২০০৭-২০০৮ সালে অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান: প্রধানমন্ত্রী

অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য যারা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে কথা বলছেন তাদের নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৭-২০০৮ সালে একটি অনির্বাচিত সরকার (বাংলাদেশে) ছিল এবং এতে কার কি লাভ হয়েছিল? বরং অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান। ক্ষতি হয়েছিল মানুষের জীবনমান।

 

আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে (তথাকথিত) খুব জ্ঞানী বিজ্ঞানী আছেন। তাদের কাছে আবার এটাও শুনলাম দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

 

তিনি বলেন, কাজেই আপনারা বুঝতে পারেন কারা বলতে পারে? ২০০৭-২০০৮ সালেতো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, কার কি লাভ হয়েছিল? কারণ, কিছু এগাছের ছাল ওগাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, এদল সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা, আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়ালো এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচষ্টা চালালো।

 

অনির্বাচিত সেই সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং এর ৮ মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন এই সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান। কারণ, ঐ দুই বছরের অভিজ্ঞতা যদি একটু স্মরণ করেন। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য চর্চা, অথনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন, তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

 

তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এরপর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে।

 

তার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করেছিল বলেই দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুরও বক্তব্য রাখেন।

 

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

 

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রচিত ‘আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি’ এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খণ্ড)।

 

এছাড়া, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক এবং মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনীতে)।

 

এর আগে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই সবাই অমর একুশের শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ধমক দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করতে চাইলে বিএনপি সহ্য করবে না : ফারুক

» পিআর ইস্যুতে যা বললেন মঈন খান

» ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» আসিফের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দেশের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৩৫৩ জন গ্রেফতার

» হজ শেষে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ হাজি

» জামালপুরে নারী এগিয়ে চলা প্রকল্পের সভা অনুষ্ঠিত

» জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে  মোরেলগঞ্জে বিএনপির বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি

» ইসলামপুরে রহিম মেম্বার হত্যা সন্দেহে দুইজন আটক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

২০০৭-২০০৮ সালে অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান: প্রধানমন্ত্রী

অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য যারা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে কথা বলছেন তাদের নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৭-২০০৮ সালে একটি অনির্বাচিত সরকার (বাংলাদেশে) ছিল এবং এতে কার কি লাভ হয়েছিল? বরং অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান। ক্ষতি হয়েছিল মানুষের জীবনমান।

 

আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে (তথাকথিত) খুব জ্ঞানী বিজ্ঞানী আছেন। তাদের কাছে আবার এটাও শুনলাম দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

 

তিনি বলেন, কাজেই আপনারা বুঝতে পারেন কারা বলতে পারে? ২০০৭-২০০৮ সালেতো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, কার কি লাভ হয়েছিল? কারণ, কিছু এগাছের ছাল ওগাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, এদল সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা, আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়ালো এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচষ্টা চালালো।

 

অনির্বাচিত সেই সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্তু অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং এর ৮ মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন এই সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান। কারণ, ঐ দুই বছরের অভিজ্ঞতা যদি একটু স্মরণ করেন। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য চর্চা, অথনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন, তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

 

তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এরপর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে।

 

তার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করেছিল বলেই দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুরও বক্তব্য রাখেন।

 

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

 

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রচিত ‘আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি’ এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খণ্ড)।

 

এছাড়া, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক এবং মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনীতে)।

 

এর আগে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই সবাই অমর একুশের শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com