ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে রোববার সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ লোকদের জিম্মি করে অবৈধভাবে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্রতারক চক্রের একজন সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৩। আটককৃতের নাম- মোছা. বিউটি বেগম। তার কাছ থেকে মেডিকেল ডকুমেন্ট ফাইল এবং ১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপ্স ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, কতিপয় মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নিরীহ লোকদের সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে জিম্মি করে দেশে বিদেশে অবৈধভাবে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর অভিযান চালিয়ে বিউটিকে আটক করা হয়।
আটক বিউটির কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বীণা রানী দাস বলেন, শারীরিকভাবে অসুস্থতাবোধ করলে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারীর স্ত্রী বিউটির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। বিউটির কথামতো অভিযোগকারী স্ত্রীকে নিয়ে পরদিন তার ভাড়া বাসায় যান। বিউটি তাদের সাথে শারীরিক বিষয়ে আলাপ আলোচনার একপর্যায়ে অভিযোগকারীকে ভারতে নিয়ে সু চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে প্রলোভন দেখান। ওই সময় বিউটি ভারতে কয়েকবার আসা যাওয়া করেছেন এবং বিভিন্ন লোককে ভারতে নিয়ে কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগকারীকে তার পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র দেখান। কথায় বিশ্বাস করে বিউটির পরামর্শমত অভিযোগকারী ও তার স্ত্রীর নামে পাসপোর্ট ও ভিসা করেন। এরপর গত ৪ নভেম্বর অভিযোগকারী ও তার স্ত্রীকে বিউটি তার ভাড়া বাসা থেকে যশোরে নিয়ে যান। পরে যশোর বর্ডার দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেন।
অভিযোগকারী স্ত্রীসহ ভারত পৌঁছালে সেখানে অবস্থানরত পলাতক অভিযুক্ত শহীদ ও শেখ ফরিদ তাদের অজ্ঞাত স্থানে রাখেন। সেখান থেকে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযোগকারীকে নিয়ে ডাক্তার দেখান। পলাতক বিউটির সহযোগীরা চিকিৎসার নামে কৌশলে অভিযোগকারীর কাছ থেকে সেচ্ছায় কিডনি দান করার সম্মতি কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন। কয়েক দিন পর অভিযুক্তরা কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলে অভিযোগকারীকে ভর্তি করান। সেখানে বিভিন্ন তারিখে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অপারেশন করার কথা অভিযোগকারীকে জানান। কয়েকদিন পর ওই হাসপাতালের একটি রুমে অভিযোগকারীকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তার পেটের বাম পার্শ্বে কাটা দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, তিনি তার কিডনী সেচ্ছায় দান করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তরা তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ২১ ফেব্রুযারি অভিযোগকারীকে স্ত্রীসহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।
বীণা রানী দাস বলেন, চক্রটি সুচিকিৎসা করানোর কথা বলে অনুমতি ছাড়া অভিযোগকারীর বাম পার্শ্বের কিডনী বিক্রি করে দেয়। দেশে আসার পর সুচিকিৎসা না পেয়ে অসহায়ত্ব জীবনযাপন করছেন অভিযোগকারী। আটককৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।