মুসাফির-মুকিমের পরিচয় ও নামাজ-রোজার বিধান

বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা ভ্রমণের জন্য নিজের এলাকা ও বাড়ি থেকে বের হয়। যেতে হয় অনেক দূর দূরান্তে। এমন কোনো উদ্দেশে নিজ বাড়ি থেকে ভ্রমণ বা সফরে বের হওয়ার পর কমপক্ষে ৪৮ মাইল (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করলে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয়। আর যে ব্যক্তি নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা নিজ এলাকার ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মুকিম বলা হয়।

 

তেমনিভবে ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারচেয়ে বেশি দূরত্বে সফরকারী পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ওই স্থানে সে মুকিম হবে।

 

মুসাফির ব্যক্তির জন্য ইসলামে বেশ কিছু বিধান পালন সহজ করা হয়েছে। যেমন- তার জন্য নামাজে কসরের বিধান দেওয়া হয়েছে এবং সফরকালীন সময়ে রোজা না রেখে পরে কাজা করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।

 

কোনো ব্যক্তি সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাসিন্দা নিজ গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর এবং শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে কসর শুরু করবে। আর সফর থেকে ফেরার পথে নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানায় প্রবেশ করার পর মুকিম হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৬১, ২৬৮-২৭০)।

 

মুসাফির ব্যক্তির নামাজে কসরের নিয়ম হলো- তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত (কসর) পড়বেন। আর এইভাবে সংক্ষেপে নামাজ পড়ার ভেতর আল্লাহ তাআলা কল্যাণ রেখেছেন। আর মাগরিব, বেতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজের কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোই পড়বে। তবে সফর অবস্থায় পথিমধ্যে তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর গন্তব্যে পৌঁছার পর সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম।

 

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, সফর অবস্থায় সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার ন্যায় আবশ্যক থাকে না; বরং সাধারণ সুন্নতের হুকুমে হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায়- কোনো আপত্তি নেই। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১০১)।

 

সফর অবস্থায় নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)।

 

মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে (তবে মুকিম ইমামের পেছনে হলে অসুবিধা নেই)। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়বে। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত শুরু করে দেয় এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তা হলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে, তা হলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ি : ১/৯১)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

» মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় এগোতে চায় সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

» দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার হীন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল

» সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা হচ্ছে: তারেক রহমান

» স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গভবন এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে ডিএমপি

» ‘১০ ফেরাউনকে একত্রে করলেও হাসিনার মতো জুলুমবাজ হবে না’

» ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি

» সন্দ্বীপের প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে: প্রধান উপদেষ্টা

» ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম নিয়ে বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে : ফারুকী

» সরকার নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মুসাফির-মুকিমের পরিচয় ও নামাজ-রোজার বিধান

বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা ভ্রমণের জন্য নিজের এলাকা ও বাড়ি থেকে বের হয়। যেতে হয় অনেক দূর দূরান্তে। এমন কোনো উদ্দেশে নিজ বাড়ি থেকে ভ্রমণ বা সফরে বের হওয়ার পর কমপক্ষে ৪৮ মাইল (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করলে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয়। আর যে ব্যক্তি নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা নিজ এলাকার ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মুকিম বলা হয়।

 

তেমনিভবে ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারচেয়ে বেশি দূরত্বে সফরকারী পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ওই স্থানে সে মুকিম হবে।

 

মুসাফির ব্যক্তির জন্য ইসলামে বেশ কিছু বিধান পালন সহজ করা হয়েছে। যেমন- তার জন্য নামাজে কসরের বিধান দেওয়া হয়েছে এবং সফরকালীন সময়ে রোজা না রেখে পরে কাজা করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।

 

কোনো ব্যক্তি সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাসিন্দা নিজ গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর এবং শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে কসর শুরু করবে। আর সফর থেকে ফেরার পথে নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানায় প্রবেশ করার পর মুকিম হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৬১, ২৬৮-২৭০)।

 

মুসাফির ব্যক্তির নামাজে কসরের নিয়ম হলো- তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত (কসর) পড়বেন। আর এইভাবে সংক্ষেপে নামাজ পড়ার ভেতর আল্লাহ তাআলা কল্যাণ রেখেছেন। আর মাগরিব, বেতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজের কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোই পড়বে। তবে সফর অবস্থায় পথিমধ্যে তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর গন্তব্যে পৌঁছার পর সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম।

 

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, সফর অবস্থায় সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার ন্যায় আবশ্যক থাকে না; বরং সাধারণ সুন্নতের হুকুমে হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায়- কোনো আপত্তি নেই। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১০১)।

 

সফর অবস্থায় নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)।

 

মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে (তবে মুকিম ইমামের পেছনে হলে অসুবিধা নেই)। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়বে। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত শুরু করে দেয় এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তা হলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে, তা হলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ি : ১/৯১)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com