ইমামের পেছনে সুরা ফাতেহা পড়া নিয়ে ইমামরা কী বলেছেন

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :  নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং এর শুদ্ধতা নির্ভর করে সঠিকভাবে কোরআন তেলাওয়াতের ওপর। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না। (বুখারি: ৭৫৬)। তবে ইমামের পেছনে মুক্তাদির করণীয় নিয়ে ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিষয়টির বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো।

 

মুক্তাদির কেরাত সংক্রান্ত তিনটি প্রধান মত

 

১. ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মত: মুক্তাদি কোনো অবস্থাতেই সুরা ফাতিহা বা অন্য সুরা পড়বে না।

 

দলিল: সুরা আরাফের ২০৪ নং আয়াত— ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনো।’ এছাড়াও সহিহ হাদিসে আছে- ‘‘যার ইমাম আছে, তার জন্য ইমামের কেরাতই যথেষ্ট।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১২৪)

 

২. ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মত: ইমাম নীরবে কেরাত পড়লে মুক্তাদি সুরা ফাতিহা পড়বে; জোরে পড়লে শুধু শুনবে।

দলিল: ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না।’ (বুখারি: ৭৫৬)

৩. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর মত: মুক্তাদি সব অবস্থায় সুরা ফাতেহা পড়বে (ইমামের কেরাত শুনলেও)।
দলিল: ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না।’ (বুখারি: ৭৫৬)

ইমাম আবু হানিফার দলিলের বিশদ ব্যাখ্যা

১. কোরআনের নির্দেশনা: সুরা আরাফের ২০৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআন তেলাওয়াতের সময় নীরব থাকার আদেশ দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ভিত্তিতে বলেছেন, নামাজেও এই নির্দেশ প্রযোজ্য।

২. হাদিসে সমর্থন: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘ইমামের কেরাত মুক্তাদির কেরাত হিসেবে গণ্য।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১২৪, মুসনাদে আহমদ: ১৪৬৪৩, ইবনে মাজাহ: ৮৫০)। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এই হাদিস মারফু পর্যায়ের চেয়েও বেশি সহিহ।’ মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, ‘এর সনদ সহিহ।’ (আল আহকামুল কাবির: ২/৪৭২; শরহে মুসনাদে আবি হানিফা, বর্ণনা: ৩০৮)

৩. কিয়াস (যুক্তি): যেমন খুতবা বা আজান একজনের দেওয়াই যথেষ্ট, তেমনি ইমামের কেরাত মুক্তাদির জন্যও যথেষ্ট।

সাধারণ মুসল্লিদের জন্য নির্দেশনা

হানাফি মাজহাব অনুসরণকারীরা ফরজ নামাজে ইমামের পেছনে নীরব থাকবেন। নফল নামাজে বা একাকী নামাজ পড়লে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা মিলাবেন। ভুলে কেরাত পড়ে ফেললে নামাজ ভঙ্গ হবে না, কিন্তু পরবর্তীতে এড়িয়ে চলতে হবে।

সতর্কতা: কোনো মাজহাব বা ইমামের মতকে খাটো করে দেখা যাবে না। সাধারণ মুসল্লিদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা হলো- স্থানীয় মসজিদের ইমামের অনুসরণ করা।

মূল বার্তা

নামাজের শুদ্ধতা অর্জনে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যেকোনো মত অনুসরণই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সহিহভাবে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র
১. সহিহ বুখারি ও মুসলিম
২. তাফসির ইবনে কাসির
৩. ফাতহুল কাদির (ইমাম কামাল ইবনে হুমাম)
৪. আল-মুগনি (ইবনে কুদামা)
৫. রদ্দুল মুহতার (ইমাম শামি)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মিটফোর্ডের ঘটনায় তাঁবেদার শক্তির ধারকবাহক জড়িত : রিজভী

» মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা : দুই ভাই রিমান্ডে

» সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশ

» অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪৯৬ জন অপরাধী গ্রেফতার

» রাকিব হত্যা মামলায় কামরুল-মানিক নতুন মামলায় গ্রেফতার

» নারীকে যথাযথ সম্মান না দিয়ে দমিয়ে রাখলে রাষ্ট্র পিছিয়ে যাবে: আলী রীয়াজ

» তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি বরদাস্ত করা হবে না : ফারুক

» মাদকের সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের ধরতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» অপরাধ বাড়ার দাবি পুরোপুরি সত্য নয়: অন্তর্বর্তী সরকার

» প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিতে জোহর বাহরুতে চালু হচ্ছে কনস্যুলেট

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ইমামের পেছনে সুরা ফাতেহা পড়া নিয়ে ইমামরা কী বলেছেন

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :  নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং এর শুদ্ধতা নির্ভর করে সঠিকভাবে কোরআন তেলাওয়াতের ওপর। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না। (বুখারি: ৭৫৬)। তবে ইমামের পেছনে মুক্তাদির করণীয় নিয়ে ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিষয়টির বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো।

 

মুক্তাদির কেরাত সংক্রান্ত তিনটি প্রধান মত

 

১. ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মত: মুক্তাদি কোনো অবস্থাতেই সুরা ফাতিহা বা অন্য সুরা পড়বে না।

 

দলিল: সুরা আরাফের ২০৪ নং আয়াত— ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনো।’ এছাড়াও সহিহ হাদিসে আছে- ‘‘যার ইমাম আছে, তার জন্য ইমামের কেরাতই যথেষ্ট।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১২৪)

 

২. ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মত: ইমাম নীরবে কেরাত পড়লে মুক্তাদি সুরা ফাতিহা পড়বে; জোরে পড়লে শুধু শুনবে।

দলিল: ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না।’ (বুখারি: ৭৫৬)

৩. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর মত: মুক্তাদি সব অবস্থায় সুরা ফাতেহা পড়বে (ইমামের কেরাত শুনলেও)।
দলিল: ‘সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না।’ (বুখারি: ৭৫৬)

ইমাম আবু হানিফার দলিলের বিশদ ব্যাখ্যা

১. কোরআনের নির্দেশনা: সুরা আরাফের ২০৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআন তেলাওয়াতের সময় নীরব থাকার আদেশ দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ভিত্তিতে বলেছেন, নামাজেও এই নির্দেশ প্রযোজ্য।

২. হাদিসে সমর্থন: জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘ইমামের কেরাত মুক্তাদির কেরাত হিসেবে গণ্য।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১২৪, মুসনাদে আহমদ: ১৪৬৪৩, ইবনে মাজাহ: ৮৫০)। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এই হাদিস মারফু পর্যায়ের চেয়েও বেশি সহিহ।’ মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, ‘এর সনদ সহিহ।’ (আল আহকামুল কাবির: ২/৪৭২; শরহে মুসনাদে আবি হানিফা, বর্ণনা: ৩০৮)

৩. কিয়াস (যুক্তি): যেমন খুতবা বা আজান একজনের দেওয়াই যথেষ্ট, তেমনি ইমামের কেরাত মুক্তাদির জন্যও যথেষ্ট।

সাধারণ মুসল্লিদের জন্য নির্দেশনা

হানাফি মাজহাব অনুসরণকারীরা ফরজ নামাজে ইমামের পেছনে নীরব থাকবেন। নফল নামাজে বা একাকী নামাজ পড়লে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা মিলাবেন। ভুলে কেরাত পড়ে ফেললে নামাজ ভঙ্গ হবে না, কিন্তু পরবর্তীতে এড়িয়ে চলতে হবে।

সতর্কতা: কোনো মাজহাব বা ইমামের মতকে খাটো করে দেখা যাবে না। সাধারণ মুসল্লিদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা হলো- স্থানীয় মসজিদের ইমামের অনুসরণ করা।

মূল বার্তা

নামাজের শুদ্ধতা অর্জনে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যেকোনো মত অনুসরণই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সহিহভাবে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র
১. সহিহ বুখারি ও মুসলিম
২. তাফসির ইবনে কাসির
৩. ফাতহুল কাদির (ইমাম কামাল ইবনে হুমাম)
৪. আল-মুগনি (ইবনে কুদামা)
৫. রদ্দুল মুহতার (ইমাম শামি)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com