কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ফাইল ফটো

 

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে নানা অনুষ্ঠানে তার ভক্ত-শুভার্থীরা কামনা করেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন বাংলাদেশে। তবে মানুষের সেই প্রার্থনা পূরণ হয়নি। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। হুমায়ূন নেই কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের লাশ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ ও ‘নয় নম্বর বিপদসংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।

হুমায়ুন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লিতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশ পল্লির ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বুধবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লিতে কোরআন তেলাওয়াত করবে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবে। ঐ দিনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন গতকাল রাতেই নুহাশ পল্লিতে পৌঁছে গেছে। এছাড়া কথা সাহিত্যিকের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেবেন। দুপুরে মিলাদ মাহফিল শেষে এতিম শিশু ও শিক্ষার্থীদের খাদ্য বিতরণ করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাতে পারছি না: মামুনুল হক

» সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

» নির্বাচনের আগে এসপি-ওসিদের বদলি হবে লটারির মাধ্যমে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» ব্র্যাক ব্যাংকে ইয়াং লিডারদের গ্র্যাজুয়েশন উদ্‌যাপিত

» হত্যাচেষ্টার মামলায় বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার

» বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২

» বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের একটি দেশ: সালাহউদ্দিন

» তারেক রহমানের সঙ্গে ১২ দলের নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক শুক্রবার

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ

» সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ফাইল ফটো

 

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে নানা অনুষ্ঠানে তার ভক্ত-শুভার্থীরা কামনা করেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন বাংলাদেশে। তবে মানুষের সেই প্রার্থনা পূরণ হয়নি। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। হুমায়ূন নেই কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের লাশ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ ও ‘নয় নম্বর বিপদসংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।

হুমায়ুন আহমেদের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লিতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশ পল্লির ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বুধবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লিতে কোরআন তেলাওয়াত করবে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবে। ঐ দিনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন গতকাল রাতেই নুহাশ পল্লিতে পৌঁছে গেছে। এছাড়া কথা সাহিত্যিকের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেবেন। দুপুরে মিলাদ মাহফিল শেষে এতিম শিশু ও শিক্ষার্থীদের খাদ্য বিতরণ করা হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com