নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে থাকা খাবার পেটে গেলে নামাজ হবে?

নামাজের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত ফজিলত ও পরকালীন পুরস্কার পেতে নামাজে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। অমনোযোগী ব্যক্তিকে নামাজ নিজেই তিরস্কার করে। নামাজে মনোযোগহীনতার রোগটি নিন্দনীয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) এটিকে ‘শয়তানের ছিনতাই’ বলেছেন।

 

মনোযোগ ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সঙ্গে) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যেই নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ -(নাসায়ি, হাদিস : ১৫১; বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)

 

নামাজে অনেক সময় অবচেতন মনে অনাকাঙ্খিত কিছু বিষয় ঘটে যায়। যেমন, হঠাৎ করে কখনও কখনও দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার পেটের ভেতরে চলে যায়। ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, নামাজে পানাহার করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। -(ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৩০ পৃ:)

অতএব,নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার পেটে চলে গেলে নামাজ আদায় সহি হবে নাকি নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে- এনিয়ে মনে সন্দেহ জাগে।

এ বিষয়ের সমাধান দিতে গিয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, নামাজের সময় মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরিমাণ যদি বুট (ছোলা) সমপরিমাণ হয়,তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এমন হলে এই নামাজ আবার আদায় করতে হবে।

আর যদি দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরিমাণ একটি বুট (ছোলা) সমপরিমাণ না হয়, বরং একেবারেই সামান্য হয়, তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না।

 

ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, শরীয়তের বিধান হলো, নামাজি ব্যক্তি যদি নামজের মধ্যে সামান্য ও একেবারে ছোট বস্তুও বাহির থেকে মুখে নিয়ে  গিলে ফেলে, তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

 

আলেমরা বলেন, নামাজের ভেতর যদি কেউ আকাশের দিয়ে চেহারা ফেরায় এবং এ সময় বৃষ্টি বা অন্য কোনো পানি তার মুখের ভিতর চলে যায় এবং সে তা গিলে ফেলে তাহলে তা এক ফোটা পরিমাণ হলেও নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

 

তবে নামাজ শুরুর আগে থেকে মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার যদি একটি বুট (ছোলা) পরিমাণ হয় এবং তা গিলে ফেলে তাহলে এর কারণে নামাজ নষ্ট হবে।

 

আর যদি মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বুটের থেকে পরিমাণে ছোট হয় এবং তা চিবানো ছাড়াই এমনিতেই গলার ভিতর চলে যায়, তাহলে এভাবে গিলে ফেলার কারণে নামাজ নষ্ট হবে না।-(কিতাবুন নাওয়াজেল ৪/১০০, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আ.লীগের ব্যবসাগুলো কারা চালায় আমরা জানি: হাসনাত আবদুল্লাহ

» এনসিপি ১০ জনের একটা দল, সেখানেও যৌন হয়রানি: রুমিন ফারহানা

» ‘দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন’: গয়েশ্বর

» ভারতের মোদিকে কসাই আখ্যা দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

» রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ

» সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতায় থাকতে চাওয়া হবে দুঃস্বপ্ন

» আওয়ামী লীগ সারাদেশকেই কারবালার প্রান্তরে পরিণত করেছিল : মির্জা ফখরুল

» পবিত্র আশুরা শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন: তারেক রহমান

» পবিত্র আশুরা অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠায় সাহস জোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

» করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে থাকা খাবার পেটে গেলে নামাজ হবে?

নামাজের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত ফজিলত ও পরকালীন পুরস্কার পেতে নামাজে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। অমনোযোগী ব্যক্তিকে নামাজ নিজেই তিরস্কার করে। নামাজে মনোযোগহীনতার রোগটি নিন্দনীয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) এটিকে ‘শয়তানের ছিনতাই’ বলেছেন।

 

মনোযোগ ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সঙ্গে) দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যেই নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ -(নাসায়ি, হাদিস : ১৫১; বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)

 

নামাজে অনেক সময় অবচেতন মনে অনাকাঙ্খিত কিছু বিষয় ঘটে যায়। যেমন, হঠাৎ করে কখনও কখনও দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার পেটের ভেতরে চলে যায়। ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, নামাজে পানাহার করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। -(ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৩০ পৃ:)

অতএব,নামাজের সময় দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার পেটে চলে গেলে নামাজ আদায় সহি হবে নাকি নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে- এনিয়ে মনে সন্দেহ জাগে।

এ বিষয়ের সমাধান দিতে গিয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, নামাজের সময় মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরিমাণ যদি বুট (ছোলা) সমপরিমাণ হয়,তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এমন হলে এই নামাজ আবার আদায় করতে হবে।

আর যদি দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরিমাণ একটি বুট (ছোলা) সমপরিমাণ না হয়, বরং একেবারেই সামান্য হয়, তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না।

 

ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, শরীয়তের বিধান হলো, নামাজি ব্যক্তি যদি নামজের মধ্যে সামান্য ও একেবারে ছোট বস্তুও বাহির থেকে মুখে নিয়ে  গিলে ফেলে, তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

 

আলেমরা বলেন, নামাজের ভেতর যদি কেউ আকাশের দিয়ে চেহারা ফেরায় এবং এ সময় বৃষ্টি বা অন্য কোনো পানি তার মুখের ভিতর চলে যায় এবং সে তা গিলে ফেলে তাহলে তা এক ফোটা পরিমাণ হলেও নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

 

তবে নামাজ শুরুর আগে থেকে মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার যদি একটি বুট (ছোলা) পরিমাণ হয় এবং তা গিলে ফেলে তাহলে এর কারণে নামাজ নষ্ট হবে।

 

আর যদি মুখে বা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বুটের থেকে পরিমাণে ছোট হয় এবং তা চিবানো ছাড়াই এমনিতেই গলার ভিতর চলে যায়, তাহলে এভাবে গিলে ফেলার কারণে নামাজ নষ্ট হবে না।-(কিতাবুন নাওয়াজেল ৪/১০০, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com