মসজিদ নির্মাণ সদকায়ে জারিয়া

 মুফতি মাহমুদুল হক জালীস:ইসলাম মুসলমানদের ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বিশেষ সাওয়াবের কথা ঘোষণা করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করল আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মতো একটি ঘর তৈরি করে দিবেন। তিরমিজি ২৯২। 

 

মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ইমান আনে, আল্লাহ ও আখেরাতে এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। সুরা তওবা, আয়াত ১৮। মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। মসজিদ আল্লাহর ঘর। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, মসজিদ মূলত আল্লাহর ঘর। সুরা জিন, আয়াত ১৮।

 

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে মসজিদ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ, আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার। মুসলিম ১৫৬০। মসজিদে মুসলমানগণ ইসলামের মূলভিত্তি নামাজ দৈনিক পাঁচবার আদায় করে থাকে। দোয়া জিকিরসহ ইসলামের অন্যান্য কার্যাবলিও সম্পাদন করে। এ জন্যই মসজিদ নির্মাণ করাকে হাদিসের পরিভাষায় সদকায়ে জারিয়া, অর্থাৎ চলমান সদকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য কেউ সহযোগিতা করলে, যতদিন এ মসজিদে মানুষ ইবাদত বন্দেগি করবে ততদিন এর সওয়াব সেই বান্দা (কবরে বসেও) পেতে থাকবে।

 

এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে সেগুলো হলো, যদি সে ইসলামের শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে যায়, অথবা মুসাফিরের জন্য মেহমানখানা নির্মাণ করে যায় অথবা নদী খনন করে যায়। ইবনে মাজা ২৪২।

 

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, দুনিয়ায় যদি কেউ খাঁটি নিয়তে কেবল আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করে যায়; তাহলে সে কবরে বসেও এসব আমলের সওয়াব পেতে থাকবে। মসজিদ নির্মাণের সাওয়াব সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত।

 

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে পাখির ডিম পাড়ার স্থান পরিমাণ মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। সুনানে আহমাদ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত ওসমান (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। বোখারি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদের পানে যারা ছুটে যায় তাদের জন্য প্রতিটি কদমের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান, মর্যাদা ও গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে বাস চালকের মৃত্যু,আহত ১৫

» সাহসী প্রশ্ন তুলুন, বিভ্রান্তি নয় সত্য সামনে আনুন: সাংবাদিকদের শফিকুল

» রিকশাচালক হত্যা মামলায় দুইজন গ্রেপ্তার

» উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করায় এখন কেউ পিডি হতে চান না

» নেপাল পারলে কেন পারবে না বাংলাদেশ?

» কুয়েত চেম্বারে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের বিশেষ সভা

» শ্রীলঙ্কা জিতলে বাঁচবে স্বপ্ন, হারলে কঠিন সমীকরণ বাংলাদেশের

» সাতরাস্তা মোড়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল শুরু

» ৬৮ কেজি গাঁজাসহ আটক ১

» গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মসজিদ নির্মাণ সদকায়ে জারিয়া

 মুফতি মাহমুদুল হক জালীস:ইসলাম মুসলমানদের ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বিশেষ সাওয়াবের কথা ঘোষণা করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করল আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মতো একটি ঘর তৈরি করে দিবেন। তিরমিজি ২৯২। 

 

মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ইমান আনে, আল্লাহ ও আখেরাতে এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। সুরা তওবা, আয়াত ১৮। মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। মসজিদ আল্লাহর ঘর। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, মসজিদ মূলত আল্লাহর ঘর। সুরা জিন, আয়াত ১৮।

 

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে মসজিদ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ, আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার। মুসলিম ১৫৬০। মসজিদে মুসলমানগণ ইসলামের মূলভিত্তি নামাজ দৈনিক পাঁচবার আদায় করে থাকে। দোয়া জিকিরসহ ইসলামের অন্যান্য কার্যাবলিও সম্পাদন করে। এ জন্যই মসজিদ নির্মাণ করাকে হাদিসের পরিভাষায় সদকায়ে জারিয়া, অর্থাৎ চলমান সদকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য কেউ সহযোগিতা করলে, যতদিন এ মসজিদে মানুষ ইবাদত বন্দেগি করবে ততদিন এর সওয়াব সেই বান্দা (কবরে বসেও) পেতে থাকবে।

 

এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে সেগুলো হলো, যদি সে ইসলামের শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে যায়, অথবা মুসাফিরের জন্য মেহমানখানা নির্মাণ করে যায় অথবা নদী খনন করে যায়। ইবনে মাজা ২৪২।

 

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, দুনিয়ায় যদি কেউ খাঁটি নিয়তে কেবল আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করে যায়; তাহলে সে কবরে বসেও এসব আমলের সওয়াব পেতে থাকবে। মসজিদ নির্মাণের সাওয়াব সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত।

 

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে পাখির ডিম পাড়ার স্থান পরিমাণ মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। সুনানে আহমাদ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত ওসমান (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। বোখারি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদের পানে যারা ছুটে যায় তাদের জন্য প্রতিটি কদমের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান, মর্যাদা ও গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com