শিশুদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট

ছবি সংগৃহীত

 

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ : অনেক বাচ্চাই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিতে কষ্ট পায়। এক হিসাবে দেখা গেছে, ছেলেদের ১০-১৫ শতাংশ এবং মেয়েদের ৭-১০ শতাংশ এ রোগে ভোগে। জীবনের প্রথম বছরের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং চার-পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে শতকরা ৮০-৯০ ভাগ হাঁপানি রোগের প্রকাশ ঘটে। হাঁপানি রোগের সূচনা এবং প্রকাশের সব কারণ বেশ জটিল। বংশগত ধারা এবং পরিবেশের নানা উপাদানের সংযোগে রোগের উজ্জীবন ঘটে। বাচ্চাদের বেলায় এ রোগের সংজ্ঞা নিরূপণ করা খুব সহজ নয়। কেননা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগে ঘন ঘন আক্রান্ত শিশু হাঁপানির মতো লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। কোনো বাচ্চাকে পরীক্ষা করে যদি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টজনিত অস্বাভাবিক আওয়াজ যা সবসময় অথবা কিছুদিন পর পর শোনা যায়, যার সঙ্গে সচরাচর কাশি থাকে তবে শিশুটি হাঁপানিতে ভুগছে মনে করতে হবে। হাঁপানি আক্রান্ত বাচ্চা প্রধানত শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকে। বারবার এ অসুখে আক্রান্ত হয় এবং বারবার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার সাহায্যে আবার কখনোবা নিজে নিজেই সেরে উঠে। অ্যালার্জিজনিত বা এটোপিক হাঁপানি শিশুর অল্প বয়সে হতে দেখা যায়। কোনো খাবার জিনিস কিংবা ওষুধে বাচ্চার অ্যালার্জি দেখা গেলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের তৈরি ঘটে। এ সব পদার্থ পরে সংবেদনশীল শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে। এ ধরনের হাঁপানিতে দেখা যায় মা-বাবা অথবা বাবার দিকে কারও মধ্যে হাঁপানি বা অ্যালার্জির বংশগত উপস্থিতি। দেখা যায় ধোঁয়া, ধূলাবালি, পশুর লোম, পালক, ঘাস এবং ফুলের রেণু, কিছু খাবার বিশেষ করে আইসক্রিম এবং ঠান্ডাজাতীয় খাবার, হাঁপানির উৎপত্তি ঘটায়। এছাড়া কখনো কখনো ঘরের ড্যাম্প ওয়ালের কারণে হতে পারে হাঁচি, কাশি এমনকি শ্বাসকষ্টও।

 

হাঁপানি কীভাবে নির্ণয় করবেন : (ক) হাঁপানি বা অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস। (খ) বাচ্চা বারবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে এবং শাঁ শাঁ শব্দ শোনা গেলে। (গ) সব সময় অথবা বারে বারে কাশি লেগে থাকলে। (ঘ) রাতে শোবার বেলায় বা ভোরের দিকে কাশি বা শ্বাসকষ্টের আওয়াজ। (ঙ) উপসর্গ দেখা দেওয়ার সূচনা হিসেবে কোনো ভাইরাস জ্বর, ব্যায়াম, মানসিক চাপ অথবা বিশেষ কোনো খাবার বা আবহাওয়া জড়িত আছে বলে মনে হলে।

 

আধুনিক চিকিৎসা : বাচ্চাদের হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় অনেক বিপ্লব এসেছে যেসব উদ্দেশ্যকে চিন্তা করে চিকিৎসাকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে যেগুলো হলো : * বাচ্চার শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট লাঘব করে সে যেন ঘরে এবং স্কুলে স্বাভাবিক কার্যকর জীবনযাপন করতে পারে। * ফুসফুসে স্বাভাবিক কার্যাদি বজায় রাখা। * শ্বাসকষ্ট দূর করতে ওষুধের অতি নির্ভরতা কমানো। * বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ যাতে ঠিক থাকে এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যতটা এড়ানো।

 

প্রধান ধাপগুলো হলো :

(ক) পরিহার করা : ধোঁয়া, ধুলা, ঠান্ডা জাতীয় খাবার বা অন্য কোন কোনও জিনিসের প্রতি বাচ্চার অ্যালার্জি- যে সব কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্টের শুরু সেসব থেকে বাচ্চাকে যতটা সম্ভব বাঁচানো।

 

(খ) ধাপে ধাপে চিকিৎসা : এ ব্যাপারটি একটি নতুন অগ্রগতি। পাঁচটি ধাপে চিকিৎসা প্রদান করা হয় শিশুর হাঁপানির অবস্থা বিবেচনা করে এবং এতে ইনহেলারের প্রয়োগ ঘটে। তাই বাচ্চাদের হাঁপানি নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ধমক দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করতে চাইলে বিএনপি সহ্য করবে না : ফারুক

» পিআর ইস্যুতে যা বললেন মঈন খান

» ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» আসিফের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দেশের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৩৫৩ জন গ্রেফতার

» হজ শেষে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ হাজি

» জামালপুরে নারী এগিয়ে চলা প্রকল্পের সভা অনুষ্ঠিত

» জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে  মোরেলগঞ্জে বিএনপির বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি

» ইসলামপুরে রহিম মেম্বার হত্যা সন্দেহে দুইজন আটক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট

ছবি সংগৃহীত

 

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ : অনেক বাচ্চাই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিতে কষ্ট পায়। এক হিসাবে দেখা গেছে, ছেলেদের ১০-১৫ শতাংশ এবং মেয়েদের ৭-১০ শতাংশ এ রোগে ভোগে। জীবনের প্রথম বছরের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং চার-পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে শতকরা ৮০-৯০ ভাগ হাঁপানি রোগের প্রকাশ ঘটে। হাঁপানি রোগের সূচনা এবং প্রকাশের সব কারণ বেশ জটিল। বংশগত ধারা এবং পরিবেশের নানা উপাদানের সংযোগে রোগের উজ্জীবন ঘটে। বাচ্চাদের বেলায় এ রোগের সংজ্ঞা নিরূপণ করা খুব সহজ নয়। কেননা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগে ঘন ঘন আক্রান্ত শিশু হাঁপানির মতো লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। কোনো বাচ্চাকে পরীক্ষা করে যদি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টজনিত অস্বাভাবিক আওয়াজ যা সবসময় অথবা কিছুদিন পর পর শোনা যায়, যার সঙ্গে সচরাচর কাশি থাকে তবে শিশুটি হাঁপানিতে ভুগছে মনে করতে হবে। হাঁপানি আক্রান্ত বাচ্চা প্রধানত শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকে। বারবার এ অসুখে আক্রান্ত হয় এবং বারবার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার সাহায্যে আবার কখনোবা নিজে নিজেই সেরে উঠে। অ্যালার্জিজনিত বা এটোপিক হাঁপানি শিশুর অল্প বয়সে হতে দেখা যায়। কোনো খাবার জিনিস কিংবা ওষুধে বাচ্চার অ্যালার্জি দেখা গেলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের তৈরি ঘটে। এ সব পদার্থ পরে সংবেদনশীল শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে। এ ধরনের হাঁপানিতে দেখা যায় মা-বাবা অথবা বাবার দিকে কারও মধ্যে হাঁপানি বা অ্যালার্জির বংশগত উপস্থিতি। দেখা যায় ধোঁয়া, ধূলাবালি, পশুর লোম, পালক, ঘাস এবং ফুলের রেণু, কিছু খাবার বিশেষ করে আইসক্রিম এবং ঠান্ডাজাতীয় খাবার, হাঁপানির উৎপত্তি ঘটায়। এছাড়া কখনো কখনো ঘরের ড্যাম্প ওয়ালের কারণে হতে পারে হাঁচি, কাশি এমনকি শ্বাসকষ্টও।

 

হাঁপানি কীভাবে নির্ণয় করবেন : (ক) হাঁপানি বা অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস। (খ) বাচ্চা বারবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে এবং শাঁ শাঁ শব্দ শোনা গেলে। (গ) সব সময় অথবা বারে বারে কাশি লেগে থাকলে। (ঘ) রাতে শোবার বেলায় বা ভোরের দিকে কাশি বা শ্বাসকষ্টের আওয়াজ। (ঙ) উপসর্গ দেখা দেওয়ার সূচনা হিসেবে কোনো ভাইরাস জ্বর, ব্যায়াম, মানসিক চাপ অথবা বিশেষ কোনো খাবার বা আবহাওয়া জড়িত আছে বলে মনে হলে।

 

আধুনিক চিকিৎসা : বাচ্চাদের হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় অনেক বিপ্লব এসেছে যেসব উদ্দেশ্যকে চিন্তা করে চিকিৎসাকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে যেগুলো হলো : * বাচ্চার শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট লাঘব করে সে যেন ঘরে এবং স্কুলে স্বাভাবিক কার্যকর জীবনযাপন করতে পারে। * ফুসফুসে স্বাভাবিক কার্যাদি বজায় রাখা। * শ্বাসকষ্ট দূর করতে ওষুধের অতি নির্ভরতা কমানো। * বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ যাতে ঠিক থাকে এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যতটা এড়ানো।

 

প্রধান ধাপগুলো হলো :

(ক) পরিহার করা : ধোঁয়া, ধুলা, ঠান্ডা জাতীয় খাবার বা অন্য কোন কোনও জিনিসের প্রতি বাচ্চার অ্যালার্জি- যে সব কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্টের শুরু সেসব থেকে বাচ্চাকে যতটা সম্ভব বাঁচানো।

 

(খ) ধাপে ধাপে চিকিৎসা : এ ব্যাপারটি একটি নতুন অগ্রগতি। পাঁচটি ধাপে চিকিৎসা প্রদান করা হয় শিশুর হাঁপানির অবস্থা বিবেচনা করে এবং এতে ইনহেলারের প্রয়োগ ঘটে। তাই বাচ্চাদের হাঁপানি নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com