। আসগর খান তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান সফরে গিয়ে আমি অবাক হয়েছি। কারণ পাকিস্তানের চিহ্ন আমি পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও দেখিনি। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া।’ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে আসগর খান জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এরপর কী হতে পারে?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খান আসবে। তার সঙ্গে অর্থনীতিবিদ আসবে। প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এম এম আহমেদ আসবে। তার সঙ্গে বিচারপতি কর্নেলিয়াস আসবে। আরও কিছু লোক আসবে এবং এসে আমার সঙ্গে আলোচনা করবে। কিন্তু এ আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। একদিন সে বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ করবে এবং সেদিনই পাকিস্তানের সমাধি রচিত হবে।’ ২৩ মার্চ আমরা ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি। ’৭১-এর ২৫ মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মনে পড়ে, ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল ওসমানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ডু ইউ থিংক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘নো, আই থিংক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ।’ তখন ওসমানী সাহেব পুনরায় প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো ২৩ মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কি কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু করতে পারে। তার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না।’ কি নিখুঁত হিসাব বঙ্গবন্ধুর। হিসাব করেই তিনি বলেছিলেন ২৫ মার্চই পাকিস্তানিরা ক্র্যাকডাউন করবে।

 

আমার স্মৃতির পাতায় সেই ২৫ মার্চের কথা মনে পড়ে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে শিল্পপতি শ্রদ্ধেয় জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে আমরা একটা গাড়ি চেয়ে নিয়েছিলাম। এ গাড়ির পেছনে আমাদের ব্যাগ থাকত। আমরা তৈরি থাকতাম, কোন সময় কী ঘটে। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, ‘প্রস্তুত থেক’। যুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা গেলে আমরা কোথায় থাকব? ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ বঙ্গবন্ধু আমাদের ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছেন। সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা। ২৫ মার্চ বহু লোক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসেছেন। অনেকেই অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু, ৩২ নম্বরের বাসভবন ত্যাগ করেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ওরা যদি আমাকে না পায়, ঢাকা শহরকে ওরা তছনছ করবে। লাখ লাখ লোককে ওরা হত্যা করবে। আমি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি এভাবে অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি না। আমি আমার বাড়িতেই থাকব। কারণ আমি আমার জীবন বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। জীবন এবং মৃত্যু একসঙ্গে। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য মৃত্যুকে বারবার আলিঙ্গন করেছি। এবারও আমি এখানেই থাকব। আমার দেশ যে স্বাধীন হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ বঙ্গবন্ধু সবার শুভ কামনা করে বিদায় জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা যাও, আমার যা করার আমি করেছি।’ আমার মনে আছে ২৫ তারিখ তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যিই আমার জীবন সার্থক। আমি যা চেয়েছিলাম আজ তা-ই হতে চলেছে। এই তো প্রথম বাঙালিরা বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পেরেছে। আজ আমার কথামতো, আমার নির্দেশিত পথে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। আজ আমি যা বলি মানুষ তা পালন করে। আমার অসহযোগ আন্দোলন সার্থক ও সফল হয়েছে।’ আমরা যখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, ওরা তো আপনাকে গ্রেফতার করবে। আপনাকে হত্যাও করতে পারে। উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমাকে গ্রেফতার করে, হত্যা করে ওদের লাভ হবে না। ওরা আগেও আমাকে গ্রেফতার করেছিল। ওদের লাভ হয়নি। এবারও আমাকে গ্রেফতার করুক, হত্যা করুক ওদের লাভ হবে না। আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। আমার মৃত্যুর পরে কেউ যদি আমার মৃতদেহ দেখে, দেখবে আমার মুখে হাসি। আমার জীবন সার্থক। কারণ, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হতে চলেছে।’ আমি এবং মণি ভাই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি আমাদের দুজনের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া ও আশীর্বাদ করেন। কোথায় গেলে অর্থ ও সাহায্য পাব সেসব বলে আমাদের কপালে চুমু দিয়ে বিদায় দেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন যাচ্ছি তখন রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। সেগুনবাগিচার একটি প্রেসে মণি ভাই লিফলেট ছাপতে দিয়েছিলেন। সেগুনবাগিচা গেলাম। জহিরুল ইসলাম সাহেবের গাড়িটা তার বাসায় পৌঁছে দিলাম। রাস্তায় গাড়ি চালানোর মতো অবস্থা নেই। আমরা পায়ে হেঁটে মণি ভাইয়ের বাসায় গেলাম। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে শুরু হয় ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা নগরীর নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বর পাকবাহিনী ট্যাংক ও ভারী অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামানের গোলা, মর্টারের শেল আর মেশিনগানের ভয়াল গর্জনে রাত ১২টার পর পুরো নগরীই জাহান্নামে পরিণত হয়। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। শুরু হয় বাঙালি নিধনে গণহত্যা। চারদিকে শুধু বিকট আওয়াজ। লক্ষাধিক লোককে এক রাতেই হত্যা করেছে পাকবাহিনী। রাতে ওখানেই ছিলাম আমরা। ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইয়াহিয়া খান বলেন, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘মুজিব ইজ এ ট্রেইটর। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিশড।’ বক্তৃতায় তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আরও আগেই আমার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল। এদের নেতাদের আগেই আমার গ্রেফতার করা উচিত ছিল।’ পরদিন ২৭ মার্চে যখন দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ প্রত্যাহৃত হলো তখন আমরা ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা বোরহানউদ্দিন গগনের- যিনি পরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন- বাড়িতে আশ্রয় নিই। কেরানীগঞ্জে দুই রাত থাকার পর ২৯ মার্চ আমি, মণি ভাই, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান সাহেব এবং আমাদের বন্ধু ’৭০-এ নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. আবু হেনাসহ- যিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় যে পথে কলকাতা গিয়েছিলেন এবং এসেছিলেন, সেই পথে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন- আমরা প্রথমে দোহার-নবাবগঞ্জ, পরে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া হয়ে বালুরঘাট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি ৪ এপ্রিল, বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সেই ‘সানি ভিলা’য় আশ্রয় গ্রহণ করি। মার্চের ২৫ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত কালপর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে নয় মাসব্যাপী বর্বর গণহত্যা পরিচালনা করে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নীলনকশায় ঢাকার চারটি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দসহ ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগ নেতা চিশতী হেলালুর রহমান ও জাফর আহমদসহ জগন্নাথ হলের অনেক ছাত্রকে হত্যা করে। এ ছাড়া রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আওতাভুক্ত। ’৭১-এর গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে তৎকালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা হেরাল্ড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ লোককে হত্যা করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ’৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ংকর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ড্যান কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, We can kill anyone for anything. We are accountable to no one. বিশ্বখ্যাত এ পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল, It is the most incredible, calculated thing since the days of the Nazis in Poland. আন্তর্জাতিক মহলের মতে ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘৩ মিলিয়ন’ বা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এ সংখ্যার সমর্থন রয়েছে Encyclopedia Americana  এবং National Geographic Magazine-এ। এসব রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাজি বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। এ গণহত্যা সম্পর্কে পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলি তার ডায়রিতে লিখেছেন, paint the green of East Pakistan red. অর্থাৎ তিনি বাংলার সবুজ মাঠকে লাল করে দেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হেরাল্ড ট্রিবিউন ’৭১-এর ১ জুন লিখেছে, ‘পাকিস্তানের গণহত্যা থেকে রেহাই পেতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু মুসলমান এবং অন্যরা স্রোতের মতো ভারতে চলে আসছে।’ মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভের এক মাস পর ২৬ এপ্রিল নিউজউইক লিখছে, ‘ইসলামাবাদ হাইকমান্ডের নির্দেশে সৈন্যরা পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং নেতৃত্ব প্রদানে সম্ভাবনাময় এমন সব লোককে পাইকারিহারে হত্যা করছে।’ রবার্ট পেইন তাঁর Massacre গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানকে উদ্ধৃত করে লেখেন, Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. ’৮১ সালে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, Among the genocides of human history, the highest number of people killed in lower span of time is in Bangladesh in 1971. An average of 6000 (six thousand) to 12000 (twelve thousand) people were killed every single day. …This is the highest daily average in the history of genocides. এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে গণহত্যা তদন্তে পাকিস্তানে যে ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ গঠিত হয়েছিল, সে কমিশন তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশে গণহত্যার কথা স্বীকার করে দায়ীদের বিচারের কথা বলেছে।

 

স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভার কথা। সে অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম প্রধান অতিথি। সেখানে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন এ দিনটিকে কেন আমরা ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করি না সে প্রশ্ন তুলে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেদিনের সভায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ দুজন বিদেশি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন তাঁরা এ দিনটির যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন তাতে আমি বিব্রত ও লজ্জিত হয়েছি এই ভেবে যে কেন আমরা এ দিনটিকে এত দিন ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করিনি। আমি অকপটে স্বীকার করি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। বহুবিধ কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস এক্সপ্লোডেড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছে। যে বইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে যে ২৫ মার্চের গণহত্যার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী। তারাই নিরীহ-নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সভাস্থলে জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটির পাতা উল্টে যখন দেখছিলাম তখন বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে! ’৭১-এর গণহত্যাকে ভিন্ন খাতে চালিত করার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকেই অপকর্ম করে থাকে। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে এজন্য আমাদের দেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দায়ী। বিশেষ করে যেদিন বিএনপি নেত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছিলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে তার প্রশ্ন আছে’, সেদিন থেকে অনেকেই শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর লেখা পত্র প্রকাশের সাহস পেয়েছে। জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটিতে যে কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে, দেখলে অবাক হতে হয়! বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ’৭১-এর গণহত্যার যেসব ছবি মুদ্রিত হয়েছে, সেসব ছবি বইটিতে সংকলিত হয়েছে এবং প্রতিটি ছবির নিচে লেখা হয়েছে- এসব হত্যাকাণ্ড মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট। বইটিতে ইতিহাসের এসব মিথ্যাচার দেখে আমার মন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিনই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করি এবং উক্ত বই থেকে উদ্ধৃত করে বক্তৃতায় বলি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হোক। সেদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন এবং একটি দিন নির্ধারণ করে আলোচনার প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। মাননীয় স্পিকার ১১ মার্চ শনিবার আলোচনার দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবের ওপর ৫৬ জন এমপি দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার আগে পিনপতন নীরবতার মধ্যে গণহত্যার ১৮ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ দেখে জাতীয় সংসদে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করে দীর্ঘ ২৫ মিনিট আবেগাপ্লুত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও উন্নত হচ্ছে। কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না।’ এরপর সর্বসম্মতক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জেল-জুলুম-হুলিয়ার মুখেও অবিচল থেকে ইতিহাসের সত্য ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রেখেছেন বলেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ২১ তারিখে উদ্বোধন হলো দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ তথা মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই এক এক করে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রজেক্টগুলো। আজ ভাবতে ভালো লাগছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়ের কাছে কোনো দিন মাথা নত করেননি। পিতার মতোই অসীম দুঃসাহসে সব ধরনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছেন বলেই শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

[email protected]

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

» দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার মৃত্যু

» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

গণহত্যা ও ইতিহাসের সত্য

তোফায়েল আহমেদ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে- যে ভাষণটি আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা- একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার এক মোহনায় দাঁড় করিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বক্তৃতায় তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলিতে আমরা অক্ষরে অক্ষরে সেসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। ’৭১-এর ১ মার্চ যে অসহযোগ আন্দোলনের শুরু, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছি। বাংলার মানুষ এককাতারে দাঁড়িয়ে ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে আসন্ন জনযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।

 

মধ্য মার্চে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে যখন বঙ্গবন্ধুর সংলাপ চলে, তখন প্রতিদিনই আমাদের চারজনকে- যারা আমরা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে মুজিব বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি- মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমাকে প্রতি রাতেই ব্রিফ করতেন যে কী হয়েছে, কী ঘটছে এবং কী হতে চলেছে। তিনি কখনই মনে করেননি সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খানের সময় দরকার, আমারও সময় দরকার। তোমরা প্রস্তুতি নাও। আমি আক্রান্ত হব। কিন্তু আক্রমণকারী হব না। যখনই ওরা আক্রমণ করবে এবং আমরা আক্রান্ত হব, তখনই পৃথিবীর মানুষ বুঝবে স্বাধীনতা ঘোষণা করা ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প ছিল না।’ ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। আসগর খান তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান সফরে গিয়ে আমি অবাক হয়েছি। কারণ পাকিস্তানের চিহ্ন আমি পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও দেখিনি। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া।’ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে আসগর খান জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এরপর কী হতে পারে?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইয়াহিয়া খান আসবে। তার সঙ্গে অর্থনীতিবিদ আসবে। প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এম এম আহমেদ আসবে। তার সঙ্গে বিচারপতি কর্নেলিয়াস আসবে। আরও কিছু লোক আসবে এবং এসে আমার সঙ্গে আলোচনা করবে। কিন্তু এ আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। একদিন সে বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ করবে এবং সেদিনই পাকিস্তানের সমাধি রচিত হবে।’ ২৩ মার্চ আমরা ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি। ’৭১-এর ২৫ মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মনে পড়ে, ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল ওসমানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ডু ইউ থিংক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘নো, আই থিংক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ।’ তখন ওসমানী সাহেব পুনরায় প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো ২৩ মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কি কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু করতে পারে। তার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না।’ কি নিখুঁত হিসাব বঙ্গবন্ধুর। হিসাব করেই তিনি বলেছিলেন ২৫ মার্চই পাকিস্তানিরা ক্র্যাকডাউন করবে।

 

আমার স্মৃতির পাতায় সেই ২৫ মার্চের কথা মনে পড়ে। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে শিল্পপতি শ্রদ্ধেয় জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে আমরা একটা গাড়ি চেয়ে নিয়েছিলাম। এ গাড়ির পেছনে আমাদের ব্যাগ থাকত। আমরা তৈরি থাকতাম, কোন সময় কী ঘটে। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, ‘প্রস্তুত থেক’। যুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা গেলে আমরা কোথায় থাকব? ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ বঙ্গবন্ধু আমাদের ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছেন। সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা। ২৫ মার্চ বহু লোক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসেছেন। অনেকেই অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু, ৩২ নম্বরের বাসভবন ত্যাগ করেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ওরা যদি আমাকে না পায়, ঢাকা শহরকে ওরা তছনছ করবে। লাখ লাখ লোককে ওরা হত্যা করবে। আমি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি এভাবে অন্য জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি না। আমি আমার বাড়িতেই থাকব। কারণ আমি আমার জীবন বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। জীবন এবং মৃত্যু একসঙ্গে। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য মৃত্যুকে বারবার আলিঙ্গন করেছি। এবারও আমি এখানেই থাকব। আমার দেশ যে স্বাধীন হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ বঙ্গবন্ধু সবার শুভ কামনা করে বিদায় জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা যাও, আমার যা করার আমি করেছি।’ আমার মনে আছে ২৫ তারিখ তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যিই আমার জীবন সার্থক। আমি যা চেয়েছিলাম আজ তা-ই হতে চলেছে। এই তো প্রথম বাঙালিরা বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পেরেছে। আজ আমার কথামতো, আমার নির্দেশিত পথে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। আজ আমি যা বলি মানুষ তা পালন করে। আমার অসহযোগ আন্দোলন সার্থক ও সফল হয়েছে।’ আমরা যখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, ওরা তো আপনাকে গ্রেফতার করবে। আপনাকে হত্যাও করতে পারে। উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমাকে গ্রেফতার করে, হত্যা করে ওদের লাভ হবে না। ওরা আগেও আমাকে গ্রেফতার করেছিল। ওদের লাভ হয়নি। এবারও আমাকে গ্রেফতার করুক, হত্যা করুক ওদের লাভ হবে না। আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। আমার মৃত্যুর পরে কেউ যদি আমার মৃতদেহ দেখে, দেখবে আমার মুখে হাসি। আমার জীবন সার্থক। কারণ, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হতে চলেছে।’ আমি এবং মণি ভাই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি আমাদের দুজনের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া ও আশীর্বাদ করেন। কোথায় গেলে অর্থ ও সাহায্য পাব সেসব বলে আমাদের কপালে চুমু দিয়ে বিদায় দেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন যাচ্ছি তখন রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। সেগুনবাগিচার একটি প্রেসে মণি ভাই লিফলেট ছাপতে দিয়েছিলেন। সেগুনবাগিচা গেলাম। জহিরুল ইসলাম সাহেবের গাড়িটা তার বাসায় পৌঁছে দিলাম। রাস্তায় গাড়ি চালানোর মতো অবস্থা নেই। আমরা পায়ে হেঁটে মণি ভাইয়ের বাসায় গেলাম। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে শুরু হয় ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা নগরীর নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বর পাকবাহিনী ট্যাংক ও ভারী অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামানের গোলা, মর্টারের শেল আর মেশিনগানের ভয়াল গর্জনে রাত ১২টার পর পুরো নগরীই জাহান্নামে পরিণত হয়। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। শুরু হয় বাঙালি নিধনে গণহত্যা। চারদিকে শুধু বিকট আওয়াজ। লক্ষাধিক লোককে এক রাতেই হত্যা করেছে পাকবাহিনী। রাতে ওখানেই ছিলাম আমরা। ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইয়াহিয়া খান বলেন, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘মুজিব ইজ এ ট্রেইটর। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিশড।’ বক্তৃতায় তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আরও আগেই আমার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল। এদের নেতাদের আগেই আমার গ্রেফতার করা উচিত ছিল।’ পরদিন ২৭ মার্চে যখন দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ প্রত্যাহৃত হলো তখন আমরা ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা বোরহানউদ্দিন গগনের- যিনি পরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন- বাড়িতে আশ্রয় নিই। কেরানীগঞ্জে দুই রাত থাকার পর ২৯ মার্চ আমি, মণি ভাই, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান সাহেব এবং আমাদের বন্ধু ’৭০-এ নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. আবু হেনাসহ- যিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় যে পথে কলকাতা গিয়েছিলেন এবং এসেছিলেন, সেই পথে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন- আমরা প্রথমে দোহার-নবাবগঞ্জ, পরে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া হয়ে বালুরঘাট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি ৪ এপ্রিল, বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সেই ‘সানি ভিলা’য় আশ্রয় গ্রহণ করি। মার্চের ২৫ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত কালপর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে নয় মাসব্যাপী বর্বর গণহত্যা পরিচালনা করে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নীলনকশায় ঢাকার চারটি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দসহ ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগ নেতা চিশতী হেলালুর রহমান ও জাফর আহমদসহ জগন্নাথ হলের অনেক ছাত্রকে হত্যা করে। এ ছাড়া রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আওতাভুক্ত। ’৭১-এর গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে তৎকালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা হেরাল্ড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ লোককে হত্যা করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ’৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ংকর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ড্যান কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, We can kill anyone for anything. We are accountable to no one. বিশ্বখ্যাত এ পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল, It is the most incredible, calculated thing since the days of the Nazis in Poland. আন্তর্জাতিক মহলের মতে ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘৩ মিলিয়ন’ বা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এ সংখ্যার সমর্থন রয়েছে Encyclopedia Americana  এবং National Geographic Magazine-এ। এসব রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাজি বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। এ গণহত্যা সম্পর্কে পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলি তার ডায়রিতে লিখেছেন, paint the green of East Pakistan red. অর্থাৎ তিনি বাংলার সবুজ মাঠকে লাল করে দেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হেরাল্ড ট্রিবিউন ’৭১-এর ১ জুন লিখেছে, ‘পাকিস্তানের গণহত্যা থেকে রেহাই পেতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু মুসলমান এবং অন্যরা স্রোতের মতো ভারতে চলে আসছে।’ মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভের এক মাস পর ২৬ এপ্রিল নিউজউইক লিখছে, ‘ইসলামাবাদ হাইকমান্ডের নির্দেশে সৈন্যরা পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং নেতৃত্ব প্রদানে সম্ভাবনাময় এমন সব লোককে পাইকারিহারে হত্যা করছে।’ রবার্ট পেইন তাঁর Massacre গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানকে উদ্ধৃত করে লেখেন, Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. ’৮১ সালে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, Among the genocides of human history, the highest number of people killed in lower span of time is in Bangladesh in 1971. An average of 6000 (six thousand) to 12000 (twelve thousand) people were killed every single day. …This is the highest daily average in the history of genocides. এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে গণহত্যা তদন্তে পাকিস্তানে যে ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ গঠিত হয়েছিল, সে কমিশন তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশে গণহত্যার কথা স্বীকার করে দায়ীদের বিচারের কথা বলেছে।

 

স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভার কথা। সে অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম প্রধান অতিথি। সেখানে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন এ দিনটিকে কেন আমরা ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করি না সে প্রশ্ন তুলে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেদিনের সভায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ দুজন বিদেশি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন তাঁরা এ দিনটির যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন তাতে আমি বিব্রত ও লজ্জিত হয়েছি এই ভেবে যে কেন আমরা এ দিনটিকে এত দিন ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করিনি। আমি অকপটে স্বীকার করি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। বহুবিধ কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস এক্সপ্লোডেড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছে। যে বইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে যে ২৫ মার্চের গণহত্যার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী। তারাই নিরীহ-নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সভাস্থলে জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটির পাতা উল্টে যখন দেখছিলাম তখন বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে! ’৭১-এর গণহত্যাকে ভিন্ন খাতে চালিত করার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকেই অপকর্ম করে থাকে। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে এজন্য আমাদের দেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দায়ী। বিশেষ করে যেদিন বিএনপি নেত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছিলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে তার প্রশ্ন আছে’, সেদিন থেকে অনেকেই শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর লেখা পত্র প্রকাশের সাহস পেয়েছে। জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটিতে যে কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে, দেখলে অবাক হতে হয়! বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ’৭১-এর গণহত্যার যেসব ছবি মুদ্রিত হয়েছে, সেসব ছবি বইটিতে সংকলিত হয়েছে এবং প্রতিটি ছবির নিচে লেখা হয়েছে- এসব হত্যাকাণ্ড মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট। বইটিতে ইতিহাসের এসব মিথ্যাচার দেখে আমার মন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিনই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করি এবং উক্ত বই থেকে উদ্ধৃত করে বক্তৃতায় বলি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হোক। সেদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন এবং একটি দিন নির্ধারণ করে আলোচনার প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। মাননীয় স্পিকার ১১ মার্চ শনিবার আলোচনার দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবের ওপর ৫৬ জন এমপি দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার আগে পিনপতন নীরবতার মধ্যে গণহত্যার ১৮ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ দেখে জাতীয় সংসদে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করে দীর্ঘ ২৫ মিনিট আবেগাপ্লুত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও উন্নত হচ্ছে। কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না।’ এরপর সর্বসম্মতক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জেল-জুলুম-হুলিয়ার মুখেও অবিচল থেকে ইতিহাসের সত্য ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রেখেছেন বলেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ২১ তারিখে উদ্বোধন হলো দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ তথা মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই এক এক করে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রজেক্টগুলো। আজ ভাবতে ভালো লাগছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়ের কাছে কোনো দিন মাথা নত করেননি। পিতার মতোই অসীম দুঃসাহসে সব ধরনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছেন বলেই শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

[email protected]

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com