বিয়ের পর মেয়েদের চাকরি আবার কী

হাসিনা আকতার নিগার: সুমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এক এনজিওতে চাকরি করে। কাজের সূত্রেই রবির সাথে তার পরিচয়। ২ বছরের প্রেম তারপর বিয়ে হয় পারিবারিক আলাপচারিতার মাধ্যমে। কিন্তু বিয়ের পর কেমন জানি বদলে যেতে থাকে রবি। দাম্পত্য জীবনের সবই ঠিক চলছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তার চাকরি নিয়ে। রবির মা-বাবা তাকে সাফ জানিয়ে দেয়, বিয়ের পর তাদের বাড়ির বউয়ের চাকরি করাটা ভালো দেখায় না। আর কিসের জন্য চাকরি করবে সুমি? তাদের সংসারের অবস্থা ভালো। রবির বউ চালানোর মতো অবস্থা আছে। সুমি শ্বশুর-শাশুড়িকে কিছু বলে না। বিষয়টা রবিকে জানালে, সে বলে মা-বাবা যা বলছে তা ঠিক। কি দরকার চাকরি করার? বাড়ির অন্য বউরাও উচ্চ শিক্ষিতা। তারাও তো চাকরি করে না। মা বাবার মতই আর তার মতও একই। 

 

সুমি সত্যি অবাক হয় রবির কথা শুনে। যে রবি নারী মুক্তি, নারীর স্বাধীনতাতে বিশ্বাসী, সে নিজের স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চায় না। অগত্যা সুমি নিজের মা-বাবাকে কথাটা জানায়। তারাও বলে স্বামী আর তার পরিবার না চাইলে চাকরি করার দরকার নাই। মন দিয়ে সংসার করাতেই শান্তি। উপায়হীন হয়ে সুমি নিজের ক্যারিয়ারকে বির্সজন দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়।

সুমির মতো সমাজের অনেক মেয়েই বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। যেখানে মেয়েদের স্বামীর পরিবার ও নিজের মা বাবার দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকে। তবে উভয়ে মনে করে সংসারের শান্তিতে চাকরি বাধা সৃষ্টি করতে পারে। প্রত্যেক মা-বাবা চায় তার মেয়ে যেন ভালো থাকে। আর সংসারে মেয়েদেরকেই ত্যাগ করতে হয়। সুতরাং স্বামীর বাড়ি না চাইলে চাকরি করার দরকার নাই। আবার স্বামী ও তার পরিবার মনে করে চাকরি করলে মেয়েরা সংসার, সন্তান সব এক সাথে সামলাতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর চাকরি করাটাকে ভালো চোখে দেখে না। আত্মসম্মানে বাঁধে।

 

তবে পুরুষত্বের অহমিকা বা পরিবারের দাম্ভিকতাতে  একটি মেয়ে মানসিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত; তা তারা ভাবে না। সুশিক্ষিত একটি মেয়ে  শুধু নিজের আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে চাকরি করে তা কিন্তু নয়। সে নিজেকে এগিয়ে নিতে চায়।

 

কিন্তু  এ সমাজে মেয়েদেরকে এখনো পরনির্ভরশীল করে রাখার চিন্তা করে। যার  প্রতিফলন হলো বিয়ের পর চাকরি করতে না দেয়া। স্বভাবজাতভাবেই বলা হয়, মেয়েরা বাবা, স্বামী আর ছেলের উপর নির্ভরশীল। ঘর সংসারকে সুন্দর করে সাজাতে, সন্তানকে মানুষ করতে   তাদের শিক্ষার প্রয়োজন। স্বামীর ঘরে গিয়ে চাকরি কেন করবে। ফলশ্রুতিতে অগ্রসরমান নারীদের ঘরের বাইরে আসতে হয় অনেক ত্যাগ আর সংগ্রাম করে। আধুনিককালেও সব পরিবার চায় না নারীরা চাকরি করুক, আত্মনির্ভরশীল হয়ে সম্মানের সাথে বাঁচুক।

 

কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ এখনকার নারীরা সংসার সামলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৈরি করতে থাকে শিক্ষাজীবন থাকে। চাকরি শুধু নারী নয়, যে কোনো মানুষের আত্মপরিচয়ের বাহক। যার মাধ্যমে সে নিজের অবস্থান তৈরি করে পরিবারে, সমাজে।

নারীর স্বাধীনতার কথা বলে তার পায়ে পরিবারের রীতিনীতির শিকল পরিয়ে দিলে সত্যিকারের নারী মুক্তি আসবে না। একজন স্বামীকে প্রথমে বুঝতে হবে তার স্ত্রীর অধিকার আছে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার। নারী শুধু কন্যা-জায়া-জননী নয়। সে একজন মানুষ। তার নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পেশাগত জীবনকে সংসারে নামে রুদ্ধ করে দেয়া অন্যায়।

 

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারী তার ব্যক্তি জীবনে যতটা নিরাপত্তাবোধ করে তা একজন গৃহিণীর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে জীবনের চলার পথে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক বিধায় পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা থাকা উচিত। ভালোবাসা, সম্মানও শ্রদ্ধার সাথে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। স্বামীর ইচ্ছাতে নিজেকে অবদমিত করে রাখাটা সুখকর নয় সংসার জীবনে।

 

সুতরাং যে মেয়েটি কাজ করে নিজের পরিচয় তৈরি করেছে, সে  মেয়েটিকে বিয়ের পর চাকরি করতে না দেয়াটার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে সুমির মতো ভালোবাসার মানুষটিকে ঘিরে প্রশ্ন জাগবে মনে।

লেখক: কলাম লেখক। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আমেরিকার ভিসানীতির পরে বিএনপির নেতৃত্ব ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে: হানিফ

» বিএনপি কি নির্বাচন চায়, তাদের নেতা কে: প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

» ‘সজাগ থাকুন, স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে’

» কোনো দলকে পক্ষ করে ভিসা নীতি নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

» রোডমার্চ বৃহত্তর আন্দোলনের প্রাক প্রস্তুতি: নজরুল ইসলাম

» বিশ্বের ‘সবচেয়ে দূরপাল্লার’ ড্রোন উন্মোচন করলো ইরান

» ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয়, বিএনপি চাপে আছে: শিক্ষামন্ত্রী

» সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র আহত

» দেশীয় অস্ত্রসহ ৪ ডাকাত গ্রেফতার

» আমাদের ইলেকশন কমিশন শতভাগ স্বাধীন: সালমান এফ রহমান

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিয়ের পর মেয়েদের চাকরি আবার কী

হাসিনা আকতার নিগার: সুমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এক এনজিওতে চাকরি করে। কাজের সূত্রেই রবির সাথে তার পরিচয়। ২ বছরের প্রেম তারপর বিয়ে হয় পারিবারিক আলাপচারিতার মাধ্যমে। কিন্তু বিয়ের পর কেমন জানি বদলে যেতে থাকে রবি। দাম্পত্য জীবনের সবই ঠিক চলছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তার চাকরি নিয়ে। রবির মা-বাবা তাকে সাফ জানিয়ে দেয়, বিয়ের পর তাদের বাড়ির বউয়ের চাকরি করাটা ভালো দেখায় না। আর কিসের জন্য চাকরি করবে সুমি? তাদের সংসারের অবস্থা ভালো। রবির বউ চালানোর মতো অবস্থা আছে। সুমি শ্বশুর-শাশুড়িকে কিছু বলে না। বিষয়টা রবিকে জানালে, সে বলে মা-বাবা যা বলছে তা ঠিক। কি দরকার চাকরি করার? বাড়ির অন্য বউরাও উচ্চ শিক্ষিতা। তারাও তো চাকরি করে না। মা বাবার মতই আর তার মতও একই। 

 

সুমি সত্যি অবাক হয় রবির কথা শুনে। যে রবি নারী মুক্তি, নারীর স্বাধীনতাতে বিশ্বাসী, সে নিজের স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চায় না। অগত্যা সুমি নিজের মা-বাবাকে কথাটা জানায়। তারাও বলে স্বামী আর তার পরিবার না চাইলে চাকরি করার দরকার নাই। মন দিয়ে সংসার করাতেই শান্তি। উপায়হীন হয়ে সুমি নিজের ক্যারিয়ারকে বির্সজন দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়।

সুমির মতো সমাজের অনেক মেয়েই বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। যেখানে মেয়েদের স্বামীর পরিবার ও নিজের মা বাবার দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকে। তবে উভয়ে মনে করে সংসারের শান্তিতে চাকরি বাধা সৃষ্টি করতে পারে। প্রত্যেক মা-বাবা চায় তার মেয়ে যেন ভালো থাকে। আর সংসারে মেয়েদেরকেই ত্যাগ করতে হয়। সুতরাং স্বামীর বাড়ি না চাইলে চাকরি করার দরকার নাই। আবার স্বামী ও তার পরিবার মনে করে চাকরি করলে মেয়েরা সংসার, সন্তান সব এক সাথে সামলাতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর চাকরি করাটাকে ভালো চোখে দেখে না। আত্মসম্মানে বাঁধে।

 

তবে পুরুষত্বের অহমিকা বা পরিবারের দাম্ভিকতাতে  একটি মেয়ে মানসিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত; তা তারা ভাবে না। সুশিক্ষিত একটি মেয়ে  শুধু নিজের আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে চাকরি করে তা কিন্তু নয়। সে নিজেকে এগিয়ে নিতে চায়।

 

কিন্তু  এ সমাজে মেয়েদেরকে এখনো পরনির্ভরশীল করে রাখার চিন্তা করে। যার  প্রতিফলন হলো বিয়ের পর চাকরি করতে না দেয়া। স্বভাবজাতভাবেই বলা হয়, মেয়েরা বাবা, স্বামী আর ছেলের উপর নির্ভরশীল। ঘর সংসারকে সুন্দর করে সাজাতে, সন্তানকে মানুষ করতে   তাদের শিক্ষার প্রয়োজন। স্বামীর ঘরে গিয়ে চাকরি কেন করবে। ফলশ্রুতিতে অগ্রসরমান নারীদের ঘরের বাইরে আসতে হয় অনেক ত্যাগ আর সংগ্রাম করে। আধুনিককালেও সব পরিবার চায় না নারীরা চাকরি করুক, আত্মনির্ভরশীল হয়ে সম্মানের সাথে বাঁচুক।

 

কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ এখনকার নারীরা সংসার সামলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৈরি করতে থাকে শিক্ষাজীবন থাকে। চাকরি শুধু নারী নয়, যে কোনো মানুষের আত্মপরিচয়ের বাহক। যার মাধ্যমে সে নিজের অবস্থান তৈরি করে পরিবারে, সমাজে।

নারীর স্বাধীনতার কথা বলে তার পায়ে পরিবারের রীতিনীতির শিকল পরিয়ে দিলে সত্যিকারের নারী মুক্তি আসবে না। একজন স্বামীকে প্রথমে বুঝতে হবে তার স্ত্রীর অধিকার আছে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার। নারী শুধু কন্যা-জায়া-জননী নয়। সে একজন মানুষ। তার নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পেশাগত জীবনকে সংসারে নামে রুদ্ধ করে দেয়া অন্যায়।

 

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারী তার ব্যক্তি জীবনে যতটা নিরাপত্তাবোধ করে তা একজন গৃহিণীর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে জীবনের চলার পথে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক বিধায় পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা থাকা উচিত। ভালোবাসা, সম্মানও শ্রদ্ধার সাথে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। স্বামীর ইচ্ছাতে নিজেকে অবদমিত করে রাখাটা সুখকর নয় সংসার জীবনে।

 

সুতরাং যে মেয়েটি কাজ করে নিজের পরিচয় তৈরি করেছে, সে  মেয়েটিকে বিয়ের পর চাকরি করতে না দেয়াটার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে সুমির মতো ভালোবাসার মানুষটিকে ঘিরে প্রশ্ন জাগবে মনে।

লেখক: কলাম লেখক। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com