প্লট, বাড়ি-গাড়ি ও ঘের— কী নেই এসপি জসীমের!

ছবি সংগৃহীত

 

ঢাকার মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় অবস্থিত ২৯৯/৯ নম্বর বাড়িটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সদ্য সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লার। ছয়তলা এই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা দিয়ে তৈরি ডুপ্লেক্সে পরিবারসহ বসবাস করছেন তিনি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় দুটি ইউনিট রয়েছে, যেখানে ভাড়াটিয়া বসবাস করেন।

 

মিরপুরের এই বাড়ি ছাড়াও ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে আরও বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে তার। মিরপুর ডিসি থাকাকালে তার আওতাধীন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, “তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝতেন না”। তারা জানান, জসীম মাসিকভাবে থানার ওসিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন এবং অনেক সময় আসামি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। মাদক কারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

জসীমকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মিরপুর থেকে ডিএমপি সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২১ আগস্ট তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হন তিনি।

 

জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া মৌজায় ২৫ কাঠার একটি জমি রয়েছে, যার দাম অন্তত ৫০ লাখ টাকা। একই এলাকায় আরও ১৮ কাঠা ও সাত কাঠার দুটি জমি রয়েছে, যার মূল্য ৫০ লাখের বেশি। এছাড়া, কোটালীপাড়ার কান্দিলাল শাপলার বিলে ১২ বিঘা জমিতে একটি মাছের ঘের রয়েছে, যা দেড় কোটি টাকারও বেশি দামে বিক্রি হতে পারে। ঢাকার মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীর ৩ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার একটি প্লটও রয়েছে তার।

জসীম মাসিকভাবে থানার ওসিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন এবং অনেক সময় আসামি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। মাদক কারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, মিরপুরের মালঞ্চ ভবনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেটি তিনি দুই বছর আগে নতুন ভবন নির্মাণের পর ভাড়া দিয়েছেন। তার পরিবারের জন্য একটি প্রাইভেট কার রয়েছে, এবং তার আরও সম্পত্তি থাকারও গুঞ্জন রয়েছে, যা টুঙ্গিপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন।

জসীমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবা, লাল মিয়া, পদ্মা নদী থেকে বালু তুলতেন এবং বিক্রি করতেন। তিনি টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাল মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে সনদ নিয়ে চাকরি পান, যার ফলে তার ছেলে জসীমও সেই সনদে চাকরিতে যোগ দেন।

 

জানা গেছে, জসীম উদ্দীন ২৪তম বিসিএসে ২০০৫ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং বেশিরভাগ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কাজ করেছেন। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মিরপুর, লালবাগ, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন বিভাগে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিরপুরে চাকরি করার সময় তার বিরুদ্ধে ‘দলকানা’ এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে।

 

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জড়িত থাকার কারণে গত ৩০ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরে যাবো : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দেশে বিরাজনীতিকরণের প্রয়াস চলছে: রিজভী

» দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের শেষ রক্ষা হলো না

» পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৯

» শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের ক্ষণজন্মা শ্রেষ্ঠ সন্তান: তারেক রহমান

» আ. লীগ ৭১-এর ইতিহাস পকেটেস্থ করতে চেয়েছে : সামান্তা শারমিন

» খুব দ্রুত জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন হবে : মির্জা ফখরুল

» ভিটামিন ডি কেন জরুরি?

» ‘শিল্পাচার্য: মাস্টার অফ দ্য আর্টস- জয়নুল আবেদিন’ শীর্ষক পুস্তিকার স্প্যানিশ সংস্করণ উন্মোচন

» যে ১৫ সিনেমা হলে দেখা যাচ্ছে ফারুকীর ‘৮৪০’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্লট, বাড়ি-গাড়ি ও ঘের— কী নেই এসপি জসীমের!

ছবি সংগৃহীত

 

ঢাকার মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় অবস্থিত ২৯৯/৯ নম্বর বাড়িটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সদ্য সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লার। ছয়তলা এই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা দিয়ে তৈরি ডুপ্লেক্সে পরিবারসহ বসবাস করছেন তিনি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় দুটি ইউনিট রয়েছে, যেখানে ভাড়াটিয়া বসবাস করেন।

 

মিরপুরের এই বাড়ি ছাড়াও ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে আরও বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে তার। মিরপুর ডিসি থাকাকালে তার আওতাধীন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, “তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝতেন না”। তারা জানান, জসীম মাসিকভাবে থানার ওসিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন এবং অনেক সময় আসামি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। মাদক কারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

জসীমকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মিরপুর থেকে ডিএমপি সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২১ আগস্ট তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হন তিনি।

 

জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া মৌজায় ২৫ কাঠার একটি জমি রয়েছে, যার দাম অন্তত ৫০ লাখ টাকা। একই এলাকায় আরও ১৮ কাঠা ও সাত কাঠার দুটি জমি রয়েছে, যার মূল্য ৫০ লাখের বেশি। এছাড়া, কোটালীপাড়ার কান্দিলাল শাপলার বিলে ১২ বিঘা জমিতে একটি মাছের ঘের রয়েছে, যা দেড় কোটি টাকারও বেশি দামে বিক্রি হতে পারে। ঢাকার মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীর ৩ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার একটি প্লটও রয়েছে তার।

জসীম মাসিকভাবে থানার ওসিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন এবং অনেক সময় আসামি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। মাদক কারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, মিরপুরের মালঞ্চ ভবনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেটি তিনি দুই বছর আগে নতুন ভবন নির্মাণের পর ভাড়া দিয়েছেন। তার পরিবারের জন্য একটি প্রাইভেট কার রয়েছে, এবং তার আরও সম্পত্তি থাকারও গুঞ্জন রয়েছে, যা টুঙ্গিপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন।

জসীমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবা, লাল মিয়া, পদ্মা নদী থেকে বালু তুলতেন এবং বিক্রি করতেন। তিনি টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাল মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে সনদ নিয়ে চাকরি পান, যার ফলে তার ছেলে জসীমও সেই সনদে চাকরিতে যোগ দেন।

 

জানা গেছে, জসীম উদ্দীন ২৪তম বিসিএসে ২০০৫ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং বেশিরভাগ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কাজ করেছেন। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মিরপুর, লালবাগ, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন বিভাগে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিরপুরে চাকরি করার সময় তার বিরুদ্ধে ‘দলকানা’ এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে।

 

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জড়িত থাকার কারণে গত ৩০ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com