‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (পর্যায় ২)’ প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি আয়োজন করা হয় প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (পিআইসি) সভা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় বলা হয়, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। অথচ, অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক।
প্রকল্পের হতাশাজনক অবস্থার কারণ জানতে প্রতিবেদক ফোন করেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোরশীদুল হাসানকে। ‘প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়া গত ছয় বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি কী’ এমন প্রশ্নের পর মোবাইলের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। এরপর দফায় দফায় কল করে এবং মোবাইলে মেসেজ পাঠালেও আর ফোন রিসিভ করেননি মোরশীদুল হাসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কোনো প্রকল্পে পরিচালকের কর্মসূচি বাস্তবায়নে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না। ফলে যারা তুলনামূলক দক্ষ ও বিচক্ষণ তারা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেন। কিন্তু অন্যরা পিছিয়ে যান। এ ছাড়া যোগ্য স্থানে যোগ্য ব্যক্তিরা আসীন না হওয়ায় প্রকল্প থেকে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। এ শিক্ষাবিদ বলেন, প্রকল্পে অদক্ষ, অযোগ্যরা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেলে জাতি এর সুফল পায় না, কিন্তু ঋণের বোঝা ঠিকই বাড়ে।
প্রকল্পের হতাশাজনক অগ্রগতিতে ক্ষুব্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, প্রকল্পের নির্ধারিত চার বছরের মেয়াদ শেষে আরও দুই দফায় মেয়াদ বেড়েছে। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি একেবারে হতাশাজনক। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি সমাপ্ত করে নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পক্ষে মত দেন তিনি।
দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকলেও প্রকল্পের শেষ দিকে এসেও গাড়ির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। পঞ্চম প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় একটি মাইক্রোবাস কেনার ব্যাপারে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। কিন্তু প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে দুটি গাড়ির প্রয়োজন বলে মন্তব্য দিয়েছেন মো. মোরশীদুল হাসান।
মাউশি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করা হয়নি। তৈরি করা হয়নি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ, মাল্টিমিডিয়া ট্রেনিংরুম বা সফটওয়্যারও। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের কাছে এ প্রকল্প সম্পর্কে জানতে তার মোবাইলে দফায় দফায় কল ও মেসেজ দিলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এ প্রকল্প সম্পর্কে প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের একটি নির্ধারিত সময় ও উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে উদ্দেশ্য অর্জন হয় না। এ প্রকল্প কেন সফল হচ্ছে না সেটি সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন’।
মাউশি অধিদফতরের আরেক পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, ‘এই প্রকল্প নিয়ে মাউশিতে রিভিউ হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও রিভিউ হয়েছে। অনেক আলোচনা হয়েছে। রিভিউ রিপোর্টগুলো পেলে বলা যাবে কেন প্রকল্পে অগ্রগতি কম। আর কেন প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি তা প্রকল্প পরিচালকই বলতে পারবেন’।
প্রকল্পের পিআইসি সভা সূত্র জানায়, ডিপিপিতে ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ সৃজনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। মাল্টিমিডিয়া ট্রেনিংরুম সৃজন করার কথা ছিল ১০৫টি। মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্স রুম সৃজন করার কথা ৫৬৩টি। কিন্তু এসবের ভৌত অবকাঠামোতে কোনো অগ্রগতি নেই। একইভাবে ডিপিপিতে এ প্রকল্পের আওতায় তিনটি সফটওয়্যার তৈরি, চারটি শিক্ষামেলা আয়োজন ও একটি টেলিভিশন প্রচারণার কথা বলা হয়েছিল। এসবেরও অগ্রগতি শূন্য।