ঈদ ঘিরে মিরপুরে হিজড়াদের চাঁদাবাজির হিড়িক

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুরে হিজড়াদের বেশুমার চাঁদাবজি চলছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মিরপুরের আনাচে-কানাচে চাঁদার জন্য ছুটছেন তারা। হাটে মাঠে ঘাটে যেন হিজড়াদেরই দৌরাত্ম্য। গত সাত দিন মিরপুর ১, ২, ১০, ১১, ১২ নম্বর ঘুরে ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেছে।  সূএ: যুগান্তর

শনিবার রাত ৮টায় মিরপুর ১২ নম্বরের মি. বেকার নামে একটি ফাস্টফুড দোকানে গিয়ে হাজির ১৫ জনের একটি হিজড়ার দল। এ সময় দোকানের ভেতর কয়েকজন ক্রেতা ছিলেন। হিজড়াদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সেখান থেকে সরে যান।

 

সুরমা নামের এক হিজড়া দোকানের ম্যানেজারের কাছে ঈদ সেলামি বাবদ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যানেজার আপত্তির সুরে কিছু বলতে চাইলে হিজড়ারা চিরাচরিত অশোভন ও বাজে অঙ্গভঙ্গি দিয়ে শোরগোল শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। অনেক হিজড়া দোকানের মেঝেতে শুয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন। অনেকে দোকানে সেলফি তোলেন।  এরপর হাততালি দিয়ে গান গাওয়া শুরু করেন তারা।

দোকানের এক কর্মচারী এ সময় বাধা দিতে গেলে তার জামা-কাপড় টেনে তাকেও নাজেহাল করেন হিজড়ারা।  দোকানের ম্যানেজার পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে বের হয়ে যান।

 

তখন হিজড়ারা ম্যানেজারের পিছু নেয়। কিছুক্ষণ পর দোকান ম্যানেজার এক হাজার টাকা দিয়ে বিদায় দিতে চাইলে হিজড়ারা ঘোর আপত্তি জানায়। হিজড়া দলের সর্দার রেশমা ম্যানেজারকে জানান ২০ হাজার টাকার কম এক টাকাও তারা নেবে না। আধা ঘণ্টা পর আবার আসবে টাকার জন্য। ম্যানেজারকে টাকা রেডি রাখতে বলে চলে যায়। এরপর পাশের কয়েকটি শপিংমল, বেবি শপ, ফাস্টফুড ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় হিজড়ারা।  এ সময় অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করে হিজড়ার দল।

 

গত ১০ এপ্রিল মিরপুর ১২ নম্বর বি ব্লকের একটি বায়িং হাউসে ঈদ সেলামির টাকা আনতে যায় হিজড়ারা। ওই সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির মালিক অফিসে ছিলেন না। অফিসের পিয়ন বেলাল মোবাইল ফোনে হিজড়াদের ব্যাপারে তার মালিককে জানান। এরপর বেলাল ৫০০ টাকা দিয়ে হিজড়াদের চলে যেতে বললে তারা (হিজড়ারা) অরাজগতা শুরু করেন। অফিসে  হামলা চালায়। পিয়ন একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে এক হিজড়াকে ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে পেটানো শুরু করেন। আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করলে হিজড়ারা পালিয়ে যায়।

 

মিরপুরের ১২ নম্বর বি ব্লকের ৪নং রোডের কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান, চলতি মাসে বাসা ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ করেছেন বাড়ির মালিকরা। হিজড়াদের ঈদ বখশিস হিসেবে এ টাকা দেওয়া হবে বলে ভাড়াটিয়াদের জানিয়েছেন বাড়ির মালিকরা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা রুপম জানান, মিরপুর ১১ নম্বরের বেশিরভাগ মার্কেটের দোকান থেকে সাপ্তাহিক টাকা নেয় হিজড়ারা। অনেকে খুশি হয়ে তাদেরকে টাকা দেয়। হিজড়াদের সাপ্তাহিক  টাকা দিতে দিতে ব্যবসায়ীদের সয়ে গেছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে হিজড়াদের রেট বেড়েছে। যারা নিয়মিত টাকা দেয় তাদের কাছেও ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা চাইছে। ঈদকে সামনে রেখে তারা কয়েক কোটি টাকা কালেকশন করবে। মিরপুরে এক হিজড়া সর্দারের বাড়ি-গাড়িও  রয়েছে। আবার অনেক হিজড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও জানান তিনি।

 

স্থানীয়রা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সুরভি ও কান্তা গ্রুপের কয়েকশ হিজড়া দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো পল্লবী এলাকা। চাঁদার জন্য অনেক হিজড়া কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। ভোর থেকেই  দোকানপাট, বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে হানা দিচ্ছেন হিজড়ারা।

 

পল্লবী থানার এক কর্মকর্তা এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিজড়াদের অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

 

পুুলিশের মিরপুর জোনের এডিসি আরিফুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের চাঁদাবাজির ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আসছে। মিরপুরের সব থানার ওসিদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

» সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

» নদীতে ৪ নৌ চাঁদাবাজ আটক

» থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

» আজ শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকা-মার্কেট বন্ধ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঈদ ঘিরে মিরপুরে হিজড়াদের চাঁদাবাজির হিড়িক

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুরে হিজড়াদের বেশুমার চাঁদাবজি চলছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মিরপুরের আনাচে-কানাচে চাঁদার জন্য ছুটছেন তারা। হাটে মাঠে ঘাটে যেন হিজড়াদেরই দৌরাত্ম্য। গত সাত দিন মিরপুর ১, ২, ১০, ১১, ১২ নম্বর ঘুরে ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেছে।  সূএ: যুগান্তর

শনিবার রাত ৮টায় মিরপুর ১২ নম্বরের মি. বেকার নামে একটি ফাস্টফুড দোকানে গিয়ে হাজির ১৫ জনের একটি হিজড়ার দল। এ সময় দোকানের ভেতর কয়েকজন ক্রেতা ছিলেন। হিজড়াদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সেখান থেকে সরে যান।

 

সুরমা নামের এক হিজড়া দোকানের ম্যানেজারের কাছে ঈদ সেলামি বাবদ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যানেজার আপত্তির সুরে কিছু বলতে চাইলে হিজড়ারা চিরাচরিত অশোভন ও বাজে অঙ্গভঙ্গি দিয়ে শোরগোল শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। অনেক হিজড়া দোকানের মেঝেতে শুয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন। অনেকে দোকানে সেলফি তোলেন।  এরপর হাততালি দিয়ে গান গাওয়া শুরু করেন তারা।

দোকানের এক কর্মচারী এ সময় বাধা দিতে গেলে তার জামা-কাপড় টেনে তাকেও নাজেহাল করেন হিজড়ারা।  দোকানের ম্যানেজার পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে বের হয়ে যান।

 

তখন হিজড়ারা ম্যানেজারের পিছু নেয়। কিছুক্ষণ পর দোকান ম্যানেজার এক হাজার টাকা দিয়ে বিদায় দিতে চাইলে হিজড়ারা ঘোর আপত্তি জানায়। হিজড়া দলের সর্দার রেশমা ম্যানেজারকে জানান ২০ হাজার টাকার কম এক টাকাও তারা নেবে না। আধা ঘণ্টা পর আবার আসবে টাকার জন্য। ম্যানেজারকে টাকা রেডি রাখতে বলে চলে যায়। এরপর পাশের কয়েকটি শপিংমল, বেবি শপ, ফাস্টফুড ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় হিজড়ারা।  এ সময় অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করে হিজড়ার দল।

 

গত ১০ এপ্রিল মিরপুর ১২ নম্বর বি ব্লকের একটি বায়িং হাউসে ঈদ সেলামির টাকা আনতে যায় হিজড়ারা। ওই সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির মালিক অফিসে ছিলেন না। অফিসের পিয়ন বেলাল মোবাইল ফোনে হিজড়াদের ব্যাপারে তার মালিককে জানান। এরপর বেলাল ৫০০ টাকা দিয়ে হিজড়াদের চলে যেতে বললে তারা (হিজড়ারা) অরাজগতা শুরু করেন। অফিসে  হামলা চালায়। পিয়ন একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে এক হিজড়াকে ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে পেটানো শুরু করেন। আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করলে হিজড়ারা পালিয়ে যায়।

 

মিরপুরের ১২ নম্বর বি ব্লকের ৪নং রোডের কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান, চলতি মাসে বাসা ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ করেছেন বাড়ির মালিকরা। হিজড়াদের ঈদ বখশিস হিসেবে এ টাকা দেওয়া হবে বলে ভাড়াটিয়াদের জানিয়েছেন বাড়ির মালিকরা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা রুপম জানান, মিরপুর ১১ নম্বরের বেশিরভাগ মার্কেটের দোকান থেকে সাপ্তাহিক টাকা নেয় হিজড়ারা। অনেকে খুশি হয়ে তাদেরকে টাকা দেয়। হিজড়াদের সাপ্তাহিক  টাকা দিতে দিতে ব্যবসায়ীদের সয়ে গেছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে হিজড়াদের রেট বেড়েছে। যারা নিয়মিত টাকা দেয় তাদের কাছেও ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা চাইছে। ঈদকে সামনে রেখে তারা কয়েক কোটি টাকা কালেকশন করবে। মিরপুরে এক হিজড়া সর্দারের বাড়ি-গাড়িও  রয়েছে। আবার অনেক হিজড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও জানান তিনি।

 

স্থানীয়রা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সুরভি ও কান্তা গ্রুপের কয়েকশ হিজড়া দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো পল্লবী এলাকা। চাঁদার জন্য অনেক হিজড়া কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। ভোর থেকেই  দোকানপাট, বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে হানা দিচ্ছেন হিজড়ারা।

 

পল্লবী থানার এক কর্মকর্তা এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিজড়াদের অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

 

পুুলিশের মিরপুর জোনের এডিসি আরিফুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের চাঁদাবাজির ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আসছে। মিরপুরের সব থানার ওসিদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com