নানা অপকৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
ডিবি পুলিশ বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিরা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘটনায় জড়িত।
সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তরের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সোমবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে চালক মো. হিরু মোল্লা, দিনমজুর নিজাম উদ্দিন, চালক মো. জাকির হোসেন ও দোকানদার নজরুল ইসলাম এবং নরসিংদীর শিবপুর থেকে চক্রের মূল অভিযুক্ত আব্দুল বারেককে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবারের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি ছুরি, একটি চাপাতি, একটি লোহার পাইপ, একটি প্লাস ও ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা ঢাকার জনসমাগম স্থান বা আশপাশ এলাকায় প্রাইভেটকারে দু-একটি সিট খালি রেখে অবস্থান নিতো। তাদের টার্গেট থাকতো অফিসগামী যাত্রীদের ওপর। গণপরিবহনে উঠতে ব্যর্থ যাত্রীদের ডেকে গন্তব্যস্থলের দিকে যাবে বলে গাড়িতে ওঠাতো। ফাঁদে পড়ে সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠা যাত্রীদের সুবিধাজনক নির্জন স্থানে নিয়ে খুন-জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতো আসামিরা।
এছাড়াও তারা নগদ টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিতো বলে জানান তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতাররা এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক অপহরণের ঘটনায় জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গ্রেফতারদের মধ্যে আব্দুল বারেকের নামে ছয়টি ও অন্যদের নামে পৃথক দুটি করে মামলা রয়েছে।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে যাত্রাবাড়ীর বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক ব্যক্তি অপহৃত হন। পরবর্তী সময়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য বাসায় ফোন করতে বলে। এ অবস্থায় তার স্ত্রী প্রথমে বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তী সময়ে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠায়।
তিনি জানান, অপহরণকারীরা ভিকটিমের কাছ থেকে মোট এক লাখ টাকাসহ ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন এবং পকেটে থাকা ১৫শ টাকা নিয়ে নেয়। ওইদিন বিকেল চারটার দিকে তাকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার বাউশিয়া নামক একটি নির্জন স্থানে ফেলে যায়।
তিনি আরও জানান, ভিকটিম অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তী সময়ে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়। থানা পুলিশের তদন্তের পর তদন্তভার পায় ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় চক্রটিকে শনাক্ত করে সোমবার (১৮ এপ্রিল) পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে ভ্রমণের আগে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নোট রাখতে হবে। যেসব গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট নেই সেসব গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যাপসভিত্তিক স্বনামধন্য কোম্পানির সেবা গ্রহণ করতে হবে বা হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব ব্যবহার করতে হবে। যেসব স্থানে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা নেই সেসব স্থানে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, লেগুনা ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা।