ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় কারাবন্দি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক মোতাহারাত আখতার ভূইয়া তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গ্রেফতারের পর তৃতীয় দফা জামিন শুনানিতে বিজ্ঞানের এই শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর করল আদালত। এর আগে গত ২৩ ও ২৮ এপ্রিল দুই দফায় জামিন আবেদন করা হলেও বিচারক আবেদন নাকচ করে দেন।
হৃদয় মন্ডলের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। সরকারপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী পল্টু। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
২২ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন হৃদয় মণ্ডল।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের আলাদা হওয়ার কথা বলেন তিনি। কয়েকজন শিক্ষার্থী তার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ালে আলোচনা শুরু হয়। দুই দিন পর বিদ্যালয়টির কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভও করেন। পরে পুলিশ গিয়ে হৃদয় মণ্ডলকে আটক করে নিয়ে যায়। তাকে চাকরি থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওই রাতেই বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই মামলায় গ্রেফতার করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞানের ওই শিক্ষককে গ্রেফতারের পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও। সংগঠনটির ৭২ শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতিতে হৃদয় চন্দ্রের মুক্তির দাবি জানান।
এছাড়া তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন। তারা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। অবশেষে গ্রেফতারের ১৯ দিনের মাথায় হৃদয় মন্ডলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।