সার্ভার থেকে রেলের টিকিট সরাতেন রেজাউল, প্রতি ঈদে আয় ১০-১২ লাখ টাকা

গত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত রেজাউল করিম। কর্মী হওয়ার সুবাদে অনলাইন টিকিটের সার্ভারে প্রবেশে তার কোনো বাধা ছিল না। এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি ঈদ মৌসুমে দুই-তিন হাজার টিকিট অবৈধভাবে সরিয়ে নিতেন তিনি। আর এসব টিকিট কালোবাজারে ১০-১২ লাখ টাকায় বিক্রি হতো।

 

ট্রেনের অনলাইন টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমকে (৩৮) আটকের পর এসব তথ্য জানায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকে (২৮) আটক করা হয়। এ সময় তাদের স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ ট্রেনের ই-টিকিট জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিটের বিপুল চাহিদা থাকে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। অধিকাংশ মানুষই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে সকালে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

 

তিনি বলেন, এ অভিযোগে র‍্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল কমলাপুর স্টেশন থেকে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি নিশ্চিত হয় র‍্যাব। এরপর তার সহযোগী এমরানুলকে আটক করা হয়।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১ এর কর্মকর্তা বলেন, গত ৬ বছর ধরে রেজাউল ট্রেনের টিকিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিতেও কর্মরত ছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে সহজ ডটকম তাকে নিয়োগ দেয়। রেজাউল প্রতি ঈদে ২-৩ হাজার অনলাইন টিকিট অবৈধভাবে সরিয়ে নিতেন। আর এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে প্রতি মৌসুমে আয় করতেন ১০-১২ লাখ টাকা।

 

তিনি আরো বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা লাভে টিকিট বিক্রয় করতেন। এছাড়া অন্যদের কাছে নির্ধারিত দামের চেয়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করতেন। তার দাবি, রেলওয়ের বিভিন্ন ভিআইপিদের টিকিটের আবদার মেটানোর সুযোগে নির্বিঘ্নে তিনি এ কাজ করে আসছিলেন।

 

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিটপ্রত্যাশীদের একটি বড় শ্রেণি গড়ে তুলেছেন। এর বাইরেও কালোবাজারিতে তার টিকিট বিক্রেতা রয়েছে। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে সার্ভার থেকে টিকিট বুক করে কিনে নিতেন তিনি।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তার এ সংক্রান্ত বিভিন্ন যোগাযোগ চলত বিভিন্ন অ্যাপসে। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে লেনদেন করতেন নগদ অর্থে। তাকে আটকের মধ্য দিয়ে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির একটা দিক উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক।   সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মাইমুনার পরিবারের সন্ধান চায় ডিএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার

» কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯২৫ জন আসামি গ্রেফতার

» ভারতের স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানে না বাংলাদেশ: বাণিজ্য উপদেষ্টা

» নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দরে আটক

» শিগগিরই শুরু হচ্ছে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদ বিতরণ

» ফ্রান্স-স্পেন সফরে যাচ্ছেন না ড. ইউনূস

» সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

» ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও

» ক্যানবেরায় কুয়েট প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত পুনর্মিলনী

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সার্ভার থেকে রেলের টিকিট সরাতেন রেজাউল, প্রতি ঈদে আয় ১০-১২ লাখ টাকা

গত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত রেজাউল করিম। কর্মী হওয়ার সুবাদে অনলাইন টিকিটের সার্ভারে প্রবেশে তার কোনো বাধা ছিল না। এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি ঈদ মৌসুমে দুই-তিন হাজার টিকিট অবৈধভাবে সরিয়ে নিতেন তিনি। আর এসব টিকিট কালোবাজারে ১০-১২ লাখ টাকায় বিক্রি হতো।

 

ট্রেনের অনলাইন টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমকে (৩৮) আটকের পর এসব তথ্য জানায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকে (২৮) আটক করা হয়। এ সময় তাদের স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ ট্রেনের ই-টিকিট জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিটের বিপুল চাহিদা থাকে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। অধিকাংশ মানুষই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে সকালে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

 

তিনি বলেন, এ অভিযোগে র‍্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল কমলাপুর স্টেশন থেকে সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি নিশ্চিত হয় র‍্যাব। এরপর তার সহযোগী এমরানুলকে আটক করা হয়।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১ এর কর্মকর্তা বলেন, গত ৬ বছর ধরে রেজাউল ট্রেনের টিকিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিতেও কর্মরত ছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে সহজ ডটকম তাকে নিয়োগ দেয়। রেজাউল প্রতি ঈদে ২-৩ হাজার অনলাইন টিকিট অবৈধভাবে সরিয়ে নিতেন। আর এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে প্রতি মৌসুমে আয় করতেন ১০-১২ লাখ টাকা।

 

তিনি আরো বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা লাভে টিকিট বিক্রয় করতেন। এছাড়া অন্যদের কাছে নির্ধারিত দামের চেয়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করতেন। তার দাবি, রেলওয়ের বিভিন্ন ভিআইপিদের টিকিটের আবদার মেটানোর সুযোগে নির্বিঘ্নে তিনি এ কাজ করে আসছিলেন।

 

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিটপ্রত্যাশীদের একটি বড় শ্রেণি গড়ে তুলেছেন। এর বাইরেও কালোবাজারিতে তার টিকিট বিক্রেতা রয়েছে। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে সার্ভার থেকে টিকিট বুক করে কিনে নিতেন তিনি।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তার এ সংক্রান্ত বিভিন্ন যোগাযোগ চলত বিভিন্ন অ্যাপসে। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে লেনদেন করতেন নগদ অর্থে। তাকে আটকের মধ্য দিয়ে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির একটা দিক উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক।   সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com