হজে নারীদের করণীয় ও বর্জনীয়

নারীরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপরও হজ করা ফরজ। তবে হজ আদায়ের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষভাবে পালনীয় কিছু বিধান রয়েছে; যা তাদের হজ পালনে সুবিধা ও পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক। পবিত্র হজব্রত পালনে গমনেচ্ছু মা-বোনদের হজের কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদনের সুবিধার্থে এ- সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :  প্রত্যেক নারীকে অবশ্যই মাহরাম পুরুষের সঙ্গে হজে যেতে হবে। মাহরাম বলা হয় এমন পুরুষকে যার সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। যেমন- পিতা, পুত্র, স্বামী, আপন ভাই, আপন চাচা, আপন মামা ইত্যাদি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো নারী যেন স্বীয় মাহরাম ছাড়া সফর না করে। এরপর এক সাহাবি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি জিহাদে যাওয়ার জন্য সেনাদলে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আর আমার স্ত্রী হজে যেতে ইচ্ছা করেছে। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমিও তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি)

 

ঋতুবতী অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না; তবে হজের অন্যান্য আহকাম পালন করা যাবে। আর ঋতু শেষ হলে গোসল করে তাওয়াফ করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, এ কারণে তাওয়াফ বিলম্বিত হলে গুনাহ হবে না। একবার হজরত আয়েশা (রা.) হজের সময় ঋতুবতী হলে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাজিরা যা করে তুমিও তা কর, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ করবে না।’ (বুখারি)

 

ইহরাম অবস্থায় সাধারণ ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে এবং মাথা ঢেকে রাখতে হবে। আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করা বা চেহারা ঢেকে রাখা যাবে না। এখানে চেহারা না ঢাকার দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে চেহারা সম্পূর্ণ খুলে রাখতে পারবে, বরং ইহরাম অবস্থায়ও পর্দার প্রতি সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা জরুরি। তাই মাথার ওপর ক্যাপ বা এ- জাতীয় কিছু পরিধান করে তার ওপর নেকাব ঝুলিয়ে দেবে; যাতে নেকাবের কাপড় চেহারা স্পর্শ না করে। নারীরা পুরুষের মতো মাথা মুন্ডাবে না। বরং চুলের আগা থেকে এক কর পরিমাণ ছেঁটে ফেলবে। হজরত আলী (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের মাথা মু-ন করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘মহিলারা ইহরাম অবস্থায় চুল একত্র করে তা থেকে আঙুলের এক কর পরিমাণ ছোট করবে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা) রমল ও এজতেবা করা যাবে না। এ বিষয়ে ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াফ কিংবা সায়ি কোনো ক্ষেত্রেই নারীরা রমল এজতেবা করবে না। কারণ এর উদ্দেশ্য হলো শক্তিমত্তা ও বীরত্ব প্রকাশ করা, যা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অধিকন্তু পর্দা রক্ষা করাই তাদের মূল বিষয়।’

 

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামবিষয়ক গবেষক।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন মায়েরা সকালে এই ৫ সুপারফুড খান

» হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

» বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার আসলে কী?

» এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারত

» মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক নিহত

» সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা ও আয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

» সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

» অলিম্পিক উদ্বোধনের আগে ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা

» যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা

» কেন বিষাক্ত মানুষদের ছেঁটে ফেলতে বললেন পরিণীতি?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হজে নারীদের করণীয় ও বর্জনীয়

নারীরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপরও হজ করা ফরজ। তবে হজ আদায়ের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষভাবে পালনীয় কিছু বিধান রয়েছে; যা তাদের হজ পালনে সুবিধা ও পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক। পবিত্র হজব্রত পালনে গমনেচ্ছু মা-বোনদের হজের কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদনের সুবিধার্থে এ- সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :  প্রত্যেক নারীকে অবশ্যই মাহরাম পুরুষের সঙ্গে হজে যেতে হবে। মাহরাম বলা হয় এমন পুরুষকে যার সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। যেমন- পিতা, পুত্র, স্বামী, আপন ভাই, আপন চাচা, আপন মামা ইত্যাদি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো নারী যেন স্বীয় মাহরাম ছাড়া সফর না করে। এরপর এক সাহাবি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি জিহাদে যাওয়ার জন্য সেনাদলে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আর আমার স্ত্রী হজে যেতে ইচ্ছা করেছে। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমিও তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি)

 

ঋতুবতী অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না; তবে হজের অন্যান্য আহকাম পালন করা যাবে। আর ঋতু শেষ হলে গোসল করে তাওয়াফ করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, এ কারণে তাওয়াফ বিলম্বিত হলে গুনাহ হবে না। একবার হজরত আয়েশা (রা.) হজের সময় ঋতুবতী হলে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাজিরা যা করে তুমিও তা কর, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ করবে না।’ (বুখারি)

 

ইহরাম অবস্থায় সাধারণ ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে এবং মাথা ঢেকে রাখতে হবে। আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করা বা চেহারা ঢেকে রাখা যাবে না। এখানে চেহারা না ঢাকার দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে চেহারা সম্পূর্ণ খুলে রাখতে পারবে, বরং ইহরাম অবস্থায়ও পর্দার প্রতি সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা জরুরি। তাই মাথার ওপর ক্যাপ বা এ- জাতীয় কিছু পরিধান করে তার ওপর নেকাব ঝুলিয়ে দেবে; যাতে নেকাবের কাপড় চেহারা স্পর্শ না করে। নারীরা পুরুষের মতো মাথা মুন্ডাবে না। বরং চুলের আগা থেকে এক কর পরিমাণ ছেঁটে ফেলবে। হজরত আলী (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের মাথা মু-ন করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘মহিলারা ইহরাম অবস্থায় চুল একত্র করে তা থেকে আঙুলের এক কর পরিমাণ ছোট করবে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা) রমল ও এজতেবা করা যাবে না। এ বিষয়ে ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াফ কিংবা সায়ি কোনো ক্ষেত্রেই নারীরা রমল এজতেবা করবে না। কারণ এর উদ্দেশ্য হলো শক্তিমত্তা ও বীরত্ব প্রকাশ করা, যা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অধিকন্তু পর্দা রক্ষা করাই তাদের মূল বিষয়।’

 

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামবিষয়ক গবেষক।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com