কিশোরদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় কি?

ছবি সংগৃহীত

 

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

 

প্রশ্ন হলো- কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় কি না। এর উত্তর জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে কিশোর কী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে কৈশোর বলা হয়। অর্থাৎ এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের কিশোর-কিশোরী বলা হয়। কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হলো- বালেগ হওয়া। যে কিশোর বালেগ হয়নি, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। ইসলামে বালেগের ওপরই কেবল শরিয়তের বিধি-বিধান আরোপিত হয়। আমরা জানি, ১০ থেকে ১৯ বছরের যেকোনো সময়ে বয়ঃসন্ধিকাল আসতে পারে তথা বালেগ হতে পারে।

 

কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালেগ হতে হবে। সেইসঙ্গে আরও কিছু শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। যেমন- সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া, স্বাধীন হওয়া, মুকিম হওয়া এবং কোরবানির দিনগুলোতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকা। এখান থেকে একটি শর্ত বাদ গেলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। কোরবানির নিসাব জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, বরং শুধু কোরবানির তিনদিন (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬২)

 

সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্র থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। (মাবসুতে সারাখসি: ১২/৮, রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৫)

কোরবানি অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনও আমল আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয় নয়। কেয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি করো।’ (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)

 

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না, তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য আছে, তবু সে কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১)

 

প্রসঙ্গত, আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই দেখা যায়, একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু কর্তার নামেই কোরবানি করা হয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এতে সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না। আপনার ফরজ নামাজ অন্যকেউ পড়লে যেমন আপনারটা আদায় হবে না, তদ্রূপ আপনার ওয়াজিব কোরবানি ততক্ষণ আদায় হবে না, যতক্ষণ নিজেও কোরবানি করছেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, কোনো ব্যক্তি অন্যকারও বোঝা বহন করবে না। (সুরা নাজম: ৩৮)

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানি সংক্রান্ত সকল মাসায়েল জানার বুঝার এবং সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।   সূএ:ঢাকা মেইল  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘ব্যাংক লুট ও বিদেশে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে’

» বাংলাদেশের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে: মির্জা ফখরুল

» টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

» ‘খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন, এর দায় সরকারের নয়’

» পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধের ৩১৪ কোটি টাকার বেশি গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী

» আম রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী

» মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্য অস্ত্রসহ আটক

» কৃষককে কুপিয়ে হত্যা

» আজকের খেলা

» সেন্টমার্টিন নিয়ে গুজবে কান দেবেন না: বিজিবি মহাপরিচালক

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কিশোরদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় কি?

ছবি সংগৃহীত

 

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

 

প্রশ্ন হলো- কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় কি না। এর উত্তর জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে কিশোর কী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে কৈশোর বলা হয়। অর্থাৎ এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের কিশোর-কিশোরী বলা হয়। কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হলো- বালেগ হওয়া। যে কিশোর বালেগ হয়নি, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। ইসলামে বালেগের ওপরই কেবল শরিয়তের বিধি-বিধান আরোপিত হয়। আমরা জানি, ১০ থেকে ১৯ বছরের যেকোনো সময়ে বয়ঃসন্ধিকাল আসতে পারে তথা বালেগ হতে পারে।

 

কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালেগ হতে হবে। সেইসঙ্গে আরও কিছু শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। যেমন- সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া, স্বাধীন হওয়া, মুকিম হওয়া এবং কোরবানির দিনগুলোতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকা। এখান থেকে একটি শর্ত বাদ গেলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। কোরবানির নিসাব জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, বরং শুধু কোরবানির তিনদিন (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬২)

 

সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্র থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। (মাবসুতে সারাখসি: ১২/৮, রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৫)

কোরবানি অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনও আমল আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয় নয়। কেয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি করো।’ (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)

 

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না, তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য আছে, তবু সে কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১)

 

প্রসঙ্গত, আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই দেখা যায়, একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু কর্তার নামেই কোরবানি করা হয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এতে সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না। আপনার ফরজ নামাজ অন্যকেউ পড়লে যেমন আপনারটা আদায় হবে না, তদ্রূপ আপনার ওয়াজিব কোরবানি ততক্ষণ আদায় হবে না, যতক্ষণ নিজেও কোরবানি করছেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, কোনো ব্যক্তি অন্যকারও বোঝা বহন করবে না। (সুরা নাজম: ৩৮)

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানি সংক্রান্ত সকল মাসায়েল জানার বুঝার এবং সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।   সূএ:ঢাকা মেইল  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com